বিজ্ঞাপন

এসএমইদের বাঁচাতে অন্য পথ বের করতে হবে

November 4, 2020 | 10:03 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: করোনার কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। করোনার কারণে তারা ঠিকমতো ঋণ-সুবিধাও পাননি। সে জন্য অনেক এসএমই প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই তাদেরকে বাঁচাতে বীমা পদ্ধতি বা অন্য কোনো পথ বের করতে হবে। নয়তো বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কেননা ছোট প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হলে বড় প্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৪ নভেম্বর) সারাবাংলা ফোকাস ব্যবসা বাণিজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এ সব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ, এফবিসিসিআই এর সহ-সভাপতি হাসিনা নেওয়াজ, এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ড. মো. মাসুদুর রহমান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সারাবাংলা ডটনেটের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট এমএকে জিলানী।

অনুষ্ঠানে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, ‘মার্চে করোনা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকার দ্রুততার সঙ্গে প্রণোদনা ঘোষণা করে। মনে করা হয়েছিল করোনা হয়ত ৩-৪ মাস থাকবে। পরে চলে যাবে। ফলে যারা ঋণ নিয়েছেন সেটি পরিশোধের কিন্তু সময় পার হয়ে যাচ্ছে। করোনার দীর্ঘসূত্রিকার কারণে যে প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিলো সেটি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক কাকে টাকা দেবে সেটা তো দেখে-শুনে দিতে হবে। কেননা এটি তার বিনিয়োগ এবং ফেরত পাওয়ার বিষয় আছে। তাই এসএমই’দের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আলাদা একটা বীমা বা পথ বের করতে হবে। কারণ তাদেরকেই সত্যি প্রণোদনা দিতে হবে। এরা যদি মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্তে নেমে যায়। এরা যদি অচল হয়ে যায়। তাহলে বড়রাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রণোদনার সুফল আমরা পাবো যদি এসএমই’দের নিয়ম নীতির মধ্যে এনে সহযোগিতা করা যায়।’

এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ড মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘করোনার কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেন। তবে ২০ শতাংশ এসএমই এর ব্যাংকিং চ্যানেলে আর্থিক লেনদেন হয়। বাকি ৮০ শতাংশ ব্যাংকিং চ্যানেলে নেই। তাই সরকারের ইচ্ছা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন থাকা সত্ত্বেও ঋণ দেওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া আমাদের কর্মাশিয়াল ব্যাংকগুলোর যে ব্যবসায়িক কাঠামো আছে সেখানে তারা বড়বড় শিল্প উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কাজ করে অভ্যস্ত। ক্ষুদ্র বা মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ব্যাংকগুলোর কাজ করার অভিজ্ঞতা নেই।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক করোনার আগেই ব্যাংকগুলোকে বলেছে মোট ঋণের ২৫ শতাংশ এসএমই খাতে দিতে হবে। তাই কমা‍র্শিয়াল ব্যাংকগুলো স্বপ্রণোদিত হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে গাইড লাইন আছে অর্থাৎ সামাজিক জামানতে রূপান্তরিত করে ঋণ দেওয়ার যে প্রক্রিয়া আছে সেই নির্দেশনা যদি ব্যাংকগুলো অনুসরণ করে তাহলে সমস্যা সমাধান হবে। এ ছাড়া আমরা বাজারে যদি টাকা সরবরাহ বাড়াতে না পারি। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে যদি অর্থায়ন করতে না পারি তাহলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা তৈরি হবে না। আর সেটি না হলে প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকতে পারবে না। আর এই প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকতে না পারলে বড়বড় প্রতিষ্ঠানগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

এফবিসিসিআই এর সহ-সভাপতি হাসিনা নেওয়াজ বলেন, ‘সরকার করোনাকালীন যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে সেটি আমাদের কাজে দিয়েছে। করোনার শুরু হওয়ার সময় দেশে ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি সকল প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবকিছু মিলে অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছিলো। ব্যবসা-বাণিজ্য যখন শুরু হয় তখন এই প্রণোদনা আমাদের কাজে লেগেছে। তবে এসএমই যেসব প্রতিষ্ঠান আছে তাদের প্রণোদনা পেতে সমস্যা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা যতোটুকু পেরেছি তাদের সহযোগিতা করেছি।’

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, ‘করোনা শুরু হলে আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পের প্রায় সোয়া ৩ বিলিয়নের অর্ডার বাতিল হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য প্রাথমিকভাবে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেন। সেটা দিয়ে আমরা শ্রমিকদের ৩ মাসের বেতন ভাতা পরিশোধ করি। এরপর আরও ২ হাজার কোটি টাকার ঋণ দেন। প্রথমটার সুদের হার ২ শতাংশ এরপর ছিলো ৪ শতাংশ। এপর বৃহৎ শিল্পের জন্য প্রধানমন্ত্রী আরও ৩০ হাজার কোটি টাকার ঋণ ঘোষণা করেন। সুদের হার ছিলো সাড়ে ৪ শতাংশ। আর এসএমই দের জন্য প্রধানমন্ত্রী ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেন। তৈরি পোশাক শিল্পে অক্টোবর পর্যন্ত যে হিসাব করা হয়েছে তাতে গত বছরের চেয়ে প্রবৃদ্ধি ১.২৫ শতাংশ কম হয়েছে। এই ক্ষতি আরও বড় হতে পারতো। তবে আমরা যা ধারণা করেছিলাম সেটা হয়নি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘বৃহৎ শিল্পে প্রণোদনা কাজে লেগেছে। মূল সমস্যা হলো এসএমই’দের নিয়ে। যে ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করা হয় সেখানে এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলো যে ব্যাংকের কাছে টাকা চাইবে সেটা তাদের ব্যাংকে যাতায়াত ছিল না। কী কী ধরনের পেপার দিতে হবে সেটা সম্পর্কে তাদের ধারণা ছিলো না। এদিকে করোনার দ্বিতীয় ধাপ আবার শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিনে কিছু অর্ডার বাতিল হয়েছে। এই সমস্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটা বলা যাচ্ছে না। আর এবার যে ক্ষতি হবে সেটা এসএমই’দের কাটিয়ে ওঠা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হবে।’

সারাবাংলা/এসজে/একে

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন