বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে সবজির বাজারে আগুন, ৫০ টাকার নিচে মিলছে না কিছুই

November 6, 2020 | 10:17 am

রমেন দাশ গুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের কাঁচাবাজারে সবজির চড়া দাম গত কয়েক বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজিই মিলছে না। কোনো কোনো সবজির দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ২০০ টাকায়। এমনকি মিষ্টিকুমড়োর দামও কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা।

বিজ্ঞাপন

ক্রেতারা বলছেন, গত একদশকে অন্তত সবজির এমন চড়া দাম তারা দেখেননি। দফায় দফায় কাঁচাবাজারে অভিযান চালিয়েও প্রশাসন সবজির বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। উত্তরাঞ্চলে বন্যায় ক্ষেতে সবজি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সরবরাহ সংকটকে অজুহাত হিসেবে সামনে আনছেন বিক্রেতারা।

বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) ও শুক্রবার (৬ নভেম্বর) সকালে নগরীর কাজীর দেউড়ি, বকশিরহাট, হেমসেন লেইন কাঁচাবাজার ঘুরে এবং ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের কাছে সবজির দাম যাচাই করা হয়। প্রতিটি বাজারেই দেখা গেছে, বিক্রেতাদের সবজির চড়া দাম হাঁকানোর বিপরীতে মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত, গরীব ক্রেতাদের অসহায়ত্বের চিত্র। প্রায় প্রতিটি সবজির দাম গত এক সপ্তাহে অন্তত ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ার তথ্য দিয়েছেন খোদ বিক্রেতারাই।

বকশিরহাট কাঁচাবাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। কাজীর দেউড়ি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। বাজারভেদে পটল প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। গত সপ্তাহেও পটলের দাম অন্তত ২০ টাকা কম ছিল। একইভাবে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বরবটি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঢেঁড়স, শসা, বেগুনের দাম অন্তত ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৬০ টাকায়। ৩০ টাকার মিষ্টিকুমড়ো এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়ে হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা।

বিজ্ঞাপন

তিত করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঝিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে টমেটোর দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা। বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১২০ টাকায়। শীতের সবজি বাঁধাকপি কেজি ৬০ টাকা, ফুলকপি আকার ও মানভেদে ১০০ থেকে ১২০ টাকা, শিম ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গাজরের দাম প্রতিকেজি ৮০ টাকা। কাঁচামরিচের দাম সাম্প্রতিক সময়ের রেকর্ড ভেঙে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়।

বকশিরহাট বাজারে নিয়মিত যাওয়া নগরীর হাজারী লেইনের বাসিন্দা আশীষ মহাজন সারাবাংলাকে বলেন, ‘শীতের সবজি আসতে শুরু করেছে। প্রতিবছর শীতের শুরুতে সবজির দাম কমে। এবার হয়েছে উল্টো। মাসখানেক আগেও যে সবজি ২০-২৫ টাকায় কিনেছি, সেটার দাম এখন তিন গুণ-চার গুণ। আমরা সাধারণ চাকরিজীবী। আমাদের আয় নির্দিষ্ট। বেতনের টাকায় আমাদের জন্য মাস পার করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

হেমসেন লেন কাঁচাবাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা আব্দুল হালিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আড়তে সবজি নেই। যেকোনো ধরনের সবজির মজুত নেই। আমরা যারা খুচরা ব্যবসা করি, প্রতিদিন ভোরে আড়তে গিয়ে আগের মতো পণ্য কিনতে পারছি না। আমার লাগবে তিন মণ আলু, পাচ্ছি ৩০ কেজি। এজন্যই দামটা বাড়ছে। যদি আড়ত থেকে চাহিদামতো সবজি বাজারে আসে, দাম এমনিতেই কমে যাবে।’

বকশিরহাট বাজারের খুচরা বিক্রেতা আলী হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভ্যানগাড়িতে চার মণ মাল (পণ্য) আনলে যে ভাড়া, ২০ কেজি আনলেও একই ভাড়া। আড়ত থেকে চাহিদামতো মাল পাচ্ছি না। কিন্তু ভাড়া একই গুণতে হচ্ছে। এই টাকা তো মাল বিক্রি করেই আমাদের তুলতে হচ্ছে।’

সবজির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রেয়াজউদ্দিন বাজার আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক শিবলী বলেন, ‘বন্যার কারণে উত্তরবঙ্গে ফসলের ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেখানকার চাষিরা সবজি তুলতে পারেননি। আমরা চাহিদামতো সবজি পাচ্ছি না। এজন্য দাম বেড়েছে। তবে শহরের তুলনায় গ্রামে দাম কম আছে।’

এদিকে সবজির দামের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে গত কয়েকদিন ধরে নগরীর বিভিন্ন বাজারে জেলা প্রশাসন  ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর অভিযান চালিয়েছে। বাড়তি দাম নেওয়া, ওজনের কারচুপিসহ বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কয়েকটি দোকানকে জরিমানাও করা হয়েছে। কিন্তু সবজির দাম স্থিতিশীল করতে পারেনি প্রশাসন।

বিজ্ঞাপন

কাঁচাবাজারে অভিযান পরিচালনাকারী চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক বলেন, ‘সবজির বাজার ইচ্ছে করেই অস্থিতিশীল করা হচ্ছে। প্রথমত হচ্ছে বিক্রেতাদের কাছে কোনো মূল্যতালিকা নেই। অনেক বিক্রেতার কাছে আড়ত থেকে কেনার রশিদও নেই। একেক দোকানে একেক রকম দাম নিচ্ছে। আমরা এটাকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি। আমরা নিয়মিত মনিটরিং করব।’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘অধিকাংশ বিক্রেতা মূল্যতালিকা প্রদর্শন করছেন না। যারা করছেন, তারা তালিকায় দাম লিখেছে একভাবে, কিন্তু সবজি বিক্রি করছে বাড়তি দামে। পাইকারি ও খুচরা— উভয় ক্ষেত্রেই এটা হচ্ছে। আমরা বারবার সতর্ক করেছি। জরিমানাও করা হয়েছে। এবার আমরা আরও কঠোর হব।’

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন