বিজ্ঞাপন

আশা করি জাতীয় দলে সুযোগ আসবে: ইরফান শুক্কুর

November 6, 2020 | 3:11 pm

রাহাতুল ইসলাম রাফি, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট

বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে প্রতিভাবান মনে হলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেকে মেলে ধরতে পারছিলেন না। তার সঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে খেলা সৌম্য সরকার, লিটন দাসরা জাতীয় দলে থিতু হলেও ইরফান শুক্কুর ছিলেন আলোচনার বাইরে। চট্টগ্রামের এই ক্রিকেটার নতুন করে নজরে আসেন ২০১৯ সালের বিপিএলে দারুণ কয়েকটা ইনিংস খেলে। সদ্য সমাপ্ত বিসিবি প্রেসিডেন্ট’স কাপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তুলে এই মুহূর্তে বেশ আলোচিত শুক্কুর। ২৭ বছর বয়সী ক্রিকেটারের আশা, জাতীয় দল থেকে অবশ্যই ডাক আসবে একদিন। সারাবাংলা ডটনেটের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে নতুন করে আলোচনায় উঠে আসার বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলেছেন শুক্কুর-

বিজ্ঞাপন

প্রশ্ন: করোনার ঘরবন্দি সময়টা কীভাবে কেটেছে?

ইরফান শুক্কুর: করোনার মধ্যে আমাদের অনুশীলন করার সুযোগ ছিলো না। প্রথম একমাস নিজেকে গুছিয়ে নিতে বেশ কষ্ট হয়েছে। করোনার সময়ে আমি মূলত জিম, ডায়েট নিয়ে কাজ করেছি। আমার বাসায় একপ্রকার ওয়ার্ক স্টেশন বানিয়ে ফেলেছিলাম। বোর্ডকে ধন্যবাদ জানাই, শেষ ৩ মাস তারা আমাদেরকে অনুশীলন করার সুযোগ দিয়েছে। উইকেটের সুবিধা দিয়েছে।

প্রশ্ন: ক্রিকেটের শুরুর গল্পটা যদি বলতেন-

বিজ্ঞাপন

ইরফান : ক্রিকেটে আমার শুরুটা হয়েছে নুরুল আবেদিন নোবেল স্যারের সঙ্গে। চট্টগ্রামের ইস্পাহানি ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে আমি ভর্তি হই ২০০৫-০৬ সালের দিকে। তবে পেশাদার ক্রিকেটার হওয়ার চিন্তাটা আমার এসেছে ২০০৮-০৯ সালের দিকে। ২০১০ সালে সৌম্য সরকারদের সঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৯ খেলি৷ এরপরে আসলে একটা সময় পর্যন্ত আউট অফ ট্র‍্যাকে চলে যাই। কিছু বিরতির পর নাফিস ভাইয়ের (নাফিস ইকবাল) সুবাধে ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে খেলার সুযোগ হয় আমার। এভাবেই এগিয়েছি। তবে ২০১৯ সালের বিপিএলকে আমি আমার ক্রিকেট লাইফের টার্নিং পয়েন্ট বলবো।

প্রশ্ন: তামিমের শৈশবের মাঠ চট্টগ্রামের আউটার স্টেডিয়াম। সাকিবের বিকেএসপি। শুক্কুরের ক্ষেত্রে কী বলা যায়?

ইরফান : তখন তো আউটার স্টেডিয়ামে খেলেছি, আর্মি স্টেডিয়ামেও খেলেছিলাম, সিজেকেএসপিতেও খেলেছি। তাদেরও ধন্যবাদ জানাবো।

বিজ্ঞাপন

প্রশ্ন: গলির ক্রিকেট বা এলাকার ক্রিকেটের স্মৃতি-

ইরফান: বাসার সামনে গলিতে তো খেলতামই। পাশাপাশি এলাকা থেকে একটু এগুলেই মাঠ ছিলো একটা। ওখানেও এলাকার ছোট-বড় ভাইদের নিয়ে খেলা হয়েছে অনেক।

প্রশ্ন: প্রেসিডেন্ট’স কাপে আপনার পারফরম্যান্স নজর কেড়েছে। করোনার সময়টাতে কীভাবে তৈরি হয়েছিলেন?

ইরফান : আগেই বলেছি আমি আমার ফিটনেস নিয়ে কাজ করেছি বেশি। পাশাপাশি নতুন নতুন কিছু শর্ট অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেছি। নিজের শক্তিশালী বিষয়গুলো আরও বেশি ঝালিয়ে নেওয়ার জন্যও কাজ করেছি।

বিজ্ঞাপন

প্রশ্ন: আপনাকে আগের চেয়ে বেশি পরিনত মনে হয় এখন। ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে কোন বিষয়টা নিয়ে কাজ করেছেন?

ইরফান : কোভিডের কারণে যে লকডাউন, তা আমার কাছে আশির্বাদ ছিলো। আগেই বলেছি, এই সময়টাতে আমি আমার ফিটনেস নিয়ে কাজ করেছি। পাশাপাশি যে বিষয়টি বলবো, এই সময়টাতে মানসিক শক্তি বাড়ানোর কাজ করেছি। সব মিলিয়ে প্রেসিডেন্স কাপে মাঠের লড়ায়ে এটা আমাকে সাহায্য করেছে। ব্যাটিংয়ে বলুন কিংবা মাঠের টেম্পারেচার বোঝা ক্ষেত্রে বলুন!

ব্যাটিং বা শট সিলেকশন—এসব নিয়ে শেষ দুই বছর ধরে কাজ করছি আমি। মানে ২০১৯ বিপিএলেরও আগ থেকে৷ এখানে একটা বিষয় বলতে চাই, লাস্ট যখন মোহামেডানের হয়ে লিস টেস্ট খেলি, লিটন দাশ ছিলেন আমার ওপেনিং পার্টনার। সে তখন আমাকে বলেছিলো, “আপনার শর্টে একটু মনোযোগ দেওয়ার দরকার আছে। যাতে স্ট্রাইক রেটটা বাড়ানো যায়।” এরপর থেকে মূলত আমি আমার শট নিয়ে কাজ শুরু করি বলা চলে।

প্রশ্ন: আপনার সঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলা সৌম্য সরকার, লিটন দাশরা অনেক বছর ধরেই জাতীয় দলে খেলেন। আফসোস হয় কিনা-

ইরফান : আমার বন্ধুরা যারা জাতীয় দলে খেলেছে, তাদের নিয়ে আমি খুব খুশি। আফসোসের কথা যদি বলতে হয়, তবে বলবো আসলে আমার মধ্যে জেদ কাজ করেছে বেশি। ফিটনেস-ব্যাটিং নিয়ে কাজ করে গেছি এবং যাচ্ছি। আশা ছাড়িনি কখনো। বিশ্বাস করি, খেলার সুযোগ আসবে ইন শা আল্লাহ।

প্রশ্ন: প্রেসিডেন্ট’স কাপে সফলতার কারণ-

ইরফান : আমি সাধারণত ওপেনিং করতাম। কিন্ত প্রেসিডেন্টস কাপে লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিং করাটা ছিলো আমার জন্য চ্যালেঞ্জের বিষয়। ওই সময় তো নিজের জন্য আলাদা করে চিন্তা করা যায় না। আমি ম্যাচ সিচুয়েশনের ডিমান্ড অনুযায়ী টিমের জন্য সর্বোচ্চ অবদান রাখার চেষ্টা করেছি। আমি বলবো না যে পুরোপুরি সফল হয়েছি। ফাইনালে যদি জিততে পারতাম তবে বিষয়টা আরও বেশ ভালো হতো।

প্রশ্ন: *আপনাকে নিয়ে বোর্ড, দর্শকরা ভাবছে এখন। আসন্ন টি-টোয়েন্টি কাপ নিয়ে পরিকল্পনা কী? বিশেষ করে আপনাকে যখন টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট বলা হয়-

ইরফান : মিডিয়া-দর্শক আমাকে নিয়ে কথা বলছে—বিষয়টা আমি উপভোগ করছি। অবশ্য এটা নিয়ে আমি আত্মতুষ্টিতে ভুগতে রাজি নই। আমি ধাপে ধাপে এগোতে চাই৷ আপনি যেটা বললেন, সামনের যে কর্পোরেট টি টুয়েন্টি লীগ। সেক্ষেত্রে আমি ম্যাচ বাই ম্যাচ চিন্তা করতে চাচ্ছি। সামনে দুই সপ্তাহের একটি ট্রেনিং আছে। এই টুর্নামেন্টে আমি চাইবো যেন আগের ফর্মটা অব্যাহত করতে পারি। আর নির্দিষ্টকরে গেমপ্ল্যান যদি বলেন, ওটা অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। মাঠের অবস্থা, ম্যাচে কোন টিম ব্যাটিং শুরু করছে এসব বিষয় আছে। তাই আমি ম্যাচ বাই ম্যাচ হিসেব করবো।

প্রশ্ন: বিভিন্ন পজিশনে ব্যাটিং করেছেন আপনি। আপনার পছন্দের পজিশন কোনটি?

ইরফান: প্রেসিডেন্টস কাপে আমি ৭ নম্বরে ব্যাটিং করেছি। বিষয়টা চ্যালেঞ্জিং, কিন্তু এটা আমাকে আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। আগে ওপেন করতাম, তাই এখন সাত নম্বরে খেলতে পারবো না, এটা ঠিক নয়। আর ন্যাশনাল টিমের কথা যা বললেন, এক্ষেত্রে বলবো যদি কখনো চান্স হয় তবে সব কিছুর উপর ভিত্তি করে নির্বাচকদের পরামর্শে দলের প্রয়োজনে যেখানে খেলতে হয় সেখানেই খেলবো।

প্রশ্ন: সুযোগ পেলে সাবেক কোন বোলারের বিপক্ষে খেলতে চাইবেন?

ইরফান: এককথায় বলবো মিচেল জনসন। ২০১৪-১৫ অ্যাশেজে যখন আমি তাঁর বোলিং দেখেছিলাম, সে খুব ভয়ানক ছিলো। অনেক বেশি স্পিডি ছিলো। আমি তাকেই খেলতে চাইবো।

প্রশ্ন; বিপিএলের মজার স্মৃতি-

ইরফান : মজার স্মৃতি তো অনেক আছে। তবে ২০১৬-১৭ সালে ঢাকা ডাইনামাইটসের হয়ে বিপিএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সেদিন রাতে সবাই মিলে অনেক মজা করেছিলাম। তখন (ডোয়াইন) ব্রাভো, (আন্দ্রে) রাসেল, (কুমার) সাঙ্গাকারাসহ সিনিয়র যেসব বিদেশী প্লেয়ার ছিলেন, তারা কখনো বুঝতে দেননি যে আমরা জুনিয়র প্লেয়ার।

ঢাকার হয়ে সাঙ্গাকারার সঙ্গে দুইবার ড্রেসিংরুম শেয়ার করার সুযোগ হয়েছে। একবার সুজন স্যারের ( খালেদ মাহমুদ সুজন) মাধ্যমে সাঙ্গাকারার সঙ্গে একটি সেশন করার সুযোগ হয়েছিল। তিনি অনেক টিপস দিয়েছিলেন। সেই আধাঘণ্টার সেশনটি আমার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিলো।

সারাবাংলা/আরআইআর/এসএইচএস

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন