বিজ্ঞাপন

বাসায় আগুনের উৎস নিয়ে ধোঁয়াশা, তদন্ত কমিটি

November 9, 2020 | 7:38 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে একইসঙ্গে নয়জন দগ্ধ হওয়া বাসাটিতে আগুনের উৎস নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস প্রাথমিকভাবে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত বললেও নানামুখী বক্তব্যে সেটি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৯ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করার ঘোষণা দেন। সন্ধ্যায় এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে।

কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (মেট্রো) বদিউল আলমকে। বাকি চার সদস্য হলেন- বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের খুলশী বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কেনোয়ার হোসাইন, নগর পুলিশের পাহাড়তলী জোনের সহকারী কমিশনার মো. আরিফ হোসেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথরাইজড অফিসার মো. ইলিয়াছ এবং ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রামের উপ-সহকারী পরিচালক আলী আকবর।

কমিটির প্রধান বদিউল আলম জানান, সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে কমিটিকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। কমিটিকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতিও নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৮ নভেম্বর) রাতে নগরীর আকবর শাহ থানার উত্তন কাট্টলী এলাকায় মুরাদ চৌধুরীর মালিকানাধীন ছয়তলা ভবনের তৃতীয় তলার একটি বাসায় আগুন লাগে। এতে নারী ও শিশুসহ নয়জন দগ্ধ হন, যাদের মধ্যে এক নারী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। ওই নারীর নাম পিয়ারা বেগম (৬৫)।

দগ্ধ বাকি আটজন হলেন- মিজানুর রহমান (৪২) ও তার ছোট ভাই সাইফুর রহমান (১৮), মিজানুরের স্ত্রী বিবি সুলতানা (৩৫) এবং দুই ছেলে মাহের (৮) ও মালহা (২), ছোট বোন সুমাইয়া (১৮) এবং তাদের বাসায় সাবলেট হিসেবে বসবাসকারী রিয়াদ (২২) ও তার স্ত্রী সালমা জাহান (২১)। এদের মধ্যে রিয়াদ ও সালমা ছাড়া বাকি সবাইকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মারা যাওয়া পিয়ারা বেগম মিজানুরের মা। রিয়াদ ও সালমার চারদিন বয়সী এক ছেলে আছে, তবে শিশুটি অক্ষত আছে।

চমেকের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে সুমাইয়ার ১৫ শতাংশ, রিয়াদের ১৮, সালমা জাহানের ১২, মিজানুরের ৪৮, সাইফুরের ২২, মাহেরের ৫ এবং বিবি সুলতানা ও মানহার ২০ শতাংশ করে পুড়ে গেছে। মাহের, মানহা ও সালমা ছাড়া সবার শ্বাসনালী পুড়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

আগুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া নগরীর আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার এনামুল হক সারাবাংলাকে জানিয়েছিলেন, ওই বাসায় ফ্যান-লাইটসহ সকল বৈদ্যুতিক পয়েন্ট ও তার পুড়ে গলে যাওয়া অবস্থায় তারা দেখেছেন। বাসায় কোনো গ্যাসের সিলিন্ডার ছিল না। সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। সঞ্চালন লাইন এবং রান্নার চুলা অক্ষত দেখেছেন তারা। এজন্য তাদের ধারণা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।

স্থানীয় আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহির হোসেনও জানিয়েছেন, তারা ওই বাসার প্রতিটি কক্ষে বৈদ্যুতিক তার গলে যাওয়া অবস্থায় দেখেছেন। সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করেছেন। ফায়ার সার্ভিসও পুলিশকে জানিয়েছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।

তবে অগ্নিদগ্ধদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার আলী জামান আল-সোলায়মান জানিয়েছেন, তাদের সন্দেহ গ্যাসের আগুনে তারা দগ্ধ হয়েছেন।

ঘটনাস্থলে যাওয়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিতরণ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী তৌফিকুল আলম বিদ্যুতের লাইনে কোনো সমস্যা দেখেননি বলে জানান। এছাড়া কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) একটি প্রতিনিধি দলও পরিদর্শন করে গ্যাসের সঞ্চালন লাইনে কোনো ত্রুটি নেই বলে জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

এ অবস্থায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করার ঘোষণা দেন।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন