বিজ্ঞাপন

রেজা কিবরিয়া অংশের সম্মেলন স্থগিত, একতাবদ্ধ গণফোরামের ঘোষণা কাল?

November 11, 2020 | 10:30 pm

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: প্রতিষ্ঠার ২৭ পর এসে ভাঙন ধরে ড. কামালের নেতৃত্বাধীন গণফোরামে। দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা মোহসীন মন্টুর নেতৃত্বে নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সম্মেলনের ঘোষণাও আসে। আরেক পক্ষ থেকে ড. রেজা কিবরিয়া জানান, ডিসেম্বরের সম্মেলন থেকেই আসবে গণফোরামের কমিটি। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে। তবে সেগুলো ফলপ্রসূ হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে দলটির একটি সূত্র জানিয়েছে, দুই পক্ষের মধ্যেকার বরফ অবশেষে গলতে যাচ্ছে। দলের দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করতে যাচ্ছেন দলের চেয়ারম্যান ড. কামাল। আর সে কারণেই ডিসেম্বরে দলের একটি অংশের কাউন্সিল আয়োজনও স্থগিত করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

গণফোরামের একাধিক সূত্র বলছে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) মোহস্তফা মোহসীন মন্টু ও ড. রেজা কিবরিয়া— দুই পক্ষকে নিয়েই বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন ড. কামাল। দলের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, এই বৈঠক থেকেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে— বিভেদ ভুলে আগের মতো ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে গণফোরাম।

এর আগে, ডিসেম্বরে দলের কাউন্সিলের যে ঘোষণা ছিল, আজ বুধবারই (১১ নভেম্বর) সেই কাউন্সিল স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন ড. রেজা কিবরিয়া। ঘোষণায় তিনি বলেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গণফোরামের ঐক্যবদ্ধ কাউন্সিল অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে গণফোরামের ১২ ডিসেম্বর ২০২০ অনুষ্ঠেয় কাউন্সিল স্থগিত করা হলো।

দুই পক্ষের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মোস্তফা মোহসীন মন্টুর নেতৃত্বাধীন অংশের গণফোরাম নেতা আ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী অবশ্য সরাসরি কিছু স্বীকার করেননি। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘ড. রেজা কিবরিয়া বিবৃতি দিলে হবে না। আমরা ড. কামাল হোসেনের বিবৃতি চাই। বিবৃতিতে তিনি লিখবেন— আমাদের আট জনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তাহলেই আমরা বিষয়টি মেনে নিতে পারি।’

বিজ্ঞাপন

অ্যাডভোকেট সুব্রত বলেন, ড. কামাল হোসেন এখনো বিবৃতি দেননি। তবে ড. কামাল হোসেন আমাদের দুই গ্রুপকে নিয়েই আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) বৈঠক ডেকেছেন। তিনি পার্টির চেয়ারম্যান। আমরা অবশ্যেই তার ডাকে সাড়া দিয়ে বৈঠকে যাব। বৈঠকে যাওয়ার পর বোঝা যাবে কী হচ্ছে।

দুই পক্ষের মধ্যেকার ব্যবধান ঘুচানো নিয়ে অবশ্য বৃহস্পতিবারই প্রথম বৈঠক নয়। এর আগে গত মঙ্গলবারও দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে অবশ্য মোস্তফা মোহসীন মন্টু উপস্থিত থাকলেও ছিলেন না ড. রেজা কিবরিয়া। বৈঠকের পর দুই পক্ষের কোনো নেতাই সেভাবে গণমাধ্যমে মুখ খোলেননি। তবে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ওই বৈঠকের ‘ইতিবাচক আলোচনা’র ধারাবাহিকতাতেই বৃহস্পতিবার ফের বসতে যাচ্ছে দুই পক্ষ।

প্রতিষ্ঠার ২৭ বছর পর গত ২৬ সেপ্টেম্বর ভেঙে দুই ভাগ হয়ে যায় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম। এর এক অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টুসহ তিন নেতা। তারা আগামী ২৬ ডিসেম্বর দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলেরও ঘোষণা দেন। দলের অন্য অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া, ড. কামাল হোসেন নিজেও এই অংশের সঙ্গেই রয়েছেন। এই অংশের কাউন্সিল আয়োজনের ঘোষণা ছিল ১২ ডিসেম্বর।

বিজ্ঞাপন

দুই অংশে বিভক্ত হয়ে পড়া নিয়ে দলের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে ১৭ অক্টোবর এক সভায় দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে আট নেতাকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেন ড. রেজা কিবরিয়া। এই আট নেতা হলেন— মোস্তফা মোহসীন মন্টু, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জগলুল হায়দার আফ্রিক, হেলালউদ্দিন, লতিফুল বারী হামিম, খান সিদ্দিকুর রহমান ও আব্দুল হাসিব চৌধুরী।

এদিকে, মোস্তাফা মোহসীন মন্টুর নেতৃত্বাধীন অংশ থেকে ড. কামাল হোসেনকে শোকজ করার সিন্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্তে ড. কামাল হোসেন রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বিষয়টি নিয়ে পরিবারসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা করেন। সবার পরামর্শ নিয়ে এখনো অবসরে যাওয়ার সিদ্ধান্তেই অনড় রয়েছেন তিনি। তবে দলের একাধিক সূত্র বলছে, বিভক্ত হয়ে পড়া দলকে একত্রিত করে তবেই অবসরের ঘোষণা দেবেন তিনি। সেক্ষেত্রে দুই পক্ষকে মিলিয়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় কাউন্সিল আয়োজন শেষে জানুয়ারিতে অবসরের ঘোষণা আসতে পারে তার কাছ থেকে।

দলে ভাঙনের আঁচ লাগার পর থেকেই অবশ্য দুই পক্ষকে এক করতে কাজ করে যাচ্ছেন ড. কামাল। দুই পক্ষের নেতাদের সঙ্গেই আলাদা আলাদা বৈঠক করেছেন তিনি। একাধিক বৈঠক হয়েছে মন্টু গ্রুপের নেতাকর্মীদের সঙ্গে। দলীয় সূত্র বলছে, সপ্তাহ দুয়েক আগের এক বৈঠকে মোস্তফা মোহসীন মন্টুসহ আর অনুসারীদের কাছে সসম্মানে রাজনীতি থেকে বিদায় নেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন ড. কামাল। সে সময় মন্টু বলেন, বয়স্ক সবাই-ই অবসরে যেতে পারেন। তবে দলে ঐক্য ফিরিয়ে আনতে হবে।

বৈঠকে মন্টু ডিসেম্বরে তাদের কাউন্সিলের কথা উল্লেখ করে ওই কাউন্সিল থেকে নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেন। সে সময় ড. কামাল বলেন, পৃথক সম্মেলন না করে দুই পক্ষ এক হয়ে জানুয়ারিতেই সম্মেলন হতে পারে, যেখানে তিনি নিজেও উপস্থিত থাকবেন।

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণফোরামের এক নেতা সারাবাংলাকে বলেন, ওই বৈঠকে ড. কামালের প্রস্তাবে একমত হন মন্টুসহ তার অনুসারী নেতাকর্মীরা। বিষয়টি নিয়ে ড. রেজা কিবরিয়াসহ তার অনুসারীদের সঙ্গে আলোচনা করার কথা তারা বলেন। দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠক হতে পারে বলেও জানান মন্টু। এরপরই মূলত গত মঙ্গলবার দুই পক্ষের বৈঠক হয়েছে, যেখান থেকে দুই পক্ষ মিলেমিশে যাওয়ার বিষয়ে একমত পোষণ করার কথাই জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার ড. কামালের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে এই বিষয়গুলো নিয়েই চূড়ান্ত আলোচনা হবে এবং সুস্পষ্ট ঘোষণাও আসবে বলে আমরা মনে করছি।

এর আগে, গত বছরের মে মাসে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলের পর থেকেই মূলত গণফোরামের অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখা দিতে থাকে। এই কোন্দল চরম পর্যায়ে পৌঁছায় এ বছরের মার্চের শুরুর দিকে। গত ২ মার্চ দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশতাক আহমেদের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে দুই সাংগঠনিক সম্পাদকসহ চার কেন্দ্রীয় নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। এই চার নেতা হলেন— সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন ও লতিফুল বারী হামিম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক খান সিদ্দিকুর রহমান এবং প্রবাসীকল্যাণ সম্পাদক আব্দুল হাছিব চৌধুরী। পরদিন ৩ মার্চ ওই বহিষ্কৃত চার নেতা পাল্টা বহিষ্কার করেন দলের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া, সহসভাপতি মহসীন রশীদ ও সহসভাপতি শফিকউল্লাহ এবং যুগ্ম সাধারণ মোস্তাককে।

পাল্টাপাল্টি এই বহিষ্কারের পর ৪ মার্চ এক বিজ্ঞপ্তিতে গণফোরামের চেয়ারম্যান ড. কামাল হোসেন কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। নিজেকে আহ্বায়ক ও আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়াকে সম্পাদক রেখে ওই বিজ্ঞপ্তিতে দুই সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন তিনি। পরে ১২ মার্চ পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটিও ঘোষণা করেন তিনি। ওই সময়ও দলের একাংশের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, অগণতান্ত্রিকভাবে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ড. কামাল হোসেনকে ২ সপ্তাহের আল্টিমেটাম দেন। পরে অবশ্য দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর সাধারণ ছুটি ঘোষণা হলে গণফোরামের উভয় পক্ষের রাজনৈতিক তৎপরতাও স্থবির হয়ে পড়ে। করোনার প্রকোপ কমতে থাকলে দুই পক্ষই সক্রিয় হয়ে ওঠে। এর ধারাবাহিকতায় দুই পক্ষের বিভেদ এবার ঘুচতে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন-

দ্বিধাবিভক্ত গণফোরাম এক হচ্ছে, জানুয়ারিতে সম্মেলন

‘পাকিস্তানি লবিতে পরিবেষ্টিত’ ড. কামাল, ভাঙছে গণফোরাম

ভাঙনের হাত থেকে গণফোরামকে রক্ষার আহ্বান ‘বাদ পড়া’ নেতাদের

সংগ্রাম জোরদার করার আহ্বান গণফোরামের কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির

 

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন