বিজ্ঞাপন

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট খুলে জালিয়াতি, গ্রেফতার ৩

November 16, 2020 | 9:10 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা পণ্য খালাসের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভুয়া ওয়েবসাইট খুলে জালিয়াতির অভিযোগে সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি।

বিজ্ঞাপন

গ্রেফতার তিনজন হলেন- চট্টগ্রামের সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান খান এন্টারপ্রাইজের মালিক গোলাম মওলা খান ও তার ছোট ভাই গোলাম রসুল খান এবং ভুয়া ওয়েবসাইট ডেভেলপার আবুল খায়ের পারভেজ।

এদের মধ্যে গোলাম মওলা খানকে রোববার (১৫ নভেম্বর) নগরীর চট্টেশ্বরী সড়ক থেকে গ্রেফতার করা হয়। আর সোমবার (১৬ নভেম্বর) একই জায়গা থেকে গোলাম ফারুক ও মোগলটুলি থেকে আবুল খায়ের পারভেজকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার তিনজনই আদালতে ১৬৪ ধারায় দায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সিআইডির চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শাহনেওয়াজ খালেদ।

ঢাকার চকবাজারের মেসার্স সিয়াম এন্টারপ্রাইজ চলতি বছরের শুরুর দিকে ১৩ হাজার ৫২০ কেজি চীনাবাদাম ও ৪ হাজার ৫১০ কেজি জলপাই আমদানির ঘোষণায় একটি চালান নিয়ে আসে চট্টগ্রাম বন্দরে। তাদের মনোনীত সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধি চট্টগ্রামের খান এন্টারপ্রাইজ চালানটি খালাসের জন্য ২৩ এপ্রিল কাস্টমসে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। কিন্তু গোপন সংবাদে সন্দেহজনক পণ্যের উপস্থিতির তথ্য থাকায় কাস্টমসের এআরআই শাখা চালানটির খালাস স্থগিত করে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করেন। এতে দেখা যায়, ওই চালানে আনা হয়েছে উচ্চশুল্কের ২১ হাজার ৬০ কেজি শিশুখাদ্য গুঁড়োদুধ।

বিজ্ঞাপন

ঘোষণা বর্হিভূত পণ্য আনায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমদানিকারককে শুল্ক বাবদ ৬৫ লাখ টাকা, শতভাগ জরিমানা বাবদ আরও ৬৬ লাখ টাকা এবং ১০ লাখ টাকা বিমোচন জরিমানা দেওয়ার আদেশ দেয়। এছাড়া আমদানি পণ্যের চালানটি খালাসের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বা আমদানি রফতানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দফতরের ক্লিয়ারেন্স পারমিট কাস্টমসে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

গত ১১ অক্টোবর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিয়াম এন্টারপ্রাইজের পক্ষ থেকে সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান খান এন্টারপ্রাইজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি ছাড়পত্র সনদ কাস্টমসে দাখিল করে। ১৩ অক্টোবর এ সংক্রান্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠিও দাখিল করে প্রতিষ্ঠানটি। এতে বিএসটিআই’র ছাড়পত্র এবং কাস্টমসের আরোপিত জরিমানা ও শুল্ক পরিশোধ সাপেক্ষে চালানটি ছাড় দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

কাস্টমসের এআরআই শাখা যাচাইবাছাই করে দেখতে পায়, পণ্যছাড়ের জন্য জমা দেওয়া ক্লিয়ারেন্স পারমিটে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যে ওয়েবসাইটের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে সেটি ভুয়া। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট হচ্ছে -www.mincom.gov.bd। কিন্তু আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটি www.mincomgov.com নামে একটি ওয়েবসাইট খুলে পণ্যছাড়ের ভুয়া অনুমোদনপত্র জমা দেয় বলে শনাক্ত করেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।

বিজ্ঞাপন

এরপর গত ২৯ অক্টোবর নগরীর বন্দর থানায় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের সহকারী শুল্ক কর্মকর্তা সুজয় দেবনাথ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ঢাকার সিয়াম এন্টারপ্রাইজের মালিক এবং সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধি চট্টগ্রামের খান এন্টারপ্রাইজের মালিককে মামলায় আসামি করা হয়। মামলাটি দায়ের করা হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২২ (২) ও ২৩ (২) এবং দণ্ডবিধির ৪২০, ৪৬৮ ও ৪৭১ ধারায়। ওই মামলা তদন্তে নেমে সিআইডি তিনজনকে গ্রেফতারের পাশাপাশি জালিয়াতির রহস্য উদঘাটন করে।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ ‍সুপার শাহনেওয়াজ খালেদ সারাবাংলাকে জানান, প্রথমে খান এন্টারপ্রাইজের মালিক গোলাম মওলা খানকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, তার ভাই গোলাম ফারুক খান প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক কার্যক্রম দেখাশোনা করেন। গ্রেফতারের পর গোলাম ফারুক জানান, খান এন্টারপ্রাইজের লাইসেন্স ব্যবহার করে রাসেল ও রানা নামে ‍দুজন ব্যবসায়ী চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্যছাড় করানোর ব্যবসা করেন।

রাসেল ও রানাকে খুঁজতে গিয়ে সিআইডি কর্মকর্তারা নগরীর মোগলটুলি এলাকার বাসিন্দা আবুল খায়ের পারভেজের সন্ধান পান যিনি চট্টগ্রাম বন্দর-কাস্টমসকেন্দ্রিক ভূয়া নথিপত্র সৃজন করে জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত আছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভুয়া ওয়েবসাইটটিও তিনি তৈরি করেছেন জানতে পেরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে পারভেজ জানান, ওয়েবসাইট তৈরি করলেও তার কাছে তথ্য আপলোড করার জন্য ডোমেইন ছিল না। তিনি নগরীর ও আর নিজাম রোডের ইশতিয়াক টেকনোলজি নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ২ হাজার আটশ টাকায় ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন নেন। এরপর পারভেজ আগ্রাবাদের ক্লিক সফট বিডি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক মাহবুবুর রহমানের কাছ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় হোস্টিং স্পেস ভাড়া নেন। পরে সেই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভুয়া ছাড়পত্র সনদ তৈরি করে দেওয়া হয় রাসেল ও রানাকে।

শাহনেওয়াজ খালেদ বলেন, ‘রাসেল ও রানা এর আগেও পারভেজকে দিয়ে কাস্টমসে দাখিলের জন্য ভুয়া নথিপত্র তৈরি করেছে। এরা তিনজনই মূলত জালিয়াতির হোতা। পারভেজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাণিজ্যমন্ত্রী এবং বাণিজ্য সচিবের ছবি ব্যবহার করে এই ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে। আমরা রাসেল ও রানাকে গ্রেফতারের জন্য খুঁজছি। গ্রেফতার হওয়া তিনজনকে জবানবন্দি দেওয়ার পর কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। এছাড়া ইশতিয়াক টেকনোলজি ও ক্লিক সফট বিডির মালিক সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন