বিজ্ঞাপন

‘সেকেন্ড ওয়েভের ধাক্কা আসতে শুরু করেছে, মাস্ক পরবেন’

November 19, 2020 | 11:11 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের সেকেন্ড ওয়েভ বা দ্বিতীয় ঢেউ এরই মধ্যে আমাদের দেশেও আসতে শুরু করেছে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে সচেতন থাকতে এবং সংক্রমণ এড়াতে সবাইকে মাস্ক পরতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে। ইউরোপ-আমেরিকায় কিন্তু দ্বিতীয় ওয়েভ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই ধাক্কাটা আমাদের দেশেও আসতে শুরু করেছে। তাই আমাদের সচেতন হতে হবে। যেখানে একটু বেশি লোকজনের সমাগম, সেখানে যাওয়ার সময় অবশ্যই মাস্ক পরে থাকবেন।

বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) রাতে একাদশ জাতীয় সংসদের দশম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সংসদের বিশেষ এই অধিবেশন চলছে।

বিজ্ঞাপন

অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গতবার হঠাৎ করে করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার কারণে সরকার অনেক কাজ করতে পরেনি। কিন্তু এবার আগেভাগে বেশি প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে এখনো রিসার্চ চলছে। আমরা আগাম বুকিং দিয়েছি, যেন ভ্যাাকসিন বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমরা আনতে পারি। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।

সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি— আপনারা প্রত্যেকে এখন মুখে মাস্ক পরে থাকবেন। আপনারা সচেতন থাকবেন যেন এই ভাইরাসটা শরীরে বাসা বাঁধতে না পারে। সেজন্য একটু উষ্ণ গরম পানি খাওয়া, উষ্ণ গরম পানি দিয়ে একটু গরগল করা এবং সবসময় হাত ধুয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা— এই অভ্যাসগুলো জরুরি। ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। অর্থাৎ স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়মগুলো সবাই যেন একটু ভালোভাবে মেনে চলবেন।

সংসদ নেতা বলেন, জাতির পিতা দেশ দিয়ে গেছেন। করোনাভাইরাস থাকা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতি যেন গতিশীল থাকে, তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি এবং নিয়ে যাচ্ছি। এ জন্যই একেবারে ‍তৃণমূল পর্যায় থেকে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি মানুষকে, যেন আমাদের দেশের মানুষের কষ্টটা লাঘব হয়। তারপরও এটা ঠিক— করোনাজনিত কিছু কষ্ট মানুষের আছে।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষা ব্যবস্থায় সেমিস্টার পদ্ধতির প্রচলন ও এ বছর শিক্ষার্থীদের ‘অটো প্রমোশন’ দেওয়ার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের এখানে আগে সেমিস্টার সিস্টেম ছিল না। আমরা সেমিস্টার সিস্টেম চালু করি, যেটাতে সারাবছর শিক্ষার্থীরা যে পরীক্ষা দিয়েছে তার ভিত্তিতে একটা ফল আসবে। এই ব্যবস্থা তো ইংল্যান্ডেও আছে, পৃথিবীর অনেক দেশে আছে। এ বছর শিক্ষার্থীরা অটো প্রমোশন পাচ্ছে। এতে খুব বেশি একটা ক্ষতি হয়, তা নয়। প্রমোশনের পরও তারা স্কুলে যাবে, পরীক্ষা দেবে। যারা টিকে থাকবে, থাকবে। সেই সুযোগটা তাদের আছে। কাজেই অটো প্রমোশনে খুব একটা ক্ষতি হয়ে গেল, এমনটি নয়। একদিন বসে লিখে পাস করে সেই পাসই পাস, আর সারাবছর পরীক্ষা দিয়ে দিয়ে যে রেজাল্ট, তা রেজাল্ট নয়— এটা তো হতে পারে না। বরং সেভাবে যদি সারাবছরের রেজাল্ট একসঙ্গে করে প্রমোশন দিয়ে দেওয়া যায়, আমি তো মনে করি সেটাতে তাদের মেধার পরিচয়টা পাওয়া যায়।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতাকে মানুষের কাছে নিয়ে যেতে চাইলেও তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর তিনি ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চেয়েছিলেন বলে অপপ্রচার চলছিল বলে মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা সম্পৃক্ত— আমাদের প্রতিরক্ষা, আইনশৃঙ্খলা থেকে শুরু করে সব কাজে যারা সম্পৃক্ত, সবাইকে নিয়ে এবং সব দলকে নিয়ে তিনি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলেছিরেন। তার লক্ষ্য ছিল উৎপাদন বাড়ানো, দেশকে সমৃদ্ধ করা এবং দ্রুততার সঙ্গে দেশকে উন্নত করা। যে কারণে তিনি ক্ষমতাকে একেবারে বিকেন্দ্রীকরণ করে তৃণমূলে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, যেখান থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নটা শুরু হবে। এ জন্য যে পরিবর্তনটা তিনি এনেছিলেন, সেটাকে ভালোভাবে বাস্তবায়ন করার সুযোগ পাননি। তাকে সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি। ১৫ আগস্ট তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। তারপর থেকে একটা অপবাদ দেওয়া হলো— তিনি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন, সমাজতন্ত্র কায়েম করতে চেয়েছিলেন, ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চেয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যে মানুষটি তার জীবনের সবটুকু বিসর্জন দিয়েছেন একটি জাতির জন্য, যে মানুষটি তার জীবনের কোনো আরাম-আয়েসের দিকে তাকাননি, বারবার নিজের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলেছেন একটি জনগোষ্ঠীর জন্য, তাদের একটি স্বতন্ত্র পরিচয় দেওয়ার জন্য, একটি রাষ্ট্র দেওয়ার জন্য— তিনি কী কারণে ক্ষমতার লোভ করবেন? ক্ষমতার লোভ থাকলে তো তিনি অনেকবারই ক্ষমতায় যেতে পারতেন। যখনই যে আসছে, তাকে তো মন্ত্রী বানাবেন, ক্ষমতা দেবেন— এ রকম কথা বলেছেন। কিন্তু তিনি তো তা চাননি। তিনি একটি জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শেষভাগে স্পিকারের উদ্দেশে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু পরিবর্তন আনার জন্য আমাদের এই সংবিধান সংশোধন করতে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি এই সংসদে যে ভাষণটি দিয়েছিলেন, সেই ভাষণটি আজ আমরা শুনতে চাই। গোটা জাতিরও শোনার দরকার আছে, তিনি কেন সেই পরিবর্তন করেছিলেন? কিসের জন্য করতে চেয়েছিলেন? করার উদ্দেশ্যটা কী ছিল? এসব কারণে ভাষণটি শোনানোর জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পরে সংসদে বঙ্গবন্ধুর ওই ভাষণের অডিও রেকর্ড বাজানো হয়।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

Tags: , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন