বিজ্ঞাপন

ইভানার ৩ স্বামী, আত্মসাৎ কোটি কোটি টাকা, কব্জায় দামি রেস্টুরেন্ট

November 20, 2020 | 6:30 pm

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সোনিয়া আক্তার ইভানা (৩৬)। রয়েল নামে একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম স্বামী থাকলেও তার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়েছে এমন মিথ্যা তথ্য দিয়ে আরও দুটি বিয়ে করেছেন। প্রথম স্বামীর পরামর্শে পরের দুই স্বামীর কাছ থেকে ইভানা হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। এ ছাড়া এক স্বামীর কাছ থেকে লিখে নিয়েছেন দামি রেস্টুরেন্টও।

বিজ্ঞাপন

ইভানার প্রথম স্বামী জব্বারুল ইসলাম রয়েল এখন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অধীনে মদিনা ঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত। স্ত্রী ইভানার আরও দুই বিয়ের কথা জেনেও চুপ ছিলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। শুধু তাই নয় ইভানাকে পরামর্শ দিয়েছেন পরের স্বামীদের কাছ থেকে টাকা, গাড়ি আত্মসাতের। পুলিশ স্বামীর পরামর্শমতো ইভানা কাজ করেছেন বলে অভিযোগ জানিয়েছেন ভুক্তভোগী দুই স্বামী।

ইভানার পরের দুই স্বামীর মধ্যে একজন  আইনজীবী এবং অপরজন ব্যবসায়ী।

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, ইভানার গ্রামের বাড়ি মাদারিপুরের রাজৈর উপজেলায়। প্রায় এক দশক আগে বিয়ে করেছিলেন চট্টগ্রামের মদিনা ঘাট ফাঁড়িতে কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক জব্বারুল ইসলাম রয়েলকে। বিয়ের পর মাঝে মাঝে স্বামীর কর্মস্থলে থাকতেন ইভানা। তবে বেশিরভাগ সময়ই থাকতেন ঢাকায়। রাজধানীর বনানীতে মাসে আড়াইলাখ টাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন ইভানা।

বিজ্ঞাপন

ইভানার স্বামী ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘২০১৮ সালের ডিসেম্বরের দিকে বনানীর পেট্টাস সীসা বারে পরিচয় হয় সোনিয়া আক্তার ইভানার সঙ্গে। এরপর কথা হতো। সেখান থেকে প্রেমের সম্পর্ক। পরে ২০১৯ সালের জুন মাসে ইভানার সঙ্গে আইনি প্রক্রিয়ায় বিয়ে হয়। জহুরুলের প্রথম সংসার রয়েছে। পরে প্রথম পরিবার ও বাবা-মা দ্বিতীয় বিয়ের খবর জেনে যায়। তবুও কোনো সমস্যা ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘বনানীর এ-ব্লকের ২৩ নম্বর সড়কের ফ্লাট ৯/এ ও ৯/বি পাঁচ হাজার স্কয়ার ফিটের বাসায় থাকেন ইভানা। সেই বাসায় দিনের বেলায় যাতায়াত করত জহুরুল। তবে তিনি রাতে থাকতেন না। গত ১৩ নভেম্বর রাতে ইভানাকে একাধিকবার কল করে না পেয়ে ১৪ নভেম্বর সকালে বনানীর বাসায় হাজির হন তিনি। বাসায় গিয়ে দেখতে পান একজনের সঙ্গে অন্তরঙ্গ অবস্থায় ইভানা। জানতে চাইলে ইভানা জানায়, ওনার নাম জব্বারুল ইসলাম রয়েল। তিনি একজন পুলিশ পরিদর্শক। চট্টগ্রামের মদিনা ঘাট ফাঁড়িতে কর্মরত আছেন তিনি। ওই পুলিশ কর্মকর্তা তার প্রথম স্বামী।

রয়েলের কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘ইভানা আমার স্ত্রী।’ উত্তরে জহুরুলও বলেন, ‘সে আমারও স্ত্রী। কিছুদিন আগে সে আমাকে জানিয়েছে, আপনার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়েছে।’ তখন পুলিশ পরিদর্শক জানান, না। কোনোদিনও ছাড়াছাড়ি হয়নি।

বিজ্ঞাপন

প্রথম সংসারে ইভানার একটি ছেলে রয়েছে।

ওই ব্যবসায়ী সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইভানার বিষয়টি নিয়ে জহুরুলকে বাড়াবাড়ি না করার জন্য হুমকি দেন। এসময় পুলিশ পরিদর্শক জব্বারও বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে বলেন।’

এরপর জহুরুল ইসলাম ওই বাসা থেকে বেরিয়ে নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে এবং সম্পূর্ণ বিষয় উল্লেখ করে বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। (জিডি নম্বর-৭৭২। এই দিন সন্ধ্যায় তিনি তালাকও দেন ইভানাকে। এ ছাড়া বিষয়টি ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের জানানো হয়।

জানতে চাইলে ওই ব্যবসায়ী সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইভানা বিয়ের পর প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তার কাছ থেকে। এরমধ্যে দুমাস আগে ব্ল্যাকমেইলিং করে পেট্টাস রেস্টুরেন্ট লিখে নিয়েছে। যার দাম ৫০ লাখ টাকা। শুরুতে ১৬ লাখ টাকা দামের একটি প্রিমিও এক্সিও গাড়ি এবং এক মাস আগে ৪০ লাখ টাকার নিশান গাড়ি নিয়েছেন। এর বাইরে ক্যাশ নিয়েছে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা। এরমধ্যে প্রথমপক্ষের ছেলেকে কানাডায় পাঠানোর নাম করে ক্যামব্রিয়ানে ফাইল জমা বাবদ ২০ লাখ টাকা ক্যাশ নিয়েছে। অথচ ক্যামব্রিয়ানে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন, সেখানে কোনো ফাইলই জমা দেওয়া হয়নি। সেও কোনো ডকুমেন্ট দেখাতে পারেনি।’

বিজ্ঞাপন

পুলিশ কর্মকর্তার দাবি অনুযায়ী ইভানার ছেলে রয়েছে, এটা আপনি আগে জানতেন না বা দেখেননি জানতে চাইলে জহুরুল বলেন, ‘একটা ছেলেকে দেখেছি বনানীর বাসায়। জানতে চাইলে ইভানা জানিয়েছিল, তার বোন কানাডায় থাকে, তার ছেলে ওটা। ইভানা তার খালা।

অথচ খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, তার কোনো বোন কানাডায় থাকেন না। ব্যবসায়ীর দাবি, পুরো পরিবারটি একটি প্রতারক চক্র। এ সব করেই চলে তাদের। তাছাড়া বনানীর মতো জায়গায় ৫ হাজার স্কয়ার ফিট বাসায় থাকে কী করে। যার মাসিক ভাড়া দিতে হয় আড়াই লাখ টাকা। আর এর পেছনে তার প্রথম স্বামী পুলিশ কর্মকর্তার হাত রয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।

রেজাউল করিম নামে একজন আইনজীবী ইভানার দ্বিতীয় স্বামী ছিলেন। ইভানার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) সারাবাংলাকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পরিচয় ছিল ইভানার সঙ্গে তার। একসময় তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। বিয়ের পর নিকেতনে একটি বাসায় (বি ব্লকের ২ নম্বর সড়কের ৪৫ নম্বর বাড়ি) দিনের বেলায় যাতায়াত করতেন। পরে তিনি জানতে পারেন ওই বাসায় রাতের বেলায় আসতেন তার প্রথম স্বামী পুলিশ কর্মকর্তা জব্বারুল ইসলাম রয়েল। ইভানাকে জিজ্ঞেস করলে সে জানিয়েছে, তার সাথে ছাড়াছাড়ি হয়েছে। এরপর রয়েলকে ফোন করলে জানান, তিনি ঢাকায় এসে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন। তবে আর কোনো দিন ঢাকায় এসে সাক্ষাৎ করেননি রয়েল।

এর কিছুদিন পর পেট্টাস রেস্টুরেন্টের মালিক জহুরুলের সঙ্গে কথা হয় ইভানার বিষয়ে। প্রতারণার সবকিছু জহুরুলকে জানিয়েছি। তখন এই জহুরুল আমাকে অনুরোধ করে থামিয়ে দেয়, যে ইভানাকে যেন কিছু না করি। আর এখন সেই জহুরুলই ওই প্রতারক নারীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আমার কথা জানার পরও কেন ইভানাকে বিয়ে করল সেটিই বুঝতে পারছি না।

ইভানা আপনার কাছে কত টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জানতে চাইলে আইনজীবী রেজাউল করিম বলেন, ‘এক বছরে সব মিলে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার মতো হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে সরে এসেছি এবং তালাকও দিয়েছি।’

আইনজীবী আরও বলেন, ‘ইভানার প্রতারণার পেছনে বড় ভূমিকা পালন করে পুলিশ পরিদর্শক জব্বারুল ইসলাম। ইভানাকে দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ফাঁদ পাতানো হয়েছে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের মদিনা ঘাট ফাঁড়িতে কর্মরত পরিদর্শক জব্বারুল ইসলাম রয়েলকে ফোন করা হলে সারাবাংলাকে বলেন, ‘পার্সনাল বিষয়ে আমি কথা বলতে পারব না। আপনি ফোন রাখেন’ বলেই মোবাইল কেটে দেন। এরপর বেশ কয়েকবার ফোন করা হলে তিনি আর কল রিসিভ করেননি।

অন্যদিকে অভিযুক্ত সোনিয়া আক্তার ইভানার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে কল করা হলে প্রথমে তিনি কল রিসিভ করেননি। এরপর আবার ফোন করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়।

বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আজম মিয়া বুধবার (১৯ নভেম্বর) সারাবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশ পুরো বিষয়টি তদন্ত করছে। তদন্ত শেষে ওই নারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া তার প্রথম স্বামী পুলিশ কর্মকর্তা জব্বারুল ইসলাম রয়েলও যদি জড়িত থাকেন সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।’

সারাবাংলা/ইউজে/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন