বিজ্ঞাপন

সমন্বয় সভায় নেই সেবা সংস্থার প্রধানরা, চসিক প্রশাসকের আক্ষেপ

November 26, 2020 | 12:31 am

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) উদ্যোগে আয়োজিত সমন্বয় সভায় সরকারি সব সেবা সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত না হওয়ায় আক্ষেপ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। তিনি সেবা প্রদানকারী সব সংস্থাকে ‘এক ছাতার নিচে’ এনে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করাতে এবং সমন্বয় সভায় সব সংস্থার প্রধানের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়নের দাবি করেছেন।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২৫ নভেম্বর) নগরীর বাটালি হিলে চসিকের সম্মেলন কক্ষে এই সমন্বয় সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। সভায় সিডিএ-ওয়াসার প্রধানরা উপস্থিত থাকলেও বিভিন্ন সংস্থার প্রধানরা তাদের প্রতিনিধি পাঠিয়ে দায় সেরেছেন।

সভাপতির বক্তব্যে খোরশেদ আলম সুজন আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ‘সমন্বয় সভায় সেবা সংস্থার প্রধানরা এলে নগরীর উন্নয়নে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হতো। প্রয়োজনে প্রতি মাসে নয়, দুই মাসে হলেও সব সংস্থার প্রধানদের এক টেবিলে বসা উচিত। সভায় নগরীর বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা হবে। সেই আলোচনা থেকে সমাধান উঠে আসবে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’

‘কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সভায় উপস্থিত না থাকলে কিভাবে হবে? পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, যানজট, পাহাড় কাটা, অবৈধ দখল, নদী দূষণ, পরিবেশ বিপর্যয়সহ নানা সমস্যায় জর্জরিত এই নগরী। সমস্যা সমাধানের জন্যই এই সমন্বয় সভা। সভায় সংস্থার প্রধানদের উপস্থিতি নিশ্চিতে সরকারের পক্ষ থেকে আইন প্রণয়ন আজ সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে,’— বলেন সুজন।

বিজ্ঞাপন

চসিক প্রশাসক আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম বাংলাদেশের জন্য সোনার ডিম পাড়া রাজহাঁস। আগামী প্রজন্মের প্রয়োজনে এক সুখী সমৃদ্ধ শক্তপোক্ত চট্টগ্রাম নগর বিনির্মাণে আমাদের সমন্বিত উন্নয়নের বিকল্প নেই। সবার সুচিন্তিত পরামর্শ, মতামত নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা সমন্বয়ের মাধ্যমে নিজেদের সমস্যা, শূন্যতা নিয়ে আলোচনা করব। আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবতার নিরিখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কোনো সেবা সংস্থার দূরত্ব থাকুক— এটা আমি চাই না।’

এর আগে, ২০১৬ সালের ২৭ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সেবা প্রদানকারী সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সরকারি দফতরের সমন্বয় করতে একটি পরিপত্র জারি করা হয়। পরিপত্রে বলা হয়েছিল, ‘সিটি করপোরেশনের অধিক্ষেত্রে সরকারি বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দফতরের প্রধানরা সিটি করপোরেশনের আমন্ত্রণে সভায় যোগদান করে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবেন এবং বাস্তবায়ন অগ্রগতি সিটি করপোরেশনকে অবহিত করবেন।’

বিজ্ঞাপন

এরপর চসিকের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের আমলে ২০১৬ সালের ৩ আগস্ট ও ২০১৭ সালের ২৩ মে দু’টি সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু দু’টি সভাতেই সেবা সংস্থাগুলোর আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি। নাছিরের মেয়াদ শেষে চলতি বছরের ৬ আগস্ট চসিক প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেন খোরশেদ আলম সুজন। তিনি দায়িত্ব নিয়ে সব সংস্থার প্রধানের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলামকে প্রধান অতিথি করে গত ৮ অক্টোবর প্রথম সমন্বয় সভা করেন। ওই সভায় ২৪টি সংস্থার প্রধান উপস্থিত ছিলেন।

এরপর বুধবার অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সভায় সুজন নগরীর বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে বলেন, ‘চট্টগ্রাম এখন ধুলার নগরী। ওয়াসা ও সিডিএ সড়ক কাটছে, সেজন্য ধুলা-যানজট এখন নিত্যসঙ্গী। নগরে যানবাহন থামার নির্দিষ্ট কোনো স্টপেজ নাই, অথচ নগরে ব্যবসার পরিধি বাড়ছে। বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে। আমি দায়িত্ব নিয়ে তিন মাসের মধ্যে রীতিমতো যুদ্ধ করে পোর্ট কানেকটিং রোডের কাজে দৃশ্যমান অগ্রগতির চেষ্টা করেছি। বৃহস্পতিবার এই রোডের ঢালাইয়ের কাজ হবে।’

এসময় প্রশাসক নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি এলাকায় পাহাড় কাটা বন্ধ ও পরিবেশ দূষণ রোধে স্টিল রি-রোলিং মিলগুলোর চিমনির কালো ধোঁয়া বন্ধে পরিবেশ অধিদফতরকে ব্যবস্থা নিতে বলেন।

সভায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরীর বড় সমস্যা এখন যানজট। কনটেইনার ইয়ার্ডগুলো সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে থাকা দরকার। ট্রেইলার-প্রাইম মোভারগুলো রাস্তাতেই পার্কিং করে রাখা হচ্ছে। এ বিষয়ে বন্দর, সিটি করপোরেশন এবং পুলিশের সমন্বয় জরুরি।’

বিজ্ঞাপন

‘আমরা অতীতের সব দূরত্ব ঘুচিয়ে সব শ্রেণিপেশার মানুষের মতামতের ভিত্তিতে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছি। জলাবদ্ধতার মেগা প্রকল্পের পাশাপাশি আউটার রিং রোডের কাজ চলছে। কবি নজরুল ইসলাম রোড থেকে সদরঘাট পর্যন্ত সড়ক ৬০ ফুট প্রশস্ত করা হয়েছে। কোথাও ৬০ ফুট না থাকলে প্ল্যানও দেওয়া হচ্ছে না। বিভিন্ন পয়েন্টে ৩৭টি ফুট ওভারব্রিজ আমরা করব,’— বলেন সিডিএ চেয়ারম্যান।

চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘সড়ক কাটার জন্য নগরবাসী আমাদের ভুল বোঝে। পানি সরবরাহ বাড়ানোর জন্য আমরা সড়ক কাটছি। ২০০৯ সালে নগরীতে পানি সরবরাহ হতো ১২ কোটি লিটার। প্রয়োজন ছিল ৪০ কোটি লিটার। সেই পরিস্থিতির এখন উত্তরণ ঘটেছে।’

সভায় কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড মহাব্যবস্থাপক মো. সারওয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের প্রতিনিধি স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেন, পরিবেশ অধিদফতরের মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক নুরুল্লাহ নূরী, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম শাখার উপপরিচালক মো. শহীদুল্লাহ, সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মতামত তুলে ধরেন।

এছাড়া অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিদের মধ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. ইমাম হোসেন, উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-পশ্চিম) জয়নাল আবেদীন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপপরিচালক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম, পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম শাখার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শিবেন্দু খাস্তগীর, সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান, গণপূর্ত বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ওম প্রকাশ নন্দীও বক্তব্য রাখেন।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন