বিজ্ঞাপন

রাবিতে গবেষণা: বাওড়ে ফিরছে ৮ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় দেশি মাছ

November 27, 2020 | 1:13 pm

আবু সাঈদ সজল, রাবি করেসপন্ডেন্ট

দেশীয় প্রজাতির মাছগুলো বিলুপ্ত হওয়ার পথে। এই শঙ্কার মধ্যে সুখবর দিচ্ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) একদল গবেষক। বলছেন আটটি দেশীয় প্রজাতির মাছ বাওড়ে মজুত করা গেছে। বাওড়ে দেশীয় প্রজাতির মাছ ফিরিয়ে আনতে চলমান একটি প্রকল্পের প্রথম সফলতা এটি। এভাবে দেশীয় প্রজাতির মাছগুলো ফেরানো গেলে বাওড়ের ওপর নির্ভরশীল ৮৪ হাজার মানুষের জাবীনযাত্রায় ব্যপক পরিবর্তন আসবে— এমন প্রত্যাশা গবেষকদের।

বিজ্ঞাপন

বিলুপ্তির পথে থাকা দেশীয় মাছের প্রাচুর্য ফিরিয়ে আনাসহ বাওড়ের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বাওড় সংলগ্ন জনগোষ্ঠীর উপার্জন ও পুষ্টিচাহিদা পূরণে এই গবেষণা কার্যক্রমটি শুরু হয়। বিশ্বব্যাংকের আর্থায়নে ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের সার্বিক সহযোগিতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে প্রকল্পটি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়ামিন হোসেন এই প্রকল্পে সহকারী প্রকল্প পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘২০১৯ সালের অক্টোবরে দেশীয় প্রজাতির মাছ ফিরিয়ে আনতে আমাদের এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ঝিনাইদহের সার্জাত ও সাগান্না— এই দু’টি বাওড়ে পাইলট প্রকল্প হিসেবে একবছর শেষ না হতেই আটটি মাছ বাওড়ে ফেরাতে সক্ষম হয়েছি। এর মধ্যে কই, শিং, দেশি মাগুর, পাবদা, গুলশা টেংরা, ছোট টেংরা, বাজারি টেংরা এবং টাকি মাছ পাশের বিল ও নদী থেকে সংগ্রহ করে বাওড়ে মজুত করা হয়েছে।’

সবশেষ গত আগস্টে পাবদা ও গুলশা টেংরা প্রজননের বিষয়টি জানতে পারেন গবেষকরা। এছাড়াও বাকি দেশীয় প্রজাতির মাছগুলোও প্রাকৃতিক নিয়মে প্রজনন চলছে বাওড় দু’টিতে। গবেষকরা জানালেন, এসব মাছ ডিম দিচ্ছে এবং তারা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠছে।

বিজ্ঞাপন

গবেষণা প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৫০টি প্রজাতির দেশি মাছ আছে। ২০ থেকে ৩০ বছর আগেও সেগুলো সচারচর নদী-নালা, খাল-বিল ও বাওড়গুলোতে পাওয়া যেত। তবে বিদেশি কার্প প্রজাতির মাছগুলোর চাষ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন ও কিছু মানবসৃষ্ট কারণে এসব দেশি মাছের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। এরই মধ্যে বেশ কিছু ছোট দেশি মাছের প্রজাতি স্থানীয়ভাবে বিলুপ্তও হয়েছে।

এরকম পরিস্থিতিতেই বাওড়ে দেশি মাছের প্রজাতিকে ফিরিয়ে আনতে ২০১৯ সালে রাবি’তে এই প্রকল্পটি শুরু হয়। তিন বছরের প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। গবেষকরা বলছেন, প্রকল্পটির কার্যক্রম শেষ হলে বাওড়ে দেশি মাছের প্রাচুর্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

প্রকল্পটি দেশের বাওড়গুলোতে দেশি প্রজাতির মাছের জিন ব্যাংকে পরিণত করবে বলে আশাবাদী সহকারী প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ইয়ামিন। তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্প শেষ হলে শতভাগ সফলতা পাওয়া যাবে আশা করি। তখন বাকি বাওড়গুলোতেও মাছ চাষের উদ্যোগ নেওয়া যাবে। আর বাওড়ের সুফলভোগীদের জন্য নীতিমালা থাকায় ফেরানো মাছগুলো বাওড়ে স্থায়িত্বও পাবে। এতে দেশি মাছের জিন ব্যাংক ও ব্রুড (মা মাছ) বাংকে রূপ নেবে বাওড়গুলো। এর ফলে দেশের কোথাও না পাওয়া গেলেও ওই বাওড়গুলোতে পাওয়া যাবে এসব মাছ। হ্যাচারিগুলোও মা মাছ নিয়ে গিয়ে ডিম ফোটাতে পারবে। এর ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত বাওড়গুলোতে মাছের উৎপাদন বছরে গড়ে ৭ হাজার ৭২৯ মেট্রিক টনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পটির প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহা জেসমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য দেশীয় মাছের সংরক্ষণ। আমরা যে মা মাছগুলো বাওড়ে মজুত করেছিলাম, সেগুলো ডিম দিয়েছে এবং তাদের বংশবৃদ্ধি হচ্ছে। তবে আট প্রজাতির মাছের মধ্যে গুলশা টেংরা অপেক্ষাকৃত বেশি দেখা যাচ্ছে। ২০২২ সালের জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। আশা করি এ সময়ের মধ্যে বাওড়ে মাছ চাষের এ প্রকল্প সম্পূর্ণরূপে সফলতা পাবে।’

‘আমরা যে মাছগুলো বাওড়ে ছাড়ছি, সেগুলো আহরণ করে জেলেরাও সুবিধা পাচ্ছেন। মাছগুলোর দেখভাল ওই অঞ্চলের জেলেরাই করছেন এবং তারা মাছ বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন,’— বলেন অধ্যাপক ড. সালেহা।

তিনি জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ জন শিক্ষার্থী এ গবেষণা প্রকল্পে যুক্ত আছেন। তারা নিয়মিত বাওড়গুলোতে মাছের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন এবং দেশি মাছ নিয়ে গবেষণারও সুযোগ পাচ্ছেন। এদিকে বাওড়গুলোতে মাছের বৈচিত্র্য সূচক নির্ধারণের মাধ্যমে প্রকল্পটিতে সহায়তা করছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি গবেষণা দল। এসব শিক্ষার্থী ও গবেষকদের মধ্যে পরবর্তী সময়ে দেশীয় প্রজাতির মাছ নিয়ে আরও কাজ করার আগ্রহ তৈরি হলে তা দেশীয় প্রজাতির মাছের জন্য সুখবর হয়ে উঠবে বটে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন