বিজ্ঞাপন

‘ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ করলে ওরা লেজ গুটিয়ে পালাবে’

November 27, 2020 | 7:56 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: হুমকিধমকি দিয়ে মাঠ গরমের চেষ্টা করলেও ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ করলে মৌলবাদী গোষ্ঠী লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে পৃথক দু’টি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে উপমন্ত্রী নওফেল সাম্প্রতিক বিষয়ে বিভিন্ন কথা বলেন। চাটগাঁর সংবাদ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার অষ্টম বষপূর্তি এবং ধ্রুবতারা ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগের কনফারেন্স ও ধ্রুবতারা ইয়ূথ অ্যাওয়ার্ড-২০২০ উপলক্ষে পৃথক এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

পত্রিকার বষপূর্তি অনুষ্ঠানে উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, ‘আজ মৌলবাদী গোষ্ঠী সারাদেশে হুমকি-ধমকি দিয়ে মাঠ গরম করার চেষ্টা করছে। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের মূল নীতি-আদর্শে বিশ্বাসী রাজনৈতিক কর্মী, আমরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করি, এরা লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যাবে, আমরা জানি। কিন্তু আমরা গণতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী বলে সেটা করছি না। কিন্তু গণতান্ত্রিক অধিকারের নামে আজ ধর্মীয় অনুষ্ঠান করে কেউ কেউ রাজনৈতিক কথাবার্তা বলছে, নিজের রাজনৈতিক খায়েশ মেটানোর চেষ্টা করছে। এই ধরনের কাজ আমাদের দেশে হচ্ছে। কেন হচ্ছে? আমাদের নিজেদের মধ্যে দুর্বলতার কারণে।’

আওয়ামী লীগেও মৌলবাদী গোষ্ঠীর অনেকের অনুপ্রবেশের ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যেও এদের (মৌলবাদী) মধ্য থেকে অনেক অনুপ্রবেশকারী, এদের কার্যক্রমে বিশ্বাসী অনেকে ঢুকে গেছে। এ জন্য এরা হুমকি-ধমকি দেওয়ার সাহস পাচ্ছে। আসুন, আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নিজেদের শুদ্ধ করি। নিজেদের শুদ্ধ করতে পারলে পরাজিত শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না।’

বিজ্ঞাপন

‘একটা বিষয় সত্য যে, যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পক্ষের শক্তি নয়, তারাও অনেকে কিন্তু অনুপ্রবেশের মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, সামাজিকভাবে হয়েছে, ব্যবসায়িকভাবেও হয়েছে। একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, পারিবারিক পরিচয়ে কেউ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পক্ষে হবে তা কিন্তু নয়, আওয়ামী লীগ হবে তা তো নয়ই। আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন পারিবারিকভাবে এক আদর্শে, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে সে অন্য আদর্শের। আবার অনেকে পারিবারিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বিপক্ষে, কিন্তু সে ব্যক্তিগতভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের আদর্শে থেকে কাজ করতে চায়। সুতরাং আওয়ামী লীগ পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেই যে আওয়ামী লীগ হবে তেমন নয়।’

তরুণ সংসদ সদস্য নওফেল আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যারা সত্যিকার মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ধারণ করে, সকল প্রগতিশীল শক্তির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন-সংগ্রামে অতীতে মাঠে ছিল। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আমরা দেখেছি। সাংগঠনিকভাবে কেউ ছোট হোক কিংবা বড় হোক, আওয়ামী লীগ কিন্তু সবাইকে সঙ্গে নিয়েই আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। আদর্শের প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগকে যেভবে নেতৃত্ব দিয়েছেন, এখন বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাও সেভাবেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন।’

উগ্র ধর্মভিত্তিক সংগঠনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী আজ মাঠে আছে, তারা শুধু সাম্প্রদায়িক তা কিন্তু নয়। তারা আসলে বাতেল ফেরকার মানুষ, সুন্নীয়তবিরোধী মানুষ। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যে ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে, দ্বীন ই ইসলামে বিশ্বাস করে, এদের বিরুদ্ধের মানুষ। এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরা ধর্ম নিয়ে অপপ্রচার করছে। এদের অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

‘তারা যেভাবে কট্টরপন্থী মৌলবাদের চর্চা করে, সেই ইসলামের চর্চা আমরা করি না। আমাদের নবী করিমের যে দ্বীন ই ইসলাম, যে অসাম্প্রদায়িক ও সকলের সঙ্গে সদ্ভাব রাখার শিক্ষা যে ইসলাম দেয়, সেই ইসলামের পক্ষে আমাদের অবস্থান শক্তিশালীভাবে জানান দিতে হবে। এ পরাজিত শক্তিকে এই বাংলাদেশে আমরা আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেব না। আমরা দেখেছি, এ উগ্রবাদী গোষ্ঠী যেখানেই, যে দেশেই তারা ক্ষমতা নিয়েছে, সেখানেই বিপদ ডেকে এনেছে। মৌলবাদ সব দেশের, সব মানুষের, সব ধর্মের জন্যও বিপদজনক’ বলেন নওফেল।

প্রতিবেশী দেশের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘মৌলবাদী বৌদ্ধ সংগঠনগুলোর জন্য আজ মিয়ানমার একঘরে হয়ে গেছে। যেখানে যেখানে ধর্মীয় মৌলবাদ আছে- আফগানিস্তান, পাকিস্তান সেখানকার কী অবস্থা আপনারা দেখেন। এ বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ, সহনশীল বাংলাদেশ হিসেবে আছে বলেই এদেশে এত বিদেশি বিনিয়োগকারী আসছে। জেহাদি চেতনায় কেউ যদি উল্টাপাল্টা কথা বলে, তাহলে এই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে।’

ধ্রুবতারা সংগঠনের সভায় চট্টগ্রাম (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনের এমপি নওফেল বলেন, ‘তরুণ সমাজের মধ্যে একটা চিন্তা আনতেই হবে এদেশের মানুষ একটি ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক, সহনশীল, সাম্যের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য একাত্তর সালে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছে। কোনো মৌলবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য এ বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। পৃথিবীর কোনো দেশে মৌলবাদ, উগ্রবাদ কখনও কোনো ভালো ফল বয়ে আনতে পারেনি- সেটা যে ধর্মই হোক।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন