বিজ্ঞাপন

জালিয়াতি করে স্ত্রীকে প্লট বরাদ্দ: ফাঁসলেন ৩ সাংবাদিক নেতা

December 3, 2020 | 5:43 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো : স্ত্রীর নামে প্লট জালিয়াতি করে ফেঁসে গেছেন চট্টগ্রামের তিন সাংবাদিক নেতা। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) স্ত্রীসহ তিনজনের নামে জালিয়াতির মামলা করেছে। একই মামলায় আরও এক সাংবাদিক নেতাসহ আরও তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক মো. আবু সাঈদ বাদি হয়ে গত ২৪ নভেম্বর মামলাটি দায়ের করেছেন।

মামলার আসামিরা হলেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেডের সাবেক সম্পাদক নিজাম উদ্দিন আহমেদ ও তার স্ত্রী হোসনে আরা, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক নির্মল চন্দ্র দাশ ও তার স্ত্রী তপতী দাশ, সাবেক কোষাধ্যক্ষ শহীদ উল আলম ও তার স্ত্রী তসলিমা খানম এবং সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুব উল আলম, প্লট ক্রেতা মো. সেলিম ও হুমায়েরা ওয়াদুদ।

মামলার বাদী আবু সাঈদ সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, সাংবাদিকদের আবাসনের জন্য সরকারের বরাদ্দ দেওয়া ভূমিতে মসজিদ ও কবরস্থানের জায়গায় জালিয়াতির মাধ্যমে প্লট সৃষ্টি করে স্ত্রীদের নামে বরাদ্দ ও পরে বিক্রি, মিথ্যা নকশা প্রণয়ন, প্লট হস্তান্তর ফি সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে অনুসন্ধানে সত্যতা পাওয়ার পর মামলাটি দায়ের হয়েছে। ‍দুদক মামলাটি তদন্ত করছে।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে কর্মরত সাংবাদিকদের আবাসন সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯৮২ সালে সরকারের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার শেরশাহ এলাকায় ১৬ একর ভূমি বরাদ্দ দেয়, যা চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির অনুকূলে ইজারা নেওয়া হয়। ১৯৯২ সালে সোসাইটির পক্ষ থেকে ১০৯টি প্লটের নকশা অনুমোদনের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কাছে আবেদন করা হয়।

সিডিএ নকশা অনুমোদন করে সোসাইটির তৎকালীন সম্পাদক নিজাম উদ্দিন আহমেদের কাছে হস্তান্তর করে। এরপর সোসাইটির বার্ষিক সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে ১০৮টি প্লট সমিতির সদস্যের বরাদ্দ দেওয়া হয়। একটি প্লট বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানির কার্যক্রম তদারকির জন্য রাখা হয়। ওই ১০৮টি প্লটের মধ্যে সাংবাদিক মাহবুব উল আলম, নিজাম উদ্দিন আহমেদ, শহীদ উল আলম ও নির্মল চন্দ্র দাশ প্রত্যেকে পাঁচ কাঠা পরিমাণের একটি করে প্লট বরাদ্দ ও রেজিস্ট্রি পান।

এরপর ১৯৯৪-৯৭ মেয়াদে সোসাইটির চেয়ারম্যান পদে মাহবুব উল আলম, সম্পাদক পদে নিজাম উদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ পদে শহীদ উল আলম এবং যুগ্ম সম্পাদক পনে নির্মল চন্দ্র দাশ নির্বাচিত হন। তাদের মেয়াদে মূল জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে বলে মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মামলার এজাহারে বলা হয় ১৯৯৪ সালে নির্বাচিতদের মেয়াদে সোসাইটির অনুমোদিত নকশায় মসজিদ ও কবরস্থানসহ পার্শ্ববর্তী সরকারি জমি দখল দেখিয়ে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে বানোয়াট’ নকশা প্রণয়ন করা হয় যাতে সিডিএর কোনো অনুমোদন নেই। পরে নকশা বর্হিভূত তিনটি প্লট তিন সাংবাদিক শহীদ উল আলম, নির্মল চন্দ্র দাশ ও নিজাম উদ্দিন আহমেদের স্ত্রীদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়। যদিও তারা সোসাইটির সদস্য নন। নির্মল দাশের স্ত্রী তপতী দাশ তার নামে বরাদ্দ প্লটটি মো. সেলিমের কাছে এবং শহীদ উল আলমের স্ত্রী তাসলিমা খানম তার নামে বরাদ্দ প্লট হুমায়েরা ওয়াদুদের কাছে বিক্রি করে দেন।

জেলা প্রশাসন সোসাইটিকে ভূমি বরাদ্দের সময় শর্ত দিয়েছিল, বরাদ্দ পাওয়া সম্পত্তি হস্তান্তরের সময় জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে এবং বাজার মূল্যের ২৫ শতাংশ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। কিন্তু ওই তিনজন প্লট গ্রহীতা হস্তান্তর ও বিক্রি করলেও সরকারি কোষাগারে টাকা জমা না দিয়ে আত্মসাত করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।

এ জালিয়াতির ঘটনা নিয়ে পরবর্তীতে সোসাইটি অভ্যন্তরীণভাবে এবং জেলা সমবায় কার্যালয় তদন্তের উদ্যোগ নেয়। তদন্তে জালিয়াতির সত্যতা মেলে। ২০০৪ সালের ৯ ডিসেম্বর জেলা সমবায় অফিসার শুনানি শেষে দেওয়া এক আদেশে তিনটি প্লটের বরাদ্দ অবৈধ ঘোষণা করে তা বাতিল করেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করলেও ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর তা খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট।

২০১৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সোসাইটির বার্ষিক সাধারণ সভায় প্লট জালিয়াতির ঘটনায় মামলা ও পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সিদ্ধান্ত হয়। এর প্রেক্ষিতে পরের বছর চট্টগ্রামের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে সোসাইটির পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। ওই মামলাটি দুদককে অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন