বিজ্ঞাপন

শাহজালালে রফতানি কার্গোতে ঢুকতে পারে না কাস্টম, বাড়ছে চোরাচালান

December 3, 2020 | 7:44 pm

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: কাস্টম আইন অনুযায়ী হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় দায়িত্ব পালনে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ঢাকা কাস্টম হাউজ। কিন্তু বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) অসহযোগিতার কারণে শাহজালাল বিমানবন্দরের রফতানি কার্গো কমপ্লেক্সে ঢুকতে পারে না সংস্থাটি। আর নিতান্তই প্রয়োজন হলে বেবিচকের অনুমতি সাপেক্ষে ভিজিটর পাস নিয়ে প্রবেশ করতে হয় তাদের; যা কাস্টম আইন পরিপন্থী। এদিকে শাহজালালে রফতানি কার্গোতে কাস্টমের দায়িত্ব পালনে ‘বিধি-নিষেধ’ থাকায় বাড়ছে চোরাচালান।

বিজ্ঞাপন

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে মাদক দ্রব্যের দুটি চালান আটক হয় রফতানি কার্গো থেকে; যার বিপরীতে মামলাও হয়েছে। ৯ সেপ্টেম্বর রফতানি কার্গো কমপ্লেক্স থেকে ১৫ কেজি ৬৫৮ গ্রাম আমদানি নিষিদ্ধ মাদক দ্রব্য অ্যাম্ফিটামিন আটক করা হয়। আর ১৬ অক্টোবর ৩৯টি পুটলি থেকে ৩৮ হাজার ৯০০ পিছ ইয়াবা আটক করা হয়, যা বিদেশে যাওয়ার কথা ছিল।

জানা যায়, আটককৃত এসব মাদক যে কৌশলে লুকানো ছিল তা কায়িক পরীক্ষার মাধ্যমে উদঘাটন সম্ভব নয়। কেবলমাত্র স্ক্যানিংয়ের ইমেজ দেখে এ ধরনের লুকানো নিষিদ্ধ পণ্যের অস্তিত্ব বোঝা সম্ভব। এর আগেও গত বছরের ১০ নভেম্বর ঢাকা থেকে যাওয়া একটি ফ্লাইটে ১০টি কার্টনে থাকা ইয়াবা তৈরির কাঁচামাল সিউডোফিড্রিন ধরা পড়ে মালয়েশিয়ায়। বাংলাদেশ হয়ে মাদকের কাঁচামালের ওই চালানটি সেখানে গেলেও সেটি ধরতে পারেনি হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর এভিয়েশন সিকিউরিটি কর্তৃপক্ষ।

অপরদিকে বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবন ও আমদানি কার্গো ভিলেজে দায়িত্ব পালন করলেও বেবিচকের সহযোগিতা না পাওয়ায় রফতানি কার্গো কমপ্লেক্সে ঢুকতে পারছে না কাস্টমস কর্মকর্তারা। ফলে মিথ্যা ঘোষণায় রফতানি, নিষিদ্ধ পণ্য রফতানি ও মুদ্রাপাচারের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। রফতানি কার্গো কমপ্লেক্সের স্ক্যানিং মেশিন রুমে কাস্টমস কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে সহায়তা চেয়ে বিমানবন্দরের পরিচালক ও বেবিচক চেয়ারম্যানকে একাধিকবার চিঠি দিয়েও কোনো সমাধান পাননি ঢাকা কাস্টম হাউজ।

বিজ্ঞাপন

কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, রফতানি কার্গো কমপ্লেক্স একটি কাস্টমস বন্ডেড এলাকা, যা কাস্টমস আইন-১৯৬৯ এর সেকশন-৪ এর মাধ্যমে অত্র এলাকার দায় দায়িত্ব ও কর্তৃব্য পালনের জন্য কাস্টমস কর্মকর্তাদের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে রফতানি কার্গো কমপ্লেক্সে কাস্টমসের কোনো স্ক্যানিং মেশিন নেই। ফলে বিদেশে কী যাচ্ছে এবং স্ক্যানিংয়ের সময় আমদানি নিষিদ্ধ কোন পণ্য বিদেশে গেলেও সেটা জানতে পারে না ঢাকা কাস্টমস।

আরও জানা যায়, বেবিচক থেকে দেওয়া নিরাপত্তা পাসে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের জন্য রেড, ব্লু, ইয়েলো ও গ্রিন জোন অর্থাৎ সবগুলো স্থান ও স্থাপনায় প্রবেশাধিকার রয়েছে। কাস্টমস আইন-১৯৬৯ অনুযায়ী রফতানি কার্গো কমপ্লেক্সে কাস্টম বন্ডেড এলাকাতে হওয়ায় যেকোনো কাস্টম কর্মকর্তা কাজের প্রয়োজনে যেকোনো জায়গায় অবাধে প্রবেশ করতে পারেন। কিন্তু কাস্টমস কর্মকর্তারা রফতানি কার্গো কমপ্লেক্সের স্ক্যানিং এলাকায় প্রবেশ করতে গেলে সরাসারি তাদের ঢুকতে দেওয়া হয় না। বেবিচক কর্তৃক নিয়োজিত নিরাপত্তা কর্মচারীরা জানান, কাস্টমস কর্মকর্তাদের শাহজালাল থেকে পূবার্নুমতি সাপেক্ষে ভিজিটর পাস নিয়ে প্রবেশ করতে হয়। ফলে রফতানি কার্গোতে কাস্টমস কর্মকর্তারা চাইলেও প্রবেশ করতে পারেন না।

এদিকে সিভিল এভিয়েশনের স্ক্যানিং ও কাস্টমসের স্ক্যানিংয়ে রয়েছে বেশ পার্থক্য। বেবিচক কর্তৃক স্ক্যানিংয়ে এভিয়েশন সিকিউরিটি মূল বিবেচ্য বিষয়। আর কাস্টমসের স্ক্যানিংয়ে এভিয়েশন সিকিউরিটিসহ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, চোরাচালান প্রতিরোধ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ, রফতানি নিষিদ্ধ পণ্যের রফতানি প্রতিহতকরণ, রফতানি নিয়ন্ত্রিত পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শর্ত পরিচালন নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি প্রাধান্য পায়। ফলে সিভিল এভিয়েশনের স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে সিকিউরিটি নিশ্চিত করা সম্ভব হলেও শুল্ক কর্মকর্তা না থাকায় কাস্টমস আইন-১৯৬৯ এর বিধি-বিধান এবং রফতানি নীতি আদেশ পরিচালন নিশ্চিত করা হচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমানকে ফোন দেওয়া হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে এ প্রসঙ্গে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদ উল আহসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘রফতানি কার্গো ভিলেজ আমাদের আইকাউ আইন অনুযায়ী এভিয়েশন সিকিউরিটির দেখার কথা। আর বিমান হচ্ছে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলার। রফতানি কার্গো কমপ্লেক্সে পণ্যটি ঢোকার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত কাস্টমসের বিভিন্ন ধাপে চেক হয়ে আসে। কার্গো ভিলেজের সিকিউরিটি চেকের পর পণ্য বিমানে উঠে যায়। আর কার্গো কমপ্লেক্সে পণ্য আসার আগে সব প্রক্রিয়ায় কাস্টমস জড়িত।’

তাহলে স্ক্যানিংয়ের সময় কাস্টমস কর্মকর্তা থাকলে সমস্যা কোথায়?- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে নিয়ম অনুযায়ী কাজ করতে হবে। বিমানবন্দর দেশের আইন অনুয়ায়ী চলে না। এটা আইকাউ আইন অনুযায়ী চলে। আইকাউ আইন অনুযায়ী এখানে কাস্টমস থাকার কথা না। এখানে কাজ করবে এভিয়েশন সিকিউরিটি। এখানে কাস্টমসের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। পুরোটা এভিয়েশন সিকিউরিটির দায়িত্বে। মোটকথা কার্গো কমপ্লেক্সের ভেতরে সবকিছু দেখবে বিমান আর এভিয়েশন সিকিউরিটি। তবে কাস্টমস কখনও কোনো পণ্য চেক করতে চাইলে আমরা অনুমতি দিই। তাই যার যে দায়িত্ব সেটা তাকেই করতে হবে। সবাই সবকিছু করলে তো হবে না।’

এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টম হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মাহবুব সারাবাংলাকে বলেন, ‘নিয়ন্ত্রিত পণ্য বা আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য যাচ্ছে কি-না কিংবা ঘোষণা বহির্ভূত পণ্য যাচ্ছে কি-না সেটা দেখা দরকার। সেইসঙ্গে মাদকদ্রব্য বা অন্য কোনো পণ্য আছে কি-না সেটাও দেখা প্রয়োজন। নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে তারা আমাদের ঢুকতে দেয় না। আমরা চিঠি দিলেও কোন সাড়া পাচ্ছি না। কিন্তু কাস্টম আইন অনুযায়ী সেখানে কাজ করার অধিকার আমাদের রয়েছে। এমনকি সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তা পাস থাকার পরও আমরা রফতানি কার্গোতে যেতে চাইলে ভিজিটর পাস নিয়ে যেতে হয়। কাস্টমস আইন অনুযায়ী, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কিন্তু আমাদের অনুমতি নিয়েই সেখানে যায়।’

মাহবুব বলেন, ‘আইকাউ আইন অনুযায়ী সিভিল এভিয়েশনের এভিয়েশন সিকিউরিটি দেখার কথা। বিমানের ক্ষতি বা বিমানবন্দরের কোনো ক্ষতি হতে পারে এমন কিছু দেখার দায়িত্ব সিভিল এভিয়েশনের। আর আমদানি নিষিদ্ধ কিছু যাচ্ছে কি-না বা ঘোষণা বহির্ভূত কিছু বিদেশে যাচ্ছে কি-না সেটা দেখার দায়িত্ব কাস্টমসের। আমরা চিঠি দিচ্ছি কিন্তু তাদের কোনো সাড়া পাচ্ছি না।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসজে/পিটিএম

Tags: , , , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন