বিজ্ঞাপন

অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ইটভাটা, চলছে প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে

December 4, 2020 | 8:05 am

এমদাদুল ইসলাম ভূট্টো, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

ঠাকুরগাঁও: নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় গড়ে উঠেছে একাধিক ইটভাটা। পরিবেশ অধিদফতর এসব ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দিলেও স্থানীয় প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে সেসব ভাটা পরিচালনা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়রা জানান, পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই কৃষিজমিতে অবৈধভাবে সনাতন পদ্ধতিতে ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন এলাকার আমবাগানের মালিক ও ২ হাজারের বেশি কৃষক। শুধু তাই নয় ইটভাটার কারণে ধ্বংসের পথে খোদ সরকারি দু’টি বড় আমবাগান। প্রতিবছর ওই বাগান থেকে প্রায় ৫ লাখ টাকার সরকারি রাজস্ব আদায় হলেও ইটভাটার কারণে আমের ফলন না হওয়ায় পুরো রাজস্ব আয় বন্ধ হয়ে গেছে।

জানা যায়, জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের আলোকছিপি, বিশ্রামপুর, রায়পুর ও ছোট পলাশবাড়ীতে সরকারি অনুমোদন ছাড়াই মিরাজ-১ ও মিরাজ-২ ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। অথচ সরকারি নির্দেশনা রয়েছে ইটভাটা স্থাপনে পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদন নিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

চলতি বছরে স্থানীয় কৃষক ও আমবাগান মালিকদের বিভিন্ন দফতরে দেওয়া অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে তদন্তও করেছেন পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। পরে গত বছরের ১০ মার্চ রংপুর জেলা পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মেজবাউল আলমের স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে ওই ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে পরিবেশ অধিদফতরকে অবহিত করার জন্য ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

ওই মাসের ১৬ মার্চ রংপুর জেলা পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মেজবাউল আলমের স্বাক্ষরিত আরেক চিঠিতে বলা হয়, বিভাগীয় কার্যালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইটভাটার পাশে বিশ্রামপুর উত্তরপাড়া দাখিল মাদরাসা থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে ‘নিয়ম অনুযায়ী ইটভাটা স্থাপন করা হয়নি’ মর্মে দ্রুত ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধের অনুরোধও জানানো হয়।

তবে পরিবেশ অধিদফতরের দেওয়া এসব পত্রের তোয়াক্কা করেনি ঠাকুরগাঁও প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসন। সেসব নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে করোনাকালেও ভাটায় পোড়ানো হয়েছে ইট। চলতি বছরও পুরোদমে চলছে ইট পোড়ানোর প্রস্তুতির কাজ। আর ভাটার চারপাশে স্তূপ করা হয়েছে কয়েকশ’ টন কাঠের খড়ি।

বিজ্ঞাপন

অপরদিকে, ওই ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে নষ্ট হচ্ছে আবাদি ফসল। প্রতিনিয়ত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন আম বাগানের মালিকরা। নিরুপায় হয়ে প্রায় ৪ একর জমির বাগান কেটে ফেলেছেন এক মালিক।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ঠাকুরগাঁওয়ের ৫টি উপজেলায় শতাধিক ইটভাটা থাকলেও বৈধ কাগজপত্র রয়েছে মাত্র ৩ থেকে ৫টির। তবু প্রতিবছর জেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে এসব ভাটার কার্যক্রম।

কৃষক ও আমবাগান চাষিরা জানান, স্থানীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদফতরসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও কোনো প্রতিকার মিলছে না।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব সরকার বলেন, ‘আমার কাছ থেকে ভাটার মালিক ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে গিয়েছিলেন। তবে ইটভাটার বৈধ কাগজপত্র নেই জানার পর তা ফেরত চেয়েছি।’

তবে এসব ব্যাপারে মিরাজ-১ ও মিরাজ-২ ইটভাটার মালিক দানেশ আলীর সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

উপজেলা কৃষি অফিসার সুবোদ চন্দ্র রায় বলেন, ‘ইটভাটার কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়, ধোঁয়ার কারণে আমের পাতার খাদ্যগ্রহণ ক্ষমতা হারায়। আম ছোট আকারের হওয়াসহ নানা ক্ষতির সম্মুখিন হয়।’ কৃষি এলাকায় ভাটা নির্মাণ আইনে নিষিদ্ধ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ যোবায়ের হোসেন জানান, যদি পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই কোনো ইট ভাটা চলতে পারে না। পরিবেশ অধিদফতর চাইলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।

রংপুর বিভাগের পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মেজবাউল আলম বলেন, ‘আমরা অনেক আগেই ভাটা বন্ধের জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। ভাটার মালিক সে নির্দেশনা না মানলে স্থানীয় প্রশাসন সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।’

সারাবাংলা/এমও

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন