বিজ্ঞাপন

লাইসেন্স বাতিল, তবু বাজারে এসিআইয়ের জৈব সার!

December 4, 2020 | 10:53 pm

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ভেজাল প্রমাণিত হওয়ায় এসিআই বাম্পার জৈব সারের লাইসেন্স বাতিল করেছিল সরকার। কিন্তু সেই সারের উৎপাদন ও বিপণন বন্ধ করেনি এসিআই ফার্টিলাইজার। বহাল তবিয়তেই সেই সার মিলছে বাজারে। খোদ ঢাকাতেও সেটি দেদারসে বিক্রি হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

সারটি যে এখনো বাজারে বিক্রি করে চলেছে, সেটি স্বীকার করে নিয়েছে এসিআই। তাদের ভাষ্য— কৃষি মন্ত্রণালয়ে সারটি বাজারজাত করার ‘আপিল’ করে রাখা হয়েছে। লাইসেন্স বাতিলের প্রক্রিয়া নিয়েও ‘প্রশ্ন’ তুলেছে তারা। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএ) বলছে, লাইসেন্স বাতিল থাকা অবস্থায় কোনো সার বিক্রি করা দণ্ডনীয় অপরাধ। তারা বলছেন, উৎপাদন বন্ধ তো বটেই, বাজারে থাকা সব সারও তাদের আগেই তুলে নেওয়া উচিত ছিল।

জানতে চাইলে এসিআই ফার্টিলাইজারের বিজনেস ডিরেক্টর বশির আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ত্রুটিপূর্ণভাবে আমাদের স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী স্যাম্পল সংগ্রহের সময় কোম্পানির প্রতিনিধি বা স্বাক্ষী রাখতে হয়। কিন্তু কৃষি মন্ত্রণালয় তা করেনি। পরে আমরা লাইসেন্সের জন্য আপিল করেছি। আর আমরা পণ্যটি বাজারজাত করতে পারব না— এমন কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।’

লাইসেন্স বাতিলের আদেশ নিজেই বাজারজাত বন্ধ করার জন্য যথেষ্ট কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী লাইসেন্স বাতিলই করা যাবে না। কিন্তু তারা লাইসেন্স বাতিল করেছে। বিদ্যমান আইনটিই ত্রুটিপূর্ণ। এটি নিয়ে কৃষি মন্ত্রণলায় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মধ্যে চিঠি চালাচালি হচ্ছে। আমরা বিকল্প হিসেবে বাম্পার সারের আরও কয়েকটি লাইসেন্স নিয়ে রেখেছি।’

বিজ্ঞাপন

নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো বলছে, লাইসেন্স বাতিলের পর সেই পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করার কোনো সুযোগ নেই। অথচ সারের ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারটি এখনো বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার মোহাম্মদপুর মোহাম্মদীয়া হাউজিং লি.-এ ‘হৃদয়ে মাটি এগ্রো’ নামের একটি সারের দোকানে দেখা যায় ৫ কেজি ও ১ কেজি ওজনের প্যাকেটে এসিআই বাম্পার জৈব সার বিক্রি করা হচ্ছে।

সারগুলোর উৎপাদনের তারিখ পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এগুলো চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে উৎপাদন করা হয়েছে। এগুলোর মেয়াদ রয়েছে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিলার মো. রাকিব সারাবাংলাকে বলেন, ‘সারটির নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে আমাদেরকে কিছু জানানো হয়নি। যে কারণে আমরা বিক্রি করছি। আর লাইসেন্স যদি বাতিল হয়, তাহলে তো কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ করার কথা। কিন্তু আমরা তো সার অর্ডার করে পাচ্ছি, সমস্যা হচ্ছে না।’

বিজ্ঞাপন

অথচ এসিআই বাম্পার জৈব সারটির নিবন্ধন বাতিল হয়েছে গত বছরের জুন মাসে। জাতীয় সার প্রমিতকরণ কমিটি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে বেশ কয়েকটি জৈব সারের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে নমুনা বিশ্লেষণে ১০টি সার ভেজাল ও নিম্নমানের বলে উঠে আসে। এ কারণে চুকচুক জৈব সার ১০২, চুকচুক জৈব সার ১৫০, মেঘনা জৈব সার, হিসান জৈব সার, অর্কো জৈব সার, এসিআই বাম্পার জৈব সার, মুক্তি জৈব সার, জিটিএস অর্গানিক ফার্টিলাইজার, বোনমিল জৈব সার ও ই ভার্মি কম্পোস্ট সারের লাইসেন্স বাতিল করা হয়। এর মধ্যে বাকি ৯টি সারের দেখা বাজারে না মিললেও এসিআই বাম্পার জৈব সারটি পাওয়া গেছে অনেক দোকানেই।

জাতীয় সার প্রমিতকরণ কমিটি এক চিঠিতে এই ১০টি জৈবসারের লাইসেন্স বাতিল এবং সার (ব্যবস্থাপনা) আইন, ২০০৬ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরকে (ডিএই) নির্দেশ দিয়েছিল। ওই চিঠিতে বলা হয়েছিল, নিবন্ধন ছাড়া জৈবসারগুলো যেন বাজারে বিক্রি করতে না পারে, সেজন্য ডিএই‘র মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মনিটরিং করতে হবে।

জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক (সার ব্যবস্থাপনা) সৈয়দ রফিকুল আমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এসআই তাদের সারের লাইসেন্স ফিরে পেতে কৃষি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে। সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে আমাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ওই চিঠির উত্তর এখনো দেওয়া হয়নি।’

বিজ্ঞাপন

অর্থাৎ এসিআইয়ের সেই ‘আপিল’ এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। ফলে লাইসেন্স বাতিলের আদেশটিই এখনো বহাল রয়েছে। অর্থাৎ সারটি বিক্রি করা হলে সেটি বৈধ হবে না। তবে এসিআই ফার্টিলাইজারের বিজনেস ডিরেক্টর বশির আহমেদ সারাবাংলার কাছে দাবি করেন, তাদের কাছে এই সারের জন্য প্রচুর অর্ডার রয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারাও বাম্পার জৈব সার কিনছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক (সার ব্যবস্থাপনা) সৈয়দ রফিকুল আমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘অবৈধ সার উপজেলা কৃষিকর্মকর্তারা কীভাবে কেনেন, তা আমি বলতে পারব না। এটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস বলতে পারবে।’

মন্তব্য জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘লাইসেন্স বাতিল হলে সার বিক্রি করার প্রশ্নই ওঠে না। অনুমোদন ছাড়া কোনো সারই বিক্রি করা যাবে না।’ অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আইন না থাকলে লাইসেন্স বাতিল করলো কিভাবে? অনুমোদন বিহীন বা লাইসেন্স বাতিল হওয়া সার কোনোভাবেই বিক্রি করা যাবে না। আমরা তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব।’

লাইসেন্স বাতিলের পরও সার বিক্রি করার কোনো সুযোগ আছে কি না— জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি রিয়াজ উদ্দীন আহমেদও সারাবাংলাকে বলেন, ‘লাইসেন্স বাতিলের পর ওই সার উৎপাদন ও বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি সেটা করে থাকে তবে, তার বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর আইনি ব্যবস্থা নেবে। বিষয়টি আমরা নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অবহিত করব।’

সারবাংলা/ইএইচটি/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন