বিজ্ঞাপন

করোনা চিকিৎসায় আইভারমেকটিনের কার্যকারিতা ‘আশাব্যঞ্জক’

December 7, 2020 | 5:26 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্তদের চিকিৎসায় অ্যান্টি-প্যারাসাইটিক ওষুধ আইভারমেকটিনের কার্যকারিতা ‘আশাব্যঞ্জক’ বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইইসিডিডিআর,বি)। করোনায় মৃদু আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে আইভারমেকটিন ও ডক্সিসাইক্লিন একসঙ্গে প্রয়োগের তুলনায় শুধু আইভারমেকটিনের বড় ডোজ পাঁচ দিনব্যাপী প্রয়োগে অধিক কার্যকর ফল পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এটা ছোট আকারে করা একটি গবেষণার ফল। করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসায় এই ওষুধ ব্যবহার করা হবে কি না তার জন্য আরও ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়। সেমিনারে হাসপাতালে ভর্তি নিশ্চিতভাবে মৃদু কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় আইভারমেকটিন এবং আইভারমেকটিনের সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক ডক্সিসাইক্লিন ব্যবহারের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা বিষয়ে গবেষণা ফলাফল তুলে ধরা হয়।

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের পৃষ্ঠপোষকতায় এই গবেষণা পরিচালনা করে আইসিডিডিআর,বি। রাজধানীর তিনটি হাসপাতাল থেকে ৬৮ জন করোনা আক্রান্ত রোগী নিয়ে এই গবেষণা পরিচালিত হয়।

সেমিনারে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. ওয়াসিফ আলী খান। এতে জানানো হয়, আইসিডিডিআর,বি গত ১৭ জুন থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মুগদা জেনারেল হাসপাতালে এই গবেষণা চালায়। গবেষণার আওতায় ৬৮ জন রোগীর মধ্যে ২২ জনকে পাঁচদিন দৈনিক ১২ গ্রাম করে শুধুমাত্র মুখে খাওয়ার আইভারমেকটিন, ২৩ জনকে এক ডোজের আইভারমেকটিনের সঙ্গে ডক্সিসাইক্লিন (২০০ মিলি গ্রাম প্রথমদিন এবং পরবর্তীতে ১০০ মিলি গ্রাম দিনে দুইবার ৪দিন) এবং ২৩ জনকে প্লাসিবো দেওয়া হয়েছে। এটিই দেশের প্রথম র‍্যানডমাইজড কন্ট্রোলড ট্রায়াল (আরসিটি)।

বিজ্ঞাপন

গবেষণার ফলাফল জানাতে গিয়ে ড. ওয়াসিফ আলী খান জানান, ১৪ দিনের মধ্যে পাঁচ দিনব্যাপী যাদের শুধুমাত্র আইভারমেকটিন দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ কোভিড-১৯ জীবানুমুক্ত হয়েছেন, অর্থাৎ আরটিপিসিআর টেস্টে তারা কোভিড-১৯ মুক্ত প্রমাণিত হয়েছেন। আইভারমেকটিন এবং ডক্সিসাইক্লিন প্রয়োগ করা ৬১ শতাংশ এবং প্লাসিবো পাওয়া ৩০ শতাংশ রোগী করোনাভাইরাসমুক্ত হয়েছেন।

গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ওষুধ প্রয়োগের তৃতীয় দিনে শুধুমাত্র আইভারমেকটিন দেওয়া হয়েছে এমন ১৮ শতাংশ, আইভারমেকটিন এবং ডক্সিসাইক্লিন দেওয়া হয়েছে এমন ৩ শতাংশ এবং প্লাসিবো দেওয়া ৩ শতাংশ রোগী ভাইরাসমুক্ত হয়েছেন। সপ্তম দিনে এই ফল ছিল যথাক্রমে ৫০ শতাংশ, ৩০ শতাংশ এবং ১৩ শতাংশ।

২ ডিসেম্বর ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ইনফেকশাস ডিজিজেস, আইজেআইডিতে গবেষণা ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে বলে জানিয়েছে আইসিডিডিআর,বি।

বিজ্ঞাপন

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, মৃদু করোনায় আক্রান্ত এসব রোগীর মধ্যে যারা পাঁচদিন ধরে শুধু আইভারমেকটিন নিয়েছেন তাদের ৭৭ শতাংশ ১৪ দিনের মাথায় করোনামুক্ত হয়েছেন। অন্যদিকে যারা আইভারমেকটিন ও ডক্সিসাইক্লিন নিয়েছেন তাদের ৬১ শতাংশ এবং শুধু প্লাসিডো পাওয়া ৩৯ শতাংশ রোগী করোনামুক্ত হয়েছেন।

ড. ওয়াসিফ আলী খান বলেন, ‘এখানে দেখা গেছে, গবেষণার আওতায় যেসব রোগী অ্যান্টি প্যারাসাইটিক ওষুধ আইভারমেকটিনের পাঁচদিনের কোর্স পেয়েছেন তাদের ভাইরাল ক্লিয়ারেন্স ও রক্তের বিভিন্ন বায়োমার্কারের উন্নতি দেখা গেছে।’

সেইসঙ্গে আইভারমেকটিন প্রয়োগের কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি বলে গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়। এরই মধ্যে এই গবেষণার ফলাফলের ওপর একটি প্রবন্ধ গত ২ ডিসেম্বর জার্নাল অব ইনফেকশাস ডিজিজেস-এ প্রকাশিত হয়েছে বলে গবেষকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

তবে এই গবেষণার ফলাফল এখনই অনুসরণ করা যাবে না বলে সতর্ক করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এবং ট্রিটমেন্ট প্রটোকল কমিটির সদস্য সচিব ডা. আহমেদুল কবীর।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘এটা সীমিত পরিসরে করা একটি গবেষণার ফলাফল। এই ফলাফল দিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হবে না। এর জন্য বড় আকারে গবেষণা করতে হবে। আমাদের এই গবেষণার অর্থ এই নয় যে, এখনই করোনা আক্রান্তরা এই ওষুধ খাওয়া শুরু করবেন। সব ওষুধ চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ও পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে। করোনা মোকাবিলায় ন্যাশনাল গাইডলাইন এবং প্রটোকলের সঙ্গে এটি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এটা এই মুহূর্তে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যাবে না। বরং এই গবেষণা করোনা মোকাবিলায় ন্যাশনাল প্রটোকল ও গাইডলাইনের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান এমপি। তিনি বলেন, ‘করোনার শুরুর দিকে আমরা যে কী করব সেটাই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কারণ এত এত ডাক্তার কেউ জানতো না কী করতে হবে। ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ছিল চিকিৎসকদের সাহায্যে এগিয়ে আসা। তাই শুরু থেকেই বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল এ বিষয়ে কাজ করা শুরু করে। আইভারমেকটিন খুব পুরনো এবং সস্তা একটি ওষুধ। আমাদের মতো দেশে এ ধরনের ওষুধ যদি আসলেই কাজে আসে তাহলে খুব উপকার হবে। সবাই এখন পর্যন্ত ভালো ফলাফলের কথা জানিয়েছে। আমাদের বিশ্বাস এই গবেষণা চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করবে।’

তিনি বলেন, ‘আইভারমেকটিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সহায়তা করতে পেরে আমরা আনন্দিত। এটি কোভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যয় সাশ্রয়ী সমাধান খুঁজে বের করার একটি প্রয়াস। এই গবেষণার সম্ভাবনাময় ফলাফলে আমরা আনন্দিত এবং এটি সত্যিকার অর্থেই কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরও বেশি শক্তি যোগাবে এবং অনেক অকালমৃত্যু এড়াতে সাহায্য করবে।’

অনুষ্ঠানে আইসিডিডিআর,বি’র ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ও নিউট্রিশন অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর ড. তাহমিদ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো নিম্ন ও মাঝারি আয়ের দেশগুলোতে এই মহামারী মোকাবিলায় একটি সাশ্রয়ী ও সহজে ব্যবহারযোগ্য চিকিৎসা ব্যবস্থা খুঁজে বের করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের সাহায্য করার উদ্দেশ্যে শুধু আইভারমেকটিন ব্যবহার করে আরও বড় মাপের একটি ট্রায়াল করার জন্য আমরা সহায়তা সন্ধান করছি।’

এই গবেষণায় সহায়তা করায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, স্বাস্থ্য অধিদফতর, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর, বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল এবং গবেষণায় অংশ নেওয়া হাসপাতালগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান ড. তাহমিদ আহমেদ।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ডা. তারেক আলম, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ড. এম এ হাসনাত এবং মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক ডা. রশিদা ইয়াসমিন, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক আইয়ুব হোসেন, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাব্বুর রেজা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন