বিজ্ঞাপন

করোনায় অর্থনীতিতে আশার আলো দেখিয়েছে রেমিট্যান্স

December 7, 2020 | 8:56 pm

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: করোনার সময় দেশের অর্থনীতিতে আশার আলো দেখিয়েছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে প্রবাসীরা রেকর্ড ১ হাজার ৯৮৯ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় (১ ডলার ৮৫ টাকা ধরে) যা ১ লাখ ৬৯ হাজার ১২৪ কোটি ৫০ হাজার টাকা। প্রবাসীদের পাঠানো এই রেমিট্যান্স বাংলাদেশের ইতিহাসে যেকোনো অর্থবছর কিংবা পঞ্জিকা বছরের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র এসব তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে প্রবাসীরা ১ হাজার ৮৩৩ কোটি মাকির্ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়। বাংলাদেশের ইতিহাসে যা ছিল এক বছরে সর্বোচ্চ। এছাড়া ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার। কিন্তু চলতি বছরের এগারো মাসে প্রবাসীরা রেকর্ড ১ হাজার ৯৮৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর করোনা সংক্রমণ রোধে মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে জুন পর্যন্ত টানা ৬৬ দিন সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এই অবস্থায় বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের অর্থনীতি বেসামাল হয়ে পড়ে। বেসরকারি খাতে কর্মী ছাঁটাই, বেতন কমানো এবং অনেক প্রতিষ্ঠান স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়ে লাখ লাখ মানুষ। এতে মানুষের আয় কমে যায়। ফলে অনেক মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে দিকে ছোটে। এই অবস্থায় প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে আশার আলো সঞ্চার করেছে। তবে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের উর্ধ্বগতি ধরে রাখাটাই সামনে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনাকালে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা রেখেছে এই রেমিট্যান্স।’

তিনি বলেন, ‘প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাড়ার পেছনে বেশকিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- অনেক প্রবাসী করোনার কারণে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। এ কারণে তাদের সঞ্চিত অর্থও দেশে নিয়ে আসছেন। ফলে গত মে মাস থেকে রেমিট্যান্স বাড়ছে এবং তা এখনও অব্যাহত রয়েছে। তবে এই অবস্থা কতটা টেকসই হবে সেটাই বড় কথা। কারণ সারাবিশ্বে করোনার দ্বিতীয টেউ শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় রেমিট্যান্স প্রবাহ ধরে রাখাটাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ।’

অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনার ধাক্কা সারাবিশ্বের অর্থনীতি টালমাটাল অবস্থা। ইতোমধ্যে করোনার দ্বিতীয় টেউ শুরু হয়ে গেছে। এই অবস্থায় প্রবাসীরা তাদের হাতে থাকা সঞ্চয় ধরে রাখা নিরাপদ মনে করছেন না। ফলে অনেকেই তাদের কাছে থাকা সব সঞ্চয় দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এতে করে গত মে মাস থেকে রেমিট্যান্স বাড়ছে। তবে এটা কতদিন বহাল থাকে সেটাই বড় কথা।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘যে কারণেই হোক না কেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার কারণে করোনাকালীন রেমিট্যান্স বেড়ে যাওয়ায় দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।’

২০২০ সালের ১১ মাসে রেমিট্যান্স

চলতি বছরে ১১ মাসে (জানুয়ারি থেকে নভেম্বর) প্রবাসীরা ১ হাজার ৮৮৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে বছরের প্রথম ছয় মাস (জানুয়ারি থেকে জুন) রেমিট্যান্স এসেছে ৮৯৯ কোটি ৩ লাখ ডলার। আর জুলাই থেকে নভেম্বর এই পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ ১ হাজার ৯০ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রবাসীরা রেকর্ড ১৬৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়। কিন্তু প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের এই ঊর্ধ্বগতি ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে কমতে শুরু করে। গত ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স আসে ১৪৫ কোটি ২০ কোটি ডলার, মার্চে ১২৮ কোটি ৬০ লাখ এবং এপ্রিলে ১০৪ কোটি ১০ লাখ ডলার। এরপর মে মাস থেকে রেমিট্যান্স বাড়তে শুরু করে। গত মে মাসে রেমিট্যান্স আসে ১৭৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার এবং জুনে তা আরও বেড়ে ১৮৩ কোটি ১০ লাখ ডলারে উন্নীত হয়।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে চলতি বছরের জুলাই মাসে প্রথমবারের মতো রেমিট্যান্স ২০০ কোটি ডলার ছাড়ায়। ওই মাসে প্রবাসীরা রেকর্ড ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়, যা এখন পর্যন্ত এক মাসে সর্বোচ্চ। এরপর আগস্টে রেমিট্যান্স কিছুটা কমে যায়। এ মাসে রেমিটেন্স পাঠানোর পরিমাণ ছিল ১৯৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে তা আবার বেড়ে ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলারে উন্নীত হয়। গত অক্টোবরে ২১১ কোটি ২০ লাখ ডলার এবং সদ্য বিদায়ী নভেম্বর মাসে রেমিট্যান্স আসে ২০৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

অর্থবছরভিত্তিক রেমিট্যান্স

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবাসীরা রেকর্ড ১ হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৬৩১ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার।

পঞ্জিকা বছরভিত্তিক রেমিট্যান্স

পঞ্জিকা বছর হিসাবে, ২০১৯ সালে প্রবাসীরা ১ হাজার ৮৩৩ কোটি মাকির্ন ডলার রেমিট্যান্স আসে। বাংলাদেশের ইতিহাসে যা ছিল এক বছরে সর্বোচ্চ। কিন্তু চলতি বছরের এগারো মাসে প্রবাসীরা রেকর্ড ১ হাজার ৯৮৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর আগে ২০১৮ সালে ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৩৫৩ কোটি ডলার, ২০১৬ সালে ১ হাজার ৩৬১ কোটি ডলার এবং ২০১৫ সালে ১ হাজার ৫৩১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আসে।

উল্লেখ্য, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটির বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স জিডিপিতে অবদান রেখেছে ১২ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর শীর্ষ ১০টি দেশ হলো, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ওমান, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, কাতার, সিঙ্গাপুর ও ইতালি।

সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন