বিজ্ঞাপন

প্রবাসেও চলে অস্তিত্বের লড়াই

December 10, 2020 | 3:35 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকেই অস্তিত্বের সংকট অনুভব করেন। নিজস্ব অস্তিত্ব আর পরিচয়কে ঘিরে তাদের লড়াই চলে। প্রবাসেও লড়াই করে জায়গা তৈরি করে নিতে হয়। নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্য যখন অন্য জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে প্রশংসিত হয় কিংবা অন্যরা যখন বাংলাদেশিদের সংস্কৃতি অনুকরণ করে – সেই মুহুর্তগুলোতে বিজয়ের আনন্দ হয়।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৯ ডিসেম্বর) সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সারাবাংলা’র সরাসরি বিশেষ আয়োজন সারাবাংলা ফোকাসে অংশ নিয়ে আলোচকরা এমন অভিমত জানিয়েছেন।

এদিকে, ‘প্রবাসে বিজয় উদযাপন’ এর আবেগ, অনুভূতি এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে এই পর্বের আলোচনা জমে উঠেছিল। সারাবাংলা’র স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট এমএকে জিলানীর সঞ্চালনায় ওই আয়োজনে যুক্ত হয়েছিলেন জর্ডানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ফ্রান্স সংসদের সভাপতি করিন্ময় মন্ডল, কানাডা প্রবাসী সংস্কৃতিকর্মী এবং রেজিস্টারড ডায়েটিশিয়ান নাঈমা সিদ্দিক।

ওই ভার্চুয়াল আলোচনায় যুক্ত হয়ে জর্ডানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান বলেন, সব দেশের মানুষই অনুভব করতে পারছেন করোনার কারণে কী ধরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। মহামারি মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য এবং অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আর যখন কোনো ক্রাইসিস শুরু হয় তখন তার বিরূপ প্রভাব সবার আগে অভিবাসীদের ওপর পড়ে।

বিজ্ঞাপন

জর্ডানের চিত্রও একই রকম। শুধু জর্ডানই নয় এই পুরো ক্ষেত্রটা নিয়ে চিন্তা করলেও একই ফলাফলে পৌঁছা যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানাভাবে অভিবসীদের ওপর চাপ বাড়ানো হচ্ছে – বলেন নাহিদা সোবাহান।

তিনি বলেন, দূতাবাস জর্ডানপ্রবাসী বাংলাদেশিদের পাশে দাঁড়াতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। এখন সেখানে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ চলমান। মাঝে যে অবস্থা ছিল এখন তার চেয়েও নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।

এর মধ্যেও, দূতাবাসের পক্ষ থেকে প্রবাসীদের স্বাস্থ্য এবং চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। জর্ডানে যারা কাজদাতা রয়েছেন তাদের সঙ্গে দূতাবাস যোগাযোগ করছে। যদিও, সেই কার্যক্রম চালাতে গিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতার (যেমনঃ ২০ জনের বেশি একত্রিত হওয়া যাবে না, কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে) মুখোমুখি হতে হচ্ছে – জানান জর্ডানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ডিসেম্বর বিজয় আর গৌরবের মাস। স্পিরিটের বড় একটি অংশ। অন্যান্য বছরগুলোতে বিজয়ের মাস উপলক্ষে হোস্ট কমিউনিটি আর অভিবাসীদের নিয়ে বড় আয়োজন করে দূতাবাস। এ বছর স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় সে রকম কোনো আয়োজন রাখা হচ্ছে না। সীমিত পরিসরে, ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে হয়তো বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা সারা হবে।

রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবাহান বলেন, জর্ডান খুব লিবারেল দেশ। সেখানে বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

অন্যদিকে, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ফ্রান্স সংসদের সভাপতি কিরন্ময় মন্ডল বলেন, করোনায় ফ্রান্স যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত। সেখানে, বাংলাদেশি একজন সংস্কৃতিকর্মী পাঁচ মাস ধরে আইসিইউতে ভর্তি। যদিও ফরাসি সরকার তার চিকিৎসা প্রক্রিয়া নজরদারি করছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন ফোরামের মাধ্যমে অনেককে অর্থনৈতিকভাবেও সহযোগিতা করা হয়েছে।

এছাড়াও, ফ্রান্সে এক বাসার মধ্যে অনেক বাংলাদেশি একসঙ্গে থাকেন। তাদের মধ্যে কেউ করোনা আক্রান্ত হলে প্রথমদিকে কাউকে তার সঙ্গে থাকতে দেওয়া হয়নি। সে সময় বাকিদের থাকার, তাৎক্ষণিকভাবে অনেককে কাজ পাইয়ে দেওয়ার, ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থা এবং সর্বস্তরে সচেতনতা তৈরিতে ফ্রান্সে বসবাসরত বাংলাদেশিরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন – জানান কিরন্ময় মন্ডল।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ফ্রান্সে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে প্যানিক কিছুটা কমে গেছে। ভয় না পেয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়াই এখন সবচেয়ে বড় ব্যাপার।

নিজস্ব অস্তিত্ব আর পরিচয়কে ঘিরে আলাদা একটা জায়গা তৈরির জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয় – ফ্রান্সে যাওয়ার পর থেকে কিরন্ময় মন্ডল বিষয়টি ভীষণভাবে অনুভব করতে পেরেছেন বলে জানান। ওই অনুভূতি থেকেই তাদের প্রতিটি কাজকর্ম বদলে গেছে। এখানে, তিনি একা নন। বাংলাদেশিদের অনেক সংগঠন রয়েছে। তারা নিজস্ব শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রসারে কমিউনিটির মধ্যে জোরাল ভূমিকা রাখছেন।

পাশাপাশি, দূতাবাসও যথেষ্ট চেষ্টা করছে। প্রতি বছরই বিভিন্ন আয়োজনে তাদের পক্ষ থেকে সহায়তা পাচ্ছেন অভিবাসীরা। কিন্তু, নিজেদের মর্যাদা নিজেরা অর্জন করে নিতে ফ্রান্সে অনেক স্ট্রাগল করতে হয়। অন্যান্য দেশে চিত্র হয়তো কিছুটা ভিন্ন – যোগ করেন উদীচী’র ফ্রান্স সংসদ সভাপতি।

তিনি আরও বলেন, ফ্রান্সে যাওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশিদের কমিউনিটিতে ধরনের অস্বস্তি দেখে আসছেন। তারা হয়তো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করছে, সেখানে সামান্য কিছু মানুষ জড়ো হয়। ফরাসিরা ওইসব আয়োজনে আসে না। সাংস্কৃতিক বিস্তার নিশ্চিত করতে বিভিন্ন আয়োজনের সঙ্গে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে সম্পৃক্ত করার বাংলাদেশিদেরকেই দায়িত্ব নিতে হবে।

প্রবাসী সাংস্কৃতিক কর্মী কিরন্ময় বলেন, ফ্রান্সে সর্বসাকুল্যে ১১৮ জাতির বসবাস। এতো মানুষ, এতো ভাষা, তাদের সঙ্গে লড়াই করে বাংলাদেশকে টিকে থাকতে হবে। সেই চিন্তা থেকেই কাজ করে যাচ্ছেন তারা।

যেমনঃ স্বাধীনতা সংগ্রামের ওপর নির্মিত জহির রায়হানের ডকুমেন্টারি ‘স্টপ জেনোসাইড’ ফরাসি ভাষায় সাবটাইটেল করে প্যারিসের মেয়র এবং রাষ্ট্রদূতের উপস্থিতিতে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেন তারা। সেখানে এক ধরনের জাতিভিত্তিক সাংস্কৃতিক বিনিময় সম্পন্ন হয়।

এছাড়াও, একুশের চেতনা এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে থাকে। ফ্রান্সের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় তাদের কাজগুলো পছন্দ করছে। মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগেই সমগ্র ফ্রান্সে বাংলাদেশিদের কাজগুলো ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে – বলে জানিয়েছেন কিরন্ময় মন্ডল।

ওদিকে, কানাডাপ্রবাসী সংস্কৃতিকর্মী এবং রেজিস্টারড ডায়েটিশিয়ান নাঈমা সিদ্দিক আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, কানাডা সরকার করোনা মহামারির ব্যাপারে সবসময় সঠিক তথ্য প্রকাশ করায় সেখানে কোনো অবস্থায়ই প্যানিক সৃষ্টি হয়নি। সরকারি সকল নির্দেশনা এবং পরিসংখ্যানের ব্যাপারে আগে থেকেই কানাডাবাসীদের অগাধ আস্থা, করোনাকালে তা আরও বেড়েছে। স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা তাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সর্বোপরি, কানাডার মহামারি পরিস্থিতি লাগামছাড়া না হওয়ার পেছনে রয়েছে সরকারি নজরদারি এবং স্বচ্ছ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।

তিনি আরও বলেন, কানাডাপ্রবাসী বাংলাদেশিরাও সঙ্গত কারণেই নির্ভার এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা পরিবেষ্টিতই ছিলেন। তারপরও, বাংলাদেশি কমিউনিটির যারা আক্রান্ত হয়েছেন তারা নজিরবিহীন চিকিৎসা প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে সেরে উঠেছেন।

এর মধ্য দিয়ে সারাবাংলা ফোকাস বুধবারের (৯ ডিসেম্বর) আয়োজন ‘প্রবাসে বিজয় উদযাপন’ নিয়ে প্রাণবন্ত আলোচনা শেষ হয়।

প্রসঙ্গত, সারাবাংলা ফোকাস সপ্তাহের প্রতি শনি, সোম এবং বুধবার সন্ধ্যা সাতটা ৩০ মিনিটে সারাবাংলা ডট নেটের ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে লাইভ সম্প্রচারিত হয়।

সারাবাংলা/ইএইচটি/একেএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন