বিজ্ঞাপন

জামিন পাননি পাপুলের স্ত্রী-মেয়ে, ব্যাংক কর্মকর্তাকে তলব

December 10, 2020 | 9:18 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: লক্ষ্মীপুরের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম ও মেয়ে ওয়াফা ইসলামের জামিন আবেদন খারিজ করে আগামী ১০ দিনের মধ্যে তাদেরকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত একইসঙ্গে সেলিনা ইসলাম ও মেয়ের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ প্রতীয়মান হয়নি মর্মে প্রতিবেদন দেওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-পরিচালক মো. আরেফিন আহসান মিঞাকে আগামী ৪ জানুয়ারি আদালতে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন। আদালত এ বিষয়ে রুলও জারি করেছেন।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে শুনানি করে আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। জামিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার ও আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

আদালতের আদেশের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি শহিদ ইসলাম পাপুলের স্ত্রী সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম ও মেয়ে ওয়াফা ইসলামের আগাম জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। তাদেরকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলেছেন।’

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-পরিচালক মো. আরেফিন আহসান মিঞার স্বাক্ষরিত একটি প্রতিবেদন এদিন আদালতের নজরে আনা হয়। যেখানে তিনি আসামিদের এফডিআর এবং ঋণের টাকার ক্ষেত্রে অর্থপাচার না হওয়ার কথা জানালে আদালত আরেফিনকে আগামী ৪ জানুয়ারি হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলেন। এবং কোন কর্তৃত্ববলে তিনি ওই প্রতিবেদন দিয়েছেন সে বিষয়ে ব্যাখ্যা উপ-পরিচালককে দিতে বলেছেন।’

‘একইসঙ্গে দুদকের মামলা তদন্ত হওয়ার আগেই তাদের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ প্রতীয়মান হয়নি মর্মে প্রতিবেদন দেওয়ায় স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। ফাইনানসিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট ও বাংলাদেশ ব্যাংককে রুলের জবাব দিতে হবে। এ ছাড়া আগামী ৪ জানুয়ারি আদালতে শ্বশরীরে উপস্থিত হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালককে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালক মো. আরেফিন আহসান মিঞা দুদকের অভিযোগ পর্যালোচনা করে মতামত দেন বলে তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন।

তিনি আদালতে দেওয়া তার মতামতে বলেন, ‘পরিদর্শনে প্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, হাতিরপুল শাখার গ্রাহক জেসমিন আক্তারের এফডিআর এর বিপরীতে দুইটি ঋণ দিয়েছেন এবং ইতোমধ্যে পরিশোধ করেছেন। এখানে উল্লেখিত এফডিআর এর টাকার ব্যবহারের ব্যাপারে সঠিক ধারণা পাওয়া যায়। আলোচ্য ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং সংগঠত হতে পারে মর্মে প্রতীয়মান হয়নি। অতএব উক্ত অভিযোগটি এই বিভাগের তরফ থেকে নথিভুক্তির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যেতে পারে।’

অভিযোগ পর্যালোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘ঋণের সুবিধাভোগী হিসেবে ওয়াফা ইসলাম, সেলিনা ইসলামের নাম আসলেও মূল তাদের এফডিআর এর বিপরীতে ঋণ সুবিধা নেওয়া হয়। অত্র শাখায় ইস্যুকৃত উল্লিখিত দুটি ঋণের জামানত হিসেবে গৃহীত ৩৭৯টি এফডিআর এর গ্রাহক মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম, সেলিনা ইসলাম, ওয়াফা ইসলাম ও জেসমিন প্রধান (সাংসদ পাপুলের শ্যালিকা) এর এফডিআর এ বিনিয়োগকৃত টাকার উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আবার ঋণ হিসাব থেকে কোন কোন খাতে অর্থ ট্রান্সফার করা হয়েছে অথবা মানিলন্ডারিং হয়েছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত করা যায়নি।’

এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সারাবাংলা বলেন, ‘এমপি পাপুলের স্ত্রী-কন্যার জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়ে তাদেরকে ১০ দিনের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলেছেন হাইকোর্ট।’

বিজ্ঞাপন

ব্যাংক কর্মকর্তার বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, “আসামিদের নথি-পত্র বলছে। তারা একটি হিসাব থেকে আরেকটি হিসেবে গোপনে অর্থ স্থানান্তর করেছেন। সেখানেই মানিলন্ডারিং হওয়ার ‘প্রশ্নটি’ এসেছে।”

তিনি আরও বলেন, ‘আদালত একই সঙ্গে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেছেন। ফাইনানসিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট ও বাংলাদেশ ব্যাংককে ওই রুলের জবাব দিতে হবে। এবং ব্যাংক কর্মকর্তাকে আগামী ৪ জানুয়ারি তার প্রতিবেদনের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে তলব করেছেন।’

জানতে চাইলে আসামিদের আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আদালতে আমরা নারী এমপি সেলিনা ইসলাম ও তার মেয়ে ওয়াফা ইসলামের আগাম জামিন চেয়েছিলাম। আদালত নির্দেশনা দিয়ে আসামিদের ১০ দিনের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলেছেন। যদিও আমরা আত্মসমর্পণের জন্য জানুয়ারি পর্যন্ত সময় চেয়েছিলাম। আদালত আমাদের সে আবেদন খারিজ করেছেন।’

এর আগে গত ২৬ নভেম্বর অবৈধ সম্পদ অর্জন ও টাকা পাচারের অভিযোগের মামলায় কুয়েতে গ্রেফতার লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপুলের স্ত্রী সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম ও মেয়ে ওয়াফা ইসলাম হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন।

তারও আগে গত ১১ নভেম্বর দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন বাদী হয়ে ২ কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ ও ১৪৮ কোটি টাকার অর্থ পাচারের অভিযোগে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুল ও তার স্ত্রী সংরক্ষিত আসনের এমপি সেলিনাসহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন পাপুল, তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও সেলিনার বোন জেসমিন প্রধান।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, পাপু্লের শ্যালিকা জেসমিন প্রধান ‘লিলাবালি’ নামের একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।ওই প্রতিষ্ঠানের আড়ালে পাঁচ ব্যাংকের মাধ্যমে ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১৪৮ কোটি টাকা হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং করেছেন।

শিক্ষার্থী থাকাবস্থায় বোন সেলিনা ইসলাম ও দুলাভাই শহিদ ইসলাম পাপুলের অবৈধ অর্জিত অর্থ মানি লন্ডারিং করে বৈধতায় রূপ দিতে ওই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন জেসমিন।

বিভিন্ন ব্যাংকে জেসমিনের ৪৪টি হিসাব পাওয়া গেছে। যেখানে শুধুমাত্র এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকেই রয়েছে ৩৪টি এফডিআর হিসাব। আসামি শহিদ ইসলাম পাপুল এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন বিধায় এই সুবিধা গ্রহণ করতে তার কোনো বেগ পেতে হয়নি।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচারসহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত উপায়ে শত শত কোটি টাকা অর্জন করে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।

পরে পাপুলের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে গত ২২ জুলাই সেলিনা ইসলাম ও জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। পর তাদের চার জনের সব হিসাব স্থগিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেয় দুদক।

চলতি বছরের ৭ জুন মানবপাচার, ভিসা জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুলকে গ্রেফতার করে কুয়েতের পুলিশ। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই আছেন। আগামী ২৮ জানুয়ারি পাপুলের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার রায় দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

সারাবাংলা/কেআইএফ/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন