বিজ্ঞাপন

আরও ৬ মাস বাড়ানো হয়েছে ‘ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের’ মেয়াদ

December 13, 2020 | 2:57 pm

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: অনলাইন ভ্যাট ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে ২০১৩ সালে শুরু করা হয় ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের কাজ। যা চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ। এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির মাত্র এক তৃতীয়াংশ কাজও শেষ হয়নি।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৭ শ কোটি টাকার এই প্রকল্পের উদ্দেশ্যে অনলাইনে নিবন্ধন, ভ্যাট জমা দেওয়াসহ ১৬ ধরনের সেবা দেওয়া। আর ভ্যাট অনলাইনের কাজ করছে ভিয়েতনামের প্রতিষ্ঠান এফপিটি ইনফরমেশন সিস্টেম। প্রকল্পের আওতায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দেড় শতাধিক কর্মকর্তাকে ভিয়েতনামে কারিগরি এবং ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা। তবে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ হলেও এখনো কারিগরি কোনো দক্ষ জনবল তৈরি হয়নি এনবিআরে। শেষ মুহূর্তে ঢাকায় ৩০ কর্মকর্তাকে কারিগরি প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ভিয়েতনামের এফপিটি ইনফরমেশন। কিন্তু এর মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংশ্লিষ্ঠ শাখা।

এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট কাজী মুহাম্মদ জিয়াউল হক ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প পরিচালককে একটি চিঠি দেন চলতি বছরের ১ অক্টোবর। একইসঙ্গে সেই চিঠির অনুলিপি দেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সিস্টেম ম্যানেজার ও ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালককে। চিঠিতে বলা হয়, ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের মেয়াদ আগামী ডিসেম্বরে শেষ হবে। সেজন্য ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের কার্যক্রমকে গতিশীল রাখার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আইসিটি অনুবিভাগের কর্মকর্তাগণকে এসএপি এর ওপর ৪৪ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘প্রশিক্ষণের ১৫দিন অতিবাহিত হলেও প্রশিক্ষর্ণার্থীদেরকে সফটওয়্যার ব্যবহারের জন্য ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দেওয়ার কথা থাকলেও সেটা ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে প্রাকটিসের সুযোগ পাচ্ছেন না প্রশিক্ষণার্থীরা। এমনকি কার্যকারিতা নেই এমন পাসওয়ার্ড সরবারহ করে প্রতিনিয়ত কর্মকর্তাদের বিভ্রান্তিতে ফেলা হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

এনবিআর সূত্র জানায়, বিশ্বের ১২৪টি দেশে অনলাইনে ভ্যাট দেওয়ার ব্যবস্থা চালু আছে। বাংলাদেশেও ২০১২ সালের ২৭ নভেম্বর মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন-২০১২ পাস হয়। এরপর ভ্যাট ব্যবস্থাপনাকে সম্পূর্ণ অটোমেশনের আওতায় এনে ভ্যাট প্রশাসনকে শক্তিশালী ও আধুনিকায়ন করা, ভ্যাট আদায় বৃদ্ধিপূর্বক ভ্যাট জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে বর্তমানের চেয়ে এক শতাংশ বৃদ্ধি করাসহ ভ্যাট কমপ্লায়েন্সের জন্য বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ২০১৩ সালে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।

নতুন আইন বাস্তবায়নে ৫৫১ কোটি টাকার এ প্রকল্প নেওয়া হয়। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় ধরা হয় ১০১ কোটি টাকা এবং বাকি ৪৫০ কোটি টাকার জোগান দেবে বিশ্বব্যাংক।

এর আগেও ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বর করা হয়েছে। এছাড়া ব্যয় ১৩৯ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৬৯০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ভ্যাট অনলাইনের কাজে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে ভিয়েতনামের এফপিটি ইনফরমেশন সিস্টেম নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

গত ১২ অক্টোবর প্রকল্প থেকে এনবিআর চেয়ারম্যানকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। যাতে বলা হয়, ৩১ ডিসেম্বর প্রকল্প মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আইভাস সিস্টেমটি এনবিআরে হস্তান্তর করা প্রয়োজন। হস্তান্তর ও পরবর্তী সময়ে আইভাসের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে জরুরিভিত্তিতে কিছু পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে, আইভাস সিস্টেম সচল রাখার জন্য ৬০০ এমবিপির ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ সরবরাহ নিশ্চিত করতে নেটওয়ার্ক সরবরাহকারী নিয়োগ করা ও ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ রাখা।

তবে, আইভাস সিস্টেমের হার্ডওয়্যারের মেয়াদ চলতি বছরের ২১ মার্চ শেষ হয়ে গেছে। প্রকল্প থেকে এরই মধ্যে সফটওয়্যারের মেয়াদ ২০২১ সালের ২১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে হার্ডওয়্যারগুলো অনেক পুরোনো বলে রিপ্লেসমেন্ট করার চিন্তা করা হয়েছে, সেজন্য পদক্ষেপ নেওয়া ও বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন।

আরও বলা হয়, এনবিআরের সঙ্গে ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান এফপিটি ইনফরমেশন সিস্টেমের মধ্যে ‘সাপোর্ট সার্ভিস’ চুক্তি করা, আইভাস সিস্টেমের ওপর এনবিআরের আইটি কর্মকর্তাদের সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়ার কার্যক্রম প্রকল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। তবে এত অল্প প্রশিক্ষণে এত বড় সিস্টেম সচল রাখা সম্ভব নয়। ফলে এফপিটি ইনফরমেশন সিস্টেমের সঙ্গে একটি সাপোর্ট সার্ভিস চুক্তি করা প্রয়োজন। এর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ ও বরাদ্দ রাখা দরকার।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘প্রকল্পটির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। ছয় মাসের মধ্যে সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। যেগুলো মডিউল শেষ হয়নি, সেগুলো শেষ হবে।’

কতগুলো মডিউল শেষ হয়েছে, জানতে চাইলে বলেন, ‘আমার কাছে তো তালিকা থাকে না, তাই পুরোপুরিভাবে বলতে পারছি না।’

সারাবাংলা/এসজে/এমআই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন