বিজ্ঞাপন

ভাস্কর্যবিরোধী ‘রাজনৈতিক মোল্লাদের’ গ্রেফতার-বিচার দাবি ১৪ দলের

December 13, 2020 | 5:21 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যের ওপর আঘাত, জাতির ওপর আঘাত। এটা জাতির জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। তাই জাতিকে আবারও এই মৌলবাদী অপশক্তিকে প্রতিহত করার জন্য দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে একাত্তরের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতারা।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের উদ্যোগে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস স্মরণে এক আলোচনা সভায় নেতারা এসব কথা বলেন।

আলোচনা সভায় নেতারা আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরকারী রাষ্ট্রদ্রোহী রাজনৈতিক মোল্লারা সংবিধানের বিরুদ্ধে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করার যে অন্যায় করেছে, তার প্রতিকার হিসেবে তাদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় এনে সাজা প্রদানের দাবি জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতারা।

সভায় সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতারা। সভা পরিচালনা করেন, আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।

বিজ্ঞাপন

১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে দেশকে পাকিস্তানি ভাবধারার রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে আমির হোসেন আমু বলেন, ‘যারা সেদিন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিল, সরাসরি গণহত্যায় লিপ্ত ছিল। তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে সামাজিকভাবে অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে জিয়াউর রহমান কাজ শুরু করেছিলেন। এরশাদের ধারাবাহিকতায় পরবতীতে খালেদা জিয়াও যখন তাদেরকে নিয়ে জোট গঠন এবং মন্ত্রীসভায় ঠাঁই দিয়ে সেই কাজগুলি করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজকেও আমরা লক্ষ্য করছি বিজয় দিবসের প্রারম্ভে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে তাদের এই কর্মকাণ্ড। ভাস্কর্যের ওপর আঘাত জাতিসত্তার ওপর আঘাত, বাংলাদেশের সংস্কৃতির ওপর আঘাত, শিল্প-কর্মের ওপর আঘাত এবং বাঙালির ঐতিহ্যের ওপর আঘাত। যেটা তারা প্রথম থেকে চেয়েছিল। ২১ শে ফ্রেবুয়ারি এই দেশে চেয়েছিল উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করতে, বাংলা ভাষাকে আরবি হরফে লেখার অপকৌশল তারা পাকিস্তান আমল থেকে করে আসছে। আজকেও তারা ঠিক এমনি ভাবে বিজয়ের দিবসে মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ওপর আঘাত করেছে। যে হেফাজতের যে নেতারা যারা আজকে আন্দোলন করছেন তাদের নাকের ডগায় চট্টগ্রামে কিন্তু ৩০ বছর ধরে জিয়াউর রহমানের ভাস্কর্য। সেটি নিয়ে তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই, কথাবার্তা নেই। সেটি নিয়ে এতোদিন তারা চুপচাপ রয়েছে। আজকে তারা ইসলাম ইসলাম করছে। বিভিন্ন মাদরাসার শিক্ষকরা যেভাবে তাদের ছাত্রীদের সম্ভ্রমহানি করছে, সেই ব্যাপারে তাদের কোনো বক্তব্য নাই। সেই ব্যাপারে তাদের কোনো চিন্তাভাবনা নাই। তারা কোনো কথা বলেন না।’

আজকে এই সাম্প্রদায়িক শক্তি, যেটা উত্থান হয়েছিল বঙ্গবন্ধু হত্যার পর উল্লেখ করে আমু বলেন, ‘সেই থেকেই এই উত্থান এবং তার পরবর্তীতেও রাস্তায় রাস্তায় দেখেছিলাম কোরআনের আয়াত লেখা হয়েছিল এবং আবার জিয়াউর রহমানের আমলে যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এদেশে আসার কর্মসূচি হল তখন অনেকগুলি রাস্তার দুই পাশ থেকে এগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। সুতরাং এরা যে সুবিধাবাদী, এরা যে সময়োপযোগী কথা বলে ধর্মকে ব্যবহার করে। এরা ধর্ম ব্যবসায়ী হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। আজকেও তারা এই ধর্মকে ভাস্কর্যের কাজে আনতে চায়। অথচ তাদের বিভিন্ন শোপিসে দেখা যাবে, বিভিন্ন ভাস্কর্য রয়েছে। তাতে কিন্তু তাদের ইসলাম যায় না। তাদের এই ধরনের কর্মকাণ্ডগুলো নিশ্চয়ই দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড, সংস্কৃতিবিরোধী কর্মকাণ্ড, শিক্ষার বিরুদ্ধে কর্মকাণ্ড।’

বিজ্ঞাপন

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করে আমু বলেন, ‘সেই সময়ও বুদ্ধিজীবীরা বিভিন্ন সময় বিবৃতি দেন, বিবৃতি দেওয়ার মধ্য দিয়েই কিন্তু তারা তাদের কাছে শক্তি হিসাবে চিহ্নিত ছিলেন। চিহ্নিত ছিলেন বলেই সময় সুযোগ মতো তাদের হত্যা করা হয়।’

আমু বলেন, ‘আজকে সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে আপস করে চলা যাবে কি, যাবে না? আমাদের দেশ, আমরা সবাই ধর্মে বিশ্বাস করি। আমরা ধর্মকর্ম করি। কিন্তু তার মানে এই না ধর্মান্ধতার মধ্য দিয়ে আমাদেরকে বিপথগামী করা যাবে বা বিপথগামী করার চেষ্টা হলে এটা আমরা মেনে নিবো। এটা আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারি না, এটা মেনে নিতে পারি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা ধর্মকে নিয়ে রাজনীতি করছেন তারাও কিন্তু এক এবং অভিন্ন নয়। তাদের মধ্যে বিভিন্ন দল রয়েছে? তারা কেন এক হতে পারেন না। তাদের মধ্যে কেন অনৈক্য? পৃথিবীতে তাদের মধ্যে কেন এতো হানাহানি, আবার কেউ কেউ ইসরাইলের সঙ্গে হাত মিলাচ্ছে। আজকে একটি স্বার্থান্বেষী মহল স্বার্থান্বেষীভাবে কাজ করে থাকেন, ধর্মীয়ভাবে যারা আমাদের দেশে ধর্ম প্রচার করেন তারা কিন্তু এইসব দিকে আসেন না, যারা এই দেশে প্রথম ইসলাম নিয়ে এসেছিলেন অলি-আউলিয়ারা তারা কিন্তু রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করেন নাই। তারা কিন্তু শুধু ধর্ম প্রচার করে গেছেন।’

১৪ ডিসেম্বর এই সাম্প্রদায়িক শক্তিরা আমাদেরকে মেধাশূন্য করে বলে উল্লেখ করেন আমু। তিনি বলেন, ‘সুতরাং তারা কিন্তু সুযোগ পেলেই হত্যাকাণ্ডে সংযুক্ত হয়। ২০০১ সালে তারা ক্ষমতায় এসে আমাদের প্র্য়া ৩০ হাজার লোককে হত্যা করেছিল। সারাবিশ্বে এটা আলোড়িত হয়েছিল। আজকে সেই অপশক্তি আবার ভাস্কর্য নিয়ে মাঠে নামছে। সুতরাং এই দেশের গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সমস্ত দল-মত ধর্ম-নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যেমনিভাবে একাত্তরে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন ঠিক তেমনিভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এদের প্রতিহত করা দরকার।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ যখন একটি মর্যাদাশীল দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। যেটা বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন। যখন শেখ হাসিনা নেতৃত্বে মাত্র কয়েকদিন আগে পদ্মাসেতুর স্প্যানের কাজ সম্পন্ন হয়, সারাদেশে যখন উল্লাস। এত মেগাপ্রকল্প যেগুলো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে, সেই সময় এই ধরনের আঘাত জাতির ওপর আঘাত। জাতির জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক, এটা জাতির ওপর আঘাত। তাই জাতিকে আবার তাদেরকে প্রতিহত করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে একাত্তরের চেতনায়।’

আগামীকাল সকাল নয়টায় ৯টায় শহীদ বুদ্ধিজীবী করবস্থানে ১৪ দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানোর কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিত থাকার আহ্বান জানান।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর যতগুলি স্বপ্ন ছিল যেটা তিনি পূরণ করে যেতে পারেননি, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তার প্রত্যেকটা স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে চলছেন।’

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আজকে যখন যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন হচ্ছে, যখন ধর্মনিরপেক্ষতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যখন আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, তখন তারা আমাদের শর্ত দিচ্ছে। সেই শর্তের ভিত্তিতে আলোচনা হতে হবে। এটা অন্তত গণতান্ত্রিক দলের কর্মী হিসাবে, ১৪ দলের একজন কর্মী হিসাবে এই সরকারের সঙ্গে আমাদের যুক্ততা আছে, তাদের আমরা যেভাবে চিনেছি, তাতে আমাদের কিন্তু বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না।’

সাপকে মুখে চুমু দিলে পরে সাপ ছোবল মারে, এটা খুব সাধারণ কথা। সাপ ছোবল মারা ভোলে না। জামায়াত পেছন থেকে সংগঠিত হচ্ছে। সুতরাং জামায়াত এখানে রয়েছে। এখানে হেফাজতকে যদি আমরা মনে করি শুধুই একটা অরাজনৈতিক সংগঠন তাহলে ভুল করবো বলেও সতর্ক করেন মেনন।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য গুড়িয়ে ফেলার হুংকার ছেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ইতিহাস ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই চিহ্নিত রাজনৈতিক মোল্লারা তারা ক্ষমার অযোগ্য। তাদের প্রতি কোনোভাব প্রদর্শন করলে আবার আমাদের বিপদেই পড়তে হবে। তারা আবার পিছন থেকে ছোবল মেরেছে।’

ইনু বলেন, ‘কোন রাজনৈতিক মোল্লার ফতোয়াবাজিতে নয়, সংবিধান দ্বারাই দেশ চলবে। রাজনৈতিক মোল্লারা বাংলাদেশের কোনো ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করে না। তারা আলেম না, ওলামা না। এদের মার্কা আছে দল আছে সব আছে। এরা চিহ্নিত রাজনৈতিক মোল্লা। যারা পাকিস্তান আমলে পাকিস্তানের ভাড়াটে খেলোয়াড়, যুদ্ধের সময় রাজাকারের ভাড়াটে খেলোয়াড়, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ভাড়াটে খেলোয়াড়, বঙ্গবন্ধুর হত্যার পরে খুনীদের ভাড়াটে খেলোয়াড়, ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরে খুনীদের ভাড়াটে খেলোয়াড়, জঙ্গিদের ভাড়াটে খেলোয়াড় এবং সবশেষে তারা বছরের পর বছর বিএনপি জামায়াতে ভাড়াটে খেলোয়াড় হিসাবে রাজনীতির মাঠে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে সবকিছুই তারা করছে।’

তাই হঠাৎ করে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি প্রদান করা, এটা সুগভীর চক্রান্তের অংশ। এই চক্রান্তের পিছনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে সরকার পদ্ধতি এগিয়ে চলছে সেই সরকারকে চক্রান্তের মধ্য দিয়ে উৎখাত করার একটা সুপরিকল্পিত চক্রান্ত বলে দাবি করেন ইনু।

তিনি বলেন, ‘এই ভাস্কর্য ভাঙচুরকারী মোল্লাদের সঙ্গে কোনো প্রকার সমঝোতা নাই, কোনো ছাড় নাই, নমনীয়তা নাই। তাদেরকে রাষ্ট্রদ্রৌহিতার কারণে গ্রেফতার করে সাজা দিতে হবে। ঠিক যেভাবে যুদ্ধাপরাধীদের আমরা বিচার করেছি সাজা দিয়েছি, ঠিক একইভাবে রাষ্ট্রদ্রোহী রাজনৈতিক মোল্লাদের সংবিধানের বিরুদ্ধে, দেশের বিরুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করার জন্যে যে পাপ করেছে, যে অন্যায় করেছে, সেই অন্যায়ের প্রতিকার একটাই তাদেরকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে গ্রেফতার বিচার এবং সাজা প্রদান করা। এভাবেই শায়েস্তা করার মধ্য দিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রক্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে।’

সারাবাংলা/এনআর/এমআই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন