বিজ্ঞাপন

৪২ বিলিয়ন ডলারের নতুন উচ্চতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ

December 15, 2020 | 8:15 pm

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪২ বিলিয়ন বা চার হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ধরে) এর পরিমাণ তিন লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকা।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে।’

আরও পড়ুন- ‘৪২ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ জাতির জন্য বিজয় দিবসের উপহার’

অন্যদিকে রিজার্ভ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমত, রেমিট্যান্স প্রবাহের ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। দ্বিতীয়ত, করোনার কারণে আমদানির পরিমাণ বাড়েনি। বরং করোনার সময় আমদানির জন্য যে এলসি খোলা হয়েছিল সেগুলো ডেফার্ড হয়ে গেছে। ফলে ফরেন কারেন্সি পেমেন্ট করতে হয়নি। এতে রিজার্ভ বেড়ে গেছে। পাশাপাশি রফতানি আয় বৃদ্ধিও রিজার্ভ বাড়ার কারণ।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘সরকারের নানা উদ্যোগের কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। বিশেষ করে রেমিট্যান্সের ওপর সরকারের ২ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণা এবং হুন্ডি বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ দিন দিন বাড়ছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুত থাকতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে কমপক্ষে ১১ মাসের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করা সম্ভব। প্রতিমাসে ৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রার এই মজুদ দিয়ে ১০ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। এরপর চলতি বছরের ৪ জুন প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। এর মাত্র ২০ দিনের ব্যবধানে গত ২৪ জুন রিজার্ভ ৩৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। আর গত ৩০ জুন ৩৬ বিলিয়ন ডলারে এবং ২৮ জুলাই ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নতুন উচ্চতায় পৌঁছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৮ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ৩৮ দশমিক ১৫ বিলিয়ন এবং ১ সেপ্টেম্বর ৩৯ দশমিক ৪০ ডলারে উন্নীত হয়। এরপর গত ৮ অক্টোবর ৪০ বিলিয়ন ডলারে এবং ৩০ অক্টোবর ৪১ বিলিয়ন ডলারের নতুন উচ্চতায় উঠে আসে। সর্বশেষ ১৫ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের আগের দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, মূলত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ভর করেই রিজার্ভে একের পর এক নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে। গত মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় প্রতিমাসেই প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়ছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে প্রতি মাসে নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে। সদ্য বিদায়ী নভেম্বর মাসে প্রবাসীরা ২০৭ কোটি ৮৯ লাখ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলার এবং অক্টোবরে ২১১ কোটি ২০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে।

উল্লেখ্য, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটির বেশি প্রবাসী রয়েছে। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স জিডিপিতে অবদান রেখেছে ১২ শতাংশের বেশি। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর শীর্ষ ১০টি দেশ হলো- সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ওমান, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, কাতার, সিঙ্গাপুর ও ইতালি।

সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন