শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা: বিস্ফোরক দ্রব্যের মামলা চলবে

ঢাকা: ২০০২ সালে সাতক্ষীরায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলার অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। আর অস্ত্র আইনের মামলায় নতুন করে অভিযোগ গঠন করতে বলেছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আদেশ দেন। ওই মামলায় অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে আসামিরা আবেদন করলে এসময় আদালত তাদের আপিল পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন।

আদালতে আসামিদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মিজানুর রহমান।

রায়ের পর আদেশের তথ্য সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলার আপিল খারিজ করে দিয়েছেন। এর ফলে এ মামলার কার্যক্রম চলতে আর কোনো আইনি আর বাধা নেই। অন্যদিকে অস্ত্র আইনের মামলায় আপিল পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এবং একইসঙ্গে পর্যবেক্ষণের আলোকে নতুন করে অভিযোগ গঠন করতে বলেছেন আদালত।

ধর্ষণের শিকার এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে দেখতে ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সাতক্ষীরার কলারোয়ায় গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। সড়কপথে ঢাকায় ফেরার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে তার গাড়িবহরে হামলা হয়। শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হয়। বোমা বিস্ফোরণ ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে সেদিন।

ওই ঘটনায় কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোসলেম উদ্দিন কলারোয়া থানায় মামলা করতে যান, তবে তা গ্রহণ করা হয়নি। এর এক যুগ পর ২০১৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা আদালতে নালিশি অভিযোগ করেন কলারোয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেম উদ্দিন। আদালত অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করতে সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দেন।

তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ১৭ মে বিএনপির তৎকালীন সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা, বিস্ফোরক দ্রব্য ও অস্ত্র আইনে পৃথক অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০১৭ সালের ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন হয়।

অভিযোগ গঠনের পর ঘটনার সময় নিজের বয়স ১০ বছর ছিল উল্লেখ করে হত্যাচেষ্টা মামলাটি বাতিল চেয়ে ২০১৭ সালে হাইকোর্টে আবেদন করেন রকিব ওরফে রাকিবুর রহমান নামের এক আসামি। পরে একই বছরের ২৩ আগস্ট হাইকোর্ট ওই মামলায় স্থগিতাদেশ দিয়ে রুল জারি করেন। ২৪ সেপ্টেম্বর সেই রুলের ওপর শুনানি শুরু হয়। এরপর গত ৬ অক্টোবর রুলের ওপর শুনানি শেষে ৮ অক্টোবর রায় দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তিন মাসের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এরপর হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন রাকিব। পরে গত ২৪ নভেম্বর মামলা বাতিল প্রশ্নে জারি করা রুল খারিজ করে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। এর ফলে বিচারিক আদালতে এই মামলা চলতে সব বাধা কেটে যায়।

বর্তমানে মামলাটি সাতক্ষীরার আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। গত ২২ নভেম্বর পর্যন্ত এ মামলার মোট ৩০ সাক্ষীর মধ্যে ১৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

হামলার ঘটনায় করা মামলায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে আসামি আলতাব হোসেনসহ অন্যরা পৃথক আপিল করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ৯ আগস্ট হাইকোর্ট আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে মামলা দু’টির কার্যক্রম স্থগিত করেন। এর ফলে  মামলা দু’টির কার্যক্রম থমকে যায়।

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট