বিজ্ঞাপন

বিএনপি থেকে পদত্যাগের ইঙ্গিত হাফিজের

December 19, 2020 | 5:56 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রিজভীর পাঠানো কারণ দর্শানোর নোটিশে ক্ষুব্ধ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম দল থেকে পদত্যাগের ইঙ্গিত দিয়েছেন। শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) বনানী নিজ বাসায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ইঙ্গিত দেন।

বিজ্ঞাপন

হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সামরিক বাহিনী যেসব বন্ধুর সঙ্গে চাকরি-বাকরি করেছি তারা সবাই এবং আমার ব্যক্তিগত বন্ধু যারা রাজনীতি করেন না তারাই সবাই আমাকে পদত্যাগের পরামর্শ দিয়েছেন। আমি নিজেও চিন্তা করেছিলাম। কিন্তু আমার প্রিয় নেতা-কর্মীরা আড়াই’শ মাইল দূর থেকে লঞ্চে-নৌকায় নদী পার হয়ে ঢাকায় এসে অনুরোধ করেছেন- আপনি পদত্যাগ করবেন না, অবসর নেবেন না। তাদের অনুরোধে আজকে আমি পদত্যাগ করলাম না। আমি দেখতে চাই আমার ব্যাখ্যা তাদের (নেতাদের) কাছে সন্তোষজনক হয় কিনা। তারপর আমি সিদ্ধান্ত নেব।’

দলের জাতীয় কাউন্সিল আয়োজনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপির একজন নগন্য কর্মী হিসেবে কয়েকটি সুপারিশ পেশ করতে চাই। ২০২১ সালের মার্চ মাসের মধ্যেই দলের জাতীয় কাউন্সিল আহ্বান করা হোক। দলে বিভিন্ন পর্যায়ে কমিটি বাণিজ্য এবং মানোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে এসেছে। দলের স্থায়ী কমিটির একজন সিনিয়র সদস্যের নেতৃত্বে একটি কমিটির মাধ্যমে বিষয়টি তদন্ত করে কাউন্সিল সভার রিপোর্ট পেশ করা হোক। ভবিষ্যতে সকল নির্বাচনে দল থেকে একজনকে প্রার্থী এবং একজনকে বিকল্প প্রার্থী রূপে মনোনয়ন দেওয়া হোক। এতে মনোনয়ন বাণিজ্যের সুযোগ কমে যাবে।’

হাফিজ বলেন, ‘দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি এবং অঙ্গ সংগঠনের কমিটি সমূহ কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে গঠন করা হোক। সম্প্রতি আমার নির্বাচনি এলাকায় ছাত্রদলের কমিটি কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকায় বসে গঠন করেছেন। আহবায়ককেই আমি চিনি না। ছাত্রলীগের কর্মীরাও এ কমিটিতে স্থান পেয়েছে। আমার সুপারিশকে বিবেচনা করা হয়নি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে চিঠি দিয়ে কোনো উত্তর পাইনি। ২৯ বছর সার্ভিস দেওয়ার পর চিঠির একটি উত্তর আশা করতেই পারি।’

বিজ্ঞাপন

‘দলের কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হলে তদন্তের পর তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। তাহলেই সৎ, নির্লোভ, মহান নেতা শহীদ জিয়াউর রহমানের আত্মা শান্তি পাবে’— বলেন হাফিজ উদ্দিন আহমদ।

কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীদের চিন্তা করতে বলি- দেশের জনপ্রিয় দল বিএনপি কেন আজ ক্ষমতার বাইরে, কারা এর জন্য দায়ী। এখনও তো বিএনপি সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। ১৯৯৬ সালে লেজে গোবরে হয়ে আমরা ইলেকশনে গিয়েছি। তারপরও ১১৬টা আসন পেয়েছি। প্রত্যেকটা মন্ত্রী পরাজিত হয়েছে। অথচ আমরা এমপিরা বিজয়ী হয়েছি।’

‘সুতরাং চিন্তা করেন, মুক ও বধির না হয়ে চিন্তা করেন। দলকে ভালোর জন্য কনট্রিবিউট করেন। দলকে সাজেশন দেন, কী করা উচিত। কেবলমাত্র তোষামদ করে দায়িত্ব শেষ করবেন না। জিয়াউর রহমানকে অনুসরণ করুন। তার মতো সততার সঙ্গে রাজনীতি করুন। যদি অসৎ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিএনপি ব্যবস্থা নেয় মহান নেতা জিয়াউর রহমানের আত্মা কবরেও শান্তি পাবে’— বলেন হাফিজ উদ্দিন আহমদ।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমার নেতা জিয়াউর রহমান বলে গিয়েছেন, দলের চেয়ে দেশ বড়। আমার কাছেও দেশ সবচেয়ে বড়। মাইন ফিল্ডে কামানের ভয়াবহ গোলা বর্ষণ, মেশিন গানের টাটা টাটেট গুলি, মর্টারের গোলা, কামানের গোলা, ট্যাংক বাহিনী সাড়াশি আক্রমণ এগুলো অতিক্রম করে শত্রুর সাথে হাতাহাতি যুদ্ধ করেছি আমরা।’

হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমার মতো অসংখ্য সৈনিক যাদের অধিকাংশ ছিল স্কুল-কলেজের ছাত্র। আমরা সেনাবাহিনীর আর কয়জন ছিলাম। সারাদেশ যুদ্ধ করেছে। আজকে ৫০ বছর প্রায় পার হয়ে যাচ্ছে। বর্তমান প্রজন্ম দেখেনি কীভাবে আমরা দেশটা স্বাধীন করেছি। সেজন্যই এই শোকজ নোটিশ আমি পেয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি একজন ক্ষুদ্র রাজনৈতিক কর্মী। যদি বিএনপির নেতাকর্মীরা বিশেষ করে ছাত্র-যুবকেরা রাজপথে নামে কালকে এ দলের ভবিষ্যত অত্যন্ত উজ্জ্বল। তারা রাজপথে নামে না কেন? অনেক চিন্তা করেছি। দলীয় নেতৃবৃন্দের উচিত এটা পর্যালোচনা করা যে, এত জনপ্রিয় দল বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শতকরা ৮০টা ভোট পায়। কিন্তু রাস্তায় কেন ১০০ লোক নামে না?’

হাফিজ বলেন, ‘অনেক কর্মীকে আমিও জিজ্ঞাসা করেছি। তারা বলে যে, ঢাকা শহরে ১০০ বাড়ি করল, ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা, কারেন্ট অ্যাকাউন্টে ৭/৮ কোটি টাকা একেকজনের। আমি যদি নেমে গুলি খাই আমার পরিবারকে কে দেখবে? আমরা লাভটা কী? এটা হয়তো চিন্তা করে তারা। আমি জীবন দেবো, অন্যরা সুবিধা নেবে— এসব কারণে হয়তো নামে না। তবুও আমি বিএনপির সকল নেতাকর্মীকে আহ্বান জানাব, সরকারবিরোধী আন্দোলনে ডাক দিলে আপনারা এসে এই সরকারকে উৎখাত করবেন।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমি মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের অধীনস্থ সেনা কর্মকর্তা হয়ে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছি, সম্মুখ সমরে আহত হয়েছি। ১৪ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সারাদিন মরণপণ যুদ্ধের পর সিলেট শহর দখল করেছিলাম। ২০২০ সলের এদিনেই আমার দল আমাকে কাঠ গড়ায় দাঁড় করিয়েছে। আমাকে নোটিশ পাঠানোর আগে চিঠির বিষয়বস্তু ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে আমার কর্মীরা মর্মাহত হয়েছেন।’

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন