বিজ্ঞাপন

‘বাংলাদেশকে ভালোবাসতে হলে আমাকে আসতেই হবে’

March 17, 2018 | 4:12 pm

রাষ্ট্র ভিন্ন হলেও গানের খাতিরে বাংলাদেশের প্রতি অর্ক মুখার্জীর রয়েছে গভীর ভালোবাসা। সুযোগ পেলেই তাই এদেশের মাটিকে প্রণাম করে যান এই সুফি গায়ক। এবার এসেছেন বিজন ইমতিয়াজ পরিচালিত ‘মাটির প্রজার দেশে’ সিনেমার প্রচারণার কাজে। ছবিটির জন্য আরেক গায়ক সাত্যকি ব্যানার্জিকে নিয়ে ‘কবিতা’ শিরোনামে একটি গানও বেঁধেছেন তিনি। সেই গান শোনার ফাঁকেই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে অর্কের সঙ্গে কথা বলেছেন সারাবাংলার স্টাফ করেসপন্ডেন্ট তুহিন সাইফুল


  • মাটির প্রজার দেশে যুক্ত হওয়ার কারণ

এমন গল্প নিয়ে ছবি বানানোর সাহস এই প্রজন্মের মানুষের খুব কম আছে। গ্রাম নিয়ে বহু ছবি বানানো হয়। গ্রাম নিয়ে ছবি বানানোর জন্য বড় বাজেটও থাকে। বিদেশে বড় বড় ফেস্টিভালে বিক্রি করার পরিকল্পনাও থাকে। কিন্তু দুটো ছেলে বিজন ও আরিফ একদম সাধারণ ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা, তাদের অনেক টাকা পয়সা নেই, অনেক পরিশ্রম করে এমন একটা সাধারণ গল্প, যেটা প্রত্যেক দিনের গল্প, আমাদের গুলশানের বা বালিগঞ্জের বারিস্তার চকমকে চতুর প্রেমের গল্প নয়, যেখানে প্রচুর নাচ হচ্ছে না গান হচ্ছে না, এমন একটা গল্প নিয়ে কাজ করার সাহস যার আছে, তাদের জন্যই সিনেমাতে যুক্ত হওয়া। এটা হলো এক নম্বরের কারণ; দুই নম্বর হলো, গানটার জন্যও করা। এই গানটার কাছে আমি ঋণী, এটা জীবনে আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। এই গানটা আমার অনেক দিনের সঙ্গী এবং এই মানুষটা ‍যিনি এই গানটা রচনা করেছেন, সাত্যকি দা, তিনিও আমার জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ, আমার কাছে মনে হয়েছে এমন একটা সিনেমায় গানটা যুক্ত করা আমাদের কাছে একটা সুযোগ। সেই জন্যেই এই ছবিতে কাজ করা।

বিজ্ঞাপন

  • গান ও মৃত্যু সম্পর্কিত আলাপ

এই যে আমরা বসন্তকালে বসে আছি, তার মানে শীতকালের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর একটা নির্জনতা আছে। শীতকাল যে চলে গেছে এটা প্রত্যেকদিন আপনার গায়ে এসে লাগছে, ‘মৃত্যুর মতো পাশে পড়ে আছো কবিতা’ সাত্যকি নিজেই বলছে এবং সত্যিই তো মৃত্যু আছে! চারিদিকে মৃত্যু আছে। সারা পৃথিবীটা একরকম হয়ে যাচ্ছে, পৃথিবীর মানুষ একই রকম জামা-কাপড় পরছে। একই লিঙ্গে কথা বলে, একটাই ভাষা, মানুষের কোন প্রাইড নেই, খুব লিবারেল অথচ কোন প্রশ্ন করা যাবে না। এই জায়গাটা মানুষকে একটা কনজিউমার ক্লাস হিসেবে তৈরী করছে, এটা একটা ভয়ঙ্কর থট। এটার বিরোধিতা করার আমি কেউ নই। কারণ আমি পারবো না এটা বন্ধ করতে। মানুষ ইটসেল্ফ আ কন্ট্রানেচারাল, ওই যে কন্ট্রানেচারাল চরিত্রের মানুষ, সেইটাকে একজন কবি কি করতে পারে? আপনার অস্তিত্বের একটা অংশ ক্ষয়ে প্রত্যেকদিন একটু একটু করে মরে যাচ্ছে, আপনি কি করবেন? মরে গেলে কি হয়? আপনি কি করেন? কাঁদেন তো! তার কি সোসিও ইকোনমিক ডিকন্স্ট্রাকশন করেন বসে বসে? কিভাবে কাঁদেন, কেন কাঁদেন? করেন না তো? এই গানটা সেই কান্নার কথা, আর কিচ্ছু না।

বিজ্ঞাপন
  • বাংলার প্রতি ভালবাসা ও ইংরেজি বয়ানের দ্বৈততা

আপনার কাছে এটা দ্বৈততা মনে হতে পারে, আমার কাছে এটা দ্বৈততা না। আমি সত্যিই তো ইংরেজিতে কথা বলি। আমি ইংরেজি শিখেছি, বলতে পারি, অনেকের থেকে বেটার বলতে পারি। সেটা আপনার কানের জন্য কতটা সংবেদনশীল তা বলতে পারবো না। আবার এখানে এটাও প্রমাণ করতে আসিনি যে আমি বাংলায় পন্ডিত নাকি ইংরেজিতে পন্ডিত। আমি প্রতিনিয়ত যে ভাষাতে কথা বলি সেই ভাষাতেই এখানেও কথা বলবো। সেটা ইংরেজি হতে পারে, বাংলা হতে পারে, বাংলাটা আমার মনের ভেতরে। এই ছবিটাতে কাজ করাটাই বাংলা আমার কাছে। কি করবো বলুন, কলকাতা নামের যে শহরে আমি থাকি সেই শহরের অধিকাংশ লোক ইংরেজিতে কথা বলে। এদের সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলতে হয়, আমি পাঁচ বছর ইংল্যান্ডে কাটিয়েছি, কি করবো বলুন? ফেলে দেবো? সেই সময়টাকে তো আর ফেলে দিতে পারবো না। সারা পৃথিবীটাকে তো আর ফেলে দিতে পারবো না। আমি বছরের পাঁচ মাস বাইরে কাটাই, আমাকে ইংরেজি ভাষার সাহায্যেই থাকতে হয়। নেপালে গিয়ে আমি বাংলা ভাষায় কথা বললে চলে না। ইংল্যান্ড বা ফ্রান্সেও চলে না।

  • বাংলাদেশ, ভালবাসা ও যন্ত্রণা

 আমি যে রাস্তা দিয়ে কলকাতা শহরে হাঁটি, প্রত্যেকদিন চৌদ্দ কিলোমিটার হাঁটি। আমি বাসে চড়িনা। সেটার পেছনে কোন কারণ নেই। আমি হাঁটতেই ভালবাসি। প্রতিদিন ওই রাস্তাটা আমার কাছে নতুন লাগে। তো ওই হাঁটা হচ্ছে একটা নেশা। বাংলাদেশ আমার কাছে একটা নেশা। বাংলাদেশ আমার কাছে একটা থট। একটা চিন্তা। আমি তো বাংলাদেশে জন্মাইনি, কি করবো! আমার মা জন্মেছেন, আমার নানা জন্মেছেন, আমার দাদু জন্মেছেন, আমার পূর্বপুরুষরা জন্মেছেন, আমি তো জন্মাইনি, তাদের মুখেই যেটা শুনেছি সেটাই বাংলাদেশ। এই যে বারবার আসছি, সেই আঙ্গিকটা, আর তার সাথে আমার দেখা বাংলাদেশের পার্থক্যটা এবং সেই বাংলাদেশটা যে নেই এই যন্ত্রণাটা, তারপরে সেই যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে এই বাংলাদেশকে ভালোবাসতে হলে আমাকে আসতে হবেই, দেখতে হবেই, সেই পরিবর্তনটাও অনুভব করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

দেখুন এই সম্পর্কিত ভিডিও স্টোরি


ছবি: আশীষ সেনগুপ্ত

সারাবাংলা/টিএস/টিএম

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন