বিজ্ঞাপন

বছরজুড়ে বিশ্বে আলোচিত নারীরা (পর্ব-১)

December 30, 2020 | 10:30 am

রাজনীন ফারজানা

বিশ্ব পরিস্থিতি এলোমেলো হয়ে যায় গত ডিসেম্বরে চিনে কোভিড-১৯ নামের এক নতুন ধরণের করোনাভাইরাস উদঘাটনের পর। অতিদ্রুত ছড়াতে সক্ষম এই ভাইরাস চোখের পলকেই ছড়িয়ে যায় দুনিয়ার এপাশ থেকে ওপাশ। ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে দেশে লক ডাউন দিয়ে জন মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এর মধ্যেই আস্তে আস্তে শুরু হয় বৈশ্বিক কার্যক্রম। অন্যান্য বছরের মত স্বাভাবিকভাবে না হলেও ‘নিউ নরমাল’ নাম দিয়ে নতুন বাস্তবতায় জীবনযাপন শুরু করে বিশ্ববাসী। জীবাণু সংক্রমণ রোধে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয় বিভিন্ন দেশে। আর সেসব মেনেই বিশ্বের অধিকাংশ জায়গায় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড থেকে শুরু করে খেলাধুলা ও বিনোদনের কার্যক্রম শুরু হয় স্বল্প পরিসরে। স্বল্প পরিসরে হলেও এদের মধ্যে দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছেন অসংখ্য নারী। তবে আমরা আজ বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসা এমন বিশজন নারীর কথা তুলে ধরব যাদের অবদান বিশ্ব পরিস্থিতি বদলে দিতে ভূমিকা রেখেছে বছরজুড়ে।

বিজ্ঞাপন

১. গ্রেটা থুনবার্গ

সুইডেনের ১৬ বছর বয়সী পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে ক্লাস বর্জন করে বৈশ্বিক উষ্ণতার কথা মনে করিয়ে দিতে সে অবস্থান নেয় সুইডেনের পার্লামেন্টের বাইরে। তার হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘স্কুল স্ট্রাইক ফর ক্লাইমেট’। সেই থেকে আলোচনায় গ্রেটা। গতবছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের একটি সম্মেলনে বিশ্ব নেতাদের কড়া সমালোচনা করে সে। তার গড়ে তোলা পরিবেশ আন্দোলন ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’ ছড়িয়ে পড়ে। সবকিছু বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী টাইম তাকে ২০১৯ সালের ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণা করেছিল। চলতি বছরেও টাইম ম্যাগাজিনের মে সংখ্যার প্রচ্ছদে দেখা যায় গ্রেটাকে। গ্রেটার ডাকে সাড়া দিয়ে প্রতি শুক্রবার শিশু–কিশোরেরা জড়ো হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীকে রক্ষার তাগিদে। গত ২০ সেপ্টেম্বর গ্রেটার আহ্বানে ১৫০টি দেশে লাখ লাখ মানুষ সমাবেশ করেছে। বিক্ষোভ জানিয়েছে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বিশ্ব নেতাদের ব্যর্থতার প্রতিবাদে।

বিজ্ঞাপন

২. ন্যান্সি পেলোসি


২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী হিসেবে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার হিসেবে নিয়োগ পান ন্যান্সি পেলোসি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ৫২-তম স্পিকার। নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শাসনামলে প্রতিনিধি পরিষদে স্পিকার পদে আবারও ন্যান্সি পেলোসিকে চান ডেমোক্র্যাটরা। ডেমোক্র্যাট আইন প্রণেতারা নভেম্বরে স্পিকার হিসেবে আবারও তাকেই বেছে নেন। কোনো রকম বিরোধিতা ছাড়াই ভার্চুয়াল ভোটাভুটিতে তিনি মনোনীত হন। ন্যান্সি একে খুবই সম্মানের উল্লেখ করে কোভিড-১৯ সংকট মোকাবেলায় পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকার করেন। জানুয়ারিতে কংগ্রেসের নতুন অধিবেশন শুরুর পর আনুষ্ঠানিকভাবে স্পিকার নির্বাচন নিয়ে ভোটাভুটি হবে। ন্যান্সি জয়ী হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ন্যান্সি পেলোসি ১৯৪০ সালের ২৬ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন।

৩. সারা গিলবার্ট

বিজ্ঞাপন

করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ এর আবির্ভাব হতেই এলোমেলো হয়ে যায় সারা বিশ্ব। অজানা এই রোগের চিকিৎসা সম্পর্কেও কোন ধারণা ছিল না কারও। ডিসেম্বরে চীনে নতুন এই করোনাভাইরাসের আবির্ভাবের পর ১০ জানুয়ারি থেকে টিকা তৈরির কাজ শুরু করেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী সারা গিলবার্ট ও তার দল। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যাডক্স (ChAdOx1 nCoV-19) ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করা ২৫০ জনের বিজ্ঞানী দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ব্রিটেনের বিখ্যাত ভ্যাকসিন রিসার্চ সেন্টার অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনের ইনস্টিটিউটের ভ্যাকসিনোলজির প্রফেসর তিনি। বিভিন্ন সংক্রামিত ব্যাধি এবং ক্যানসারের বিরুদ্ধে ইমিউনো থেরাপি প্রোডাক্টও তৈরি করেছেন।

বছরজুড়ে আলোচিত ৭ নারী– দেশে

প্রায় ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে মানবদেহে টি সেল-কে কীভাবে বৃদ্ধি করা যায় সেই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন সারা। ১৭ বছর বয়সে মেডিক্যাল রিসার্চার হওয়ার স্বপ্ন দেখা সারা একে একে গ্র্যাজুয়েশন, পিএইচডি শেষ করে বায়ো টেকনোলজির একাধিক সংস্থায় কাজ করেন। ডেলটায় কাজ করতে গিয়ে শেখেন ওষুধ তৈরির কাজ। এরপর ধীরে ধীরে চলে আসে ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে। সংক্রামিত ব্যাধি থেকে বিশ্বকে বাঁচানোর লক্ষ্যে এগিয়ে চলছেন ড. সারা গিলবার্ট।

৪. রুথ বেডার গিনসবার্গ

বিজ্ঞাপন

গত ১৮ সেপ্টেম্বর সাতাশি বছর বয়সে মারা যান আমেরিকান বিচারপতি রুথ বেডার গিনসবার্গ। ন্যায় বিচারের অনন্য মাত্রা তৈরি করেছিলেন তিনি। মারা যাওয়ার আগে নাতির কাছে বলে যান, নতুন রাষ্ট্রপতি বহালের আগে যেন কাউকে তার স্থলাভিষিক্ত না করা হয়। জীবনভর পুরুষতন্ত্র এবং সঙ্কীর্ণতার পাহাড় ভেঙে বিচারের বদ্ধ প্রাসাদে খোলা হাওয়া ঢোকার যে পথ তিনি গড়েছিলেন, আশঙ্কা ছিল নির্বাচন ত্রুটিমুক্ত না হলে তাঁর উত্তরাধিকারী সে পথে শিরদাঁড়া সোজা রেখে হাঁটতে পারবেন না।

১৯৩৩ সালে নিউ ইয়র্ক সিটির ব্রুকলিনের এক ইহুদি পরিবারে রুথ বেডারের জন্ম। মা সিলিয়া, রুথকে সেই ‘নারী’ হতে বলতেন, যে ‘নিজের মতো’ এবং ‘স্বনির্ভর’ হবে। দুর্ভাগ্য, সিলিয়া রুথের গ্র্যাজুয়েশন দেখে যেতে পারেননি। কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে পড়তে গিয়ে আলাপ হয় মার্টিন গিন্সবার্গের সঙ্গে যাকে ১৯৫৪ সালে বিয়ে করেন। হার্ভার্ডের মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে তাকে। সেসময়কার ডিন ছাত্রীদের ডিনারে ডেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘ছেলেদের জায়গা দখল করে হার্ভার্ডে পড়তে এসেছ কেন?’ এমন প্রতিকূলতার মধ্যে পড়াশোনা শেষ করে প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করে আইনজীবী হন রুথ। ১৯৭২-এ রুথ ‘আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন’-এর ‘নারী অধিকার প্রকল্প’-এর জেনারেল কাউন্সেল হন। ৩০০-র বেশি মামলার মধ্যে শীর্ষ আদালতে গিয়ে লড়া ছ’টি মামলার কথা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

আদালত কক্ষেই তিনি চালিয়ে গেছেন লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে ও সমানাধিকারের পক্ষের লড়াই। শুধু নারীর নয়, সকল নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার দাবি করতেন তিনি। যে আইন ‘আপাতভাবে নারীদের জন্য হলেও আসলে পুরুষের উপর নির্ভরতা বাড়ায়’, তাকে বদলাতে বদ্ধ পরিকর ছিলেন তিনি। তাই সেবাদানকারী পুরুষ অথবা বিপত্নীক ব্যক্তির অধিকার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার রুথকে কলম্বিয়ার ‘কোর্ট অব অ্যাপিলস’-এর বিচারপতি নিযুক্ত করেন ১৯৮০ সালে। ১৯৯৩ সালে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন তার নাম প্রস্তাব করেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে। রুথ গিন্সবার্গ ছিলেন আমেরিকার শীর্ষ আদালতের দ্বিতীয় মহিলা বিচারপতি। তিনিই প্রথম আদালতে ‘সেক্স’ শব্দের পরিবর্তে ‘জেন্ডার’ শব্দ ব্যবহার করেন। ভিন্নমত পোষণের সাহসই গিন্সবার্গকে সব দেশের সংবিধান ও স্বাতন্ত্র্যপ্রেমী নাগরিকের সামনে দৃষ্টান্তের মতো দাঁড় করিয়েছে।

৫. শেরিল স্যান্ডবার্গ

জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) শেরিল স্যান্ডবার্গ। ১.৯ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ে ফোর্বস ম্যাগাজিনের বিশ্বের একশ প্রভাবশালী নারীর তালিকায় ২২ নম্বরে রয়েছে তার নাম। কর্মজীবনে তিনি ফেসবুককে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে ভূমিকা রাখেন। ২০০৮ সালে যেখানে ৫৬ মিলিয়ন ডলার লসে চলছিলো ফেসবুক সেখান থেকে ২০১৯ সালে ১৮.৫ বিলিয়ন ডলার লাভে নিয়ে আসেন তিনি।

ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেওয়া ও ক্ষুদ্র ব্যাবসার প্লাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই ২০১৯ সালে তাদের রাজস্ব ২৭ শতাংশ বেড়ে ৬৯.৭ শতাংশে উন্নীত হয়। তবে ২০২০ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে ঘৃণা ছড়ানো বন্ধ করতেই বেশি ব্যস্ত থেকেছেন স্যান্ডবার্গ এবং ফেসবুক সিইও জাকারবার্গ। তবে বিতর্ক থাকা স্বত্বেও মার্ক জাকারবার্গ তার কোম্পানির দেখভালের জন্য শেরিলের উপরই ভরসা রাখছেন।

৬. বিলকিস বানু

ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ঘিরে রাজধানী দিল্লির শাহীনবাগে বিক্ষোভের প্রতীক হয়ে ওঠেন অশীতিপর বৃদ্ধা বিলকিস বানু। তিনি মার্কিন সাময়িকী টাইমের সেরা ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ব্রিটিশ মিডিয়া বিবিসির সেরা ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন।

গত বছর ভারতে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস হওয়ার পর দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ-সহিংসতা শুরু হয়। এই আইনের বিরোধিতায় দিল্লির শাহীনবাগে ১০০ দিনের বেশি সময় ধরে নাগরিকত্ব আইনবিরোধী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। তীব্র শীতের মাঝে বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগই ছিলেন নারী; যাদের নেতৃত্ব দেন ৮২ বছর বয়সী বিলকিস বানু।

টাইম লিখেছে, ‘এক হাতে জায়নামাজ অন্যহাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে প্রতিদিন সকাল ৮ টায় শাহীনবাগের বিক্ষোভে হাজির হতেন; মধ্যরাত পর্যন্ত বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিতেন বিলকিস।’

৭. সোমাইয়া ফারুকী

আফগানিস্তানের হেরাতের এক উদীয়মান কিশোরী রোবোটিক দলের নেতা সোমাইয়া ফারুকী। তাদের বয়স ১৪ থেকে ১৭  বছরের মধ্যে। আফগানিস্তানে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সোমাইয়া ও তার দল রোগীদের জন্য কম খরচে ভেন্টিলেটর তৈরির সিদ্ধান্ত নেন।

হেরাতের গভর্নর আব্দুল কাইউম যখন জনগনের কাছে ভেন্টিলেটর চেয়ে আবেদন করেন তখন সোমাইয়ার দল এই প্রোজেক্ট হাতে নেন। এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সব বন্ধ থাকায় সোমাইয়াদেরকে স্থানীয় বাজার থেকেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করতে হয়। দুটি ভেন্টিলেটরের প্রোটোটাইপ বানাতে তারা একটি টয়োটা করোলা গাড়ির ইঞ্জিন ও ব্যাটারি পার্টস ব্যবহার করেন। দলটি ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট ফর টেকনোলজি (এমআইটি)র ডিজাইন অনুযায়ী ও হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে অন্য আরেকটি মডেলের ভেন্টিলেটর নিয়ে কাজ করছে এখন।

ইতোমধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আফগান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের বানানো একটি মডেলের ভেন্টিলেটর ব্যবহারের অনুমোদন। সোমাইয়াদের কৃতিত্ব যে তারা ৩০ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের ভেন্টিলেটর মাত্র ৩০০ মার্কিন ডলারের মধ্যে তৈরি করছে। এমন অসাধারণ কৃতিত্বের কারণেই এবার বিবিসির ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকায় এসেছে সোমাইয়ার নাম।

৮. লরেন গার্ডনার

যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লরেন গার্ডনার কোভিড-১৯ অতিমারির রেকর্ড রাখার একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন। নির্ভরযোগ্য এই ডেটা এন্ট্রির ওয়েবসাইটটি বিশ্বের যেকোন প্রান্ত থেকে বিনা খরচে ব্যবহার করা যাবে। টাইম ম্যাগাজিনের বিশ্বসেরা প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায় তাই জায়গা করে নিয়েছেন এই মার্কিন বিজ্ঞানী।

হোয়াইটিং স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সিভিল ও সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক গার্ডনার জানুয়ারির শেষদিকে কোভিড-১৯ ড্যাশবোর্ড তৈরিকারী দলের নেতৃত্ব দেন। সেই থেকে বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ কেসের কেন্দ্রীয় ডেটা এন্ট্রির প্রধান উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এই ওয়েবসাইট। সারা বিশ্বের সব সরকার, মিডিয়া ও সাধারণ জনগণ একনজরেই দেখে নিতে পারেন করোনাভাইরাসের সমস্ত আপডেট। এভাবে অতিমারির সময় তথ্য সরবরাহ ও সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখে চলছে লরেন গার্ডনারের এই ওয়েবসাইট।

৯. ইমান গালিব আল হামলি

ইয়েমেনের ইমান গালিব আল-হামলি দশজন নারীর একটি দলের নেতা যারা কম বিদ্যুৎ ব্যয় করে এমন সৌর প্যানেল স্থাপন করে। ইয়েমেনের বিদ্ধস্ত গৃহযুদ্ধক্ষেত্র থেকে মাত্র ২০ মাইল দূরে তারা এমন প্যানেল স্থাপন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

ইমান ও তার দলের বানানো মাইক্রোগ্রিডটি ইয়েমেনের বিদ্যুৎ সংযোগ নাই এমন জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য জাতিসঙ্ঘের নেওয়া তিনটি প্রকল্পের একটি। এবং তিনটি প্রকল্পের মধ্যে এই প্রকল্পটিই শুধুমাত্র নারীদের দ্বারা পরিচালিত। আফগানিস্তানের মত রক্ষণশীল দেশে মেয়েদের এমন কাজে দেখতে কেউই অভ্যস্ত নয়। তাই ইমানদের জন্য কাজটি মোটেই সহজ ছিল না। শুরুর দিকে পুরুষদের কাজ করছে বলে তাদের টিটকারি দেওয়া হত। কিন্তু কাজটি শেষ হওয়ার পর সবার সম্মান অর্জন করেন এবং পরিবারের জন্য নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থাও হয়। আবার তারা নতুন একটি পেশাতেও দক্ষতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।

বিবিসিকে ইমান বলেন, ‘ইয়েমেনের সব নারীর কাছে আমার চাওয়া তারা যেন তাদের স্বপ্ন পূরণ করে। তাদেরকে নানারকম চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে। তবে আত্মবিশ্বাস থাকলে স্বপ্ন পূরণের জন্য সেসব বাধাবিপত্তি অতিক্রম করা কোন ব্যাপার না।’

১০. ড. সাফা কুমারি

আরেক যুদ্ধবিদ্ধস্ত আরব দেশ সিরিয়া। সেখানকারই একজন নামকরা উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ড. সাফা কুমারি। ২০২০ সালে বিবিসির প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন সিরিয়ান এই প্লান্ট ভাইরলজিস্ট। বিশ্বকে খাদ্যসংকট থেকে বাঁচানোর জন্য গাছপালাকে বিধ্বংসী রোগ থেকে রক্ষা করার গবেষণা করেন তিনি। করোনাভাইরাস অতিমারির সময় পৃথিবীজুড়ে খাদ্যসংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। এমন সময় উদ্ভিদ জগতেও ভাইরাস সংক্রমণ দেখা দিলে তা মানবজাতির জন্য ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি করবে।

ড. সাফা কুমারি বিবিসিকে জানান, ‘নতুন নতুন প্লান্ট ভাইরাস সারাবছরই দেখা দিতে থাকে। মানবজাতির মতই উদ্ভিদজগতেও ভাইরাস সংক্রমণের অতিমারি দেখা দিতে পারে। আর সেগুলোর কোন চিকিৎসা না থাকলে এলাকার পর এলাকা আক্রান্ত হবে আর একাধারে গাছ মারা যায়। এর ফলে গ্রামীণ এলাকার যেসব পরিবার কৃষির উপর নির্ভরশীল তারা বিপদে পড়ে।’

সাফা কুমারির স্মরণীয় আবিষ্কারের মধ্যে অন্যতম হল নানা জাতের ফাবা বিনের (একধরণের সিরিয়ান ডাল) প্রজাতি উদ্ভাবন যারা ফাবা বিন নেক্রোটিক ইয়েলো ভাইরাস (এফবিএনওয়াইভি) নামক একধরণের ভাইরাস সংক্রমণ থেকে মুক্ত। পোকার আক্রমণে ছড়ানো এই রোগ দাবানলের মত দ্রুত ছড়ায়। জলবায়ু পরিবর্তন ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য এই ভাইরাসের প্রকোপ বেড়েছে। ভয়ানক এই রোগ থেকে গাছেদের রক্ষা করতে কাজ করে যাচ্ছেন সাফা কুমারি। সিরিয়ার যুদ্ধাবস্থার মধ্যেই তিনি দামেস্কো থেকে আলেপ্পো পর্যন্ত ভ্রমণ করেন ফাবা বিনের ক্ষেত বাঁচানোর জন্য।

আফগানিস্তানের মত সিরিয়াও একটি রক্ষণশীল দেশ হওয়ায় সেখানে নারীদের জন্য গবেষণামূলক কাজ করা সহজ নয়। এমন পরিবেশ থেকে দৃষ্টান্তমূলক কাজের জন্য বিবিসির স্বীকৃতি পাওয়ার পর সাফা কুমারি বলেন, ‘নারীরদের নানারকম বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে কিছু অর্জন করা কোন অংশেই পুরুষের চেয়ে কম কিছু নয়। বরং এসব জায়গায় লিঙ্গভেদ করা লজ্জার। কিন্তু এখানে (আফগানিস্তানে) এটাই বাস্তবতা। আর আমার জন্য দক্ষতা আর সাফল্যের সঙ্গে কাজটি শেষ করাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

সারাবাংলা/আরএফ/এসবিডিই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন