বিজ্ঞাপন

‘স্বৈরাচারী’ কায়দায় চলছে জাপা, মাঠে নামছেন বিদিশা!

January 3, 2021 | 7:41 pm

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: জাতীয় পার্টি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর দলটির মধ্যে কোন্দল স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বর্তমানে খুবই দুর্দশার মধ্য দিয়ে চলছে দলটির কার্যক্রম। ‘স্বৈরাচারী’ কায়দায় দলটি পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে।

বিজ্ঞাপন

এর আগে দলটির মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দল, মান-অভিমান এবং স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মতো ঘটনা ঘটেছে বহুক্ষেত্রে। এরশাদের মৃত্যুর পর টার্গেট ছিল জাতীয় পার্টি সুসংগঠিত ও শক্তিশালী বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে ঠাঁই করে নেবে রাজনৈতিক অঙ্গনে। দখল করবে বিএনপির স্থান। কিন্তু তাদের এসব স্বপ্ন ভেস্তে গেছে। দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, জাপা চেয়ারম্যানের অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে তাদের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে পারেনি।

নেতাকর্মীদের দাবি, জাপা এখনও ভাঙনের ঝুঁকি থেকে মুক্ত হতে পারেনি। যেকোনো সময় বিদিশার নেতৃত্বে আরেকটি জাতীয় পার্টির আত্মপ্রকাশ ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। গতবছর বেগম রওশন এরশাদের পুত্র সাদ এরশাদ ও এরিক এরশাদের মা বিদিশার নেতৃত্বে নেতাকর্মীদের পৃথকভাবে জাতীয় পার্টির ব্যানারে সাংগঠনিক তৎপরতা ছিল খুবই আলোচিত। জিএম কাদেরের নেতৃত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে তাদের সেই তৎপরতা এখনও অব্যাহত রয়েছে।

এ বিষয়ে এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমিও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পৃথকভাবে পালন করেছি। মহামারির কারণে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়নি। পরিস্থিতি স্বভাবিক হলেই জাতীয় পার্টির ব্যানারে আমি মাঠে নামব।’

বিজ্ঞাপন

এ নিয়ে জাপার একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব নিয়ে এরশাদ পরিবারে অনৈক্যের কারণে বিদিশা সুযোগ নিয়েছে। এক্ষেত্রে রওশন এরশাদ ও তার সমর্থিত নেতাকর্মীদের সহযোগিতা রয়েছে।’

জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মারা গেছেন ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই। এরপর থেকেই দলটির নেতৃত্বে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। এরশাদপত্নী রওশন বর্তমানে সংসদে বিরোধীদলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তার সাংগঠনিক কোনো ক্ষমতা নেই। দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রয়াত এরশাদের ছোট ভাই জিএম কাদের।

এদিকে পার্টির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। প্রেসডিয়ামের সম্মতি ছাড়া গঠনতন্ত্রের দোহাই দিয়ে মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাকে সরিয়ে জিয়া উদ্দিন বাবলুকে করা হয় দলটির মহাসচিব।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত, যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের জাতীয় পার্টিতে অবমূল্যায়নের বিষয়টি নিয়েও নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ রয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে ত্যাগীদের বাদ দিয়ে অযোগ্য ও বিতর্কিতদের পদদান, বিভিন্ন সময় পদবাণিজ্যের অভিযোগ, পার্টির চেয়ারম্যান কেন্দ্রিক গড়ে ওঠা শক্তিশালী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে অনেকের।

নিয়ম-নীতি উপেক্ষা ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে ভবিষ্যতে এমপি বানাতে নেতাদের স্ত্রীদের দলটির বিভিন্ন পদে মনোনীত করার বিষয়টি ইতোমধ্যেই বেশ সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এছাড়া সাদ এরশাদ ও তার স্ত্রীকে লাঞ্চিত করার ঘটনায়ও আলোচনার ঝড় ওঠে। সংবাদ সম্মেলন করে সাদ ও তার স্ত্রী দলীয় নেতাকর্মীদের শাস্তি দাবি করলেও নীরব ছিলেন জিএম কাদের।

এসব বিষয়ে জানতে জিএম কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে দলটির মহাসচিব জিয়া উদ্দিন বাবলু বলেন, ‘জাতীয় পার্টির মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। দলটি ঘুরে দাঁড়াতে সাংগঠনিক তৎপরতা জোরদার করেছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রথম আলোসহ তিনটি পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। ক্রোড়পত্রে জাপার শাসন আমলের কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়।’

তিনি বলেন, ‘গত একবছর করোনার ঝুঁকি নিয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টিকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদের কঠোর পরিশ্রম করছেন। করোনার মধ্যেও জাপা রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড নিয়ে মাঠে ছিল। জাপা চেয়ারম্যান নিজেই করোনার ঝুঁকি নিয়ে বেশ কয়েকমাস ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে দলকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন