বিজ্ঞাপন

বিদেশে পাঠানোর নামে ৬ যুবকের ৩১ লাখ টাকা ‘আত্মসাৎ’

January 5, 2021 | 12:33 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: খোরশেদ আলম ও সোরক মিয়া চাচাত ভাই। কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ শ্রীপুরের বাসিন্দা এই দুই ভাইসহ তাদের পরিচিত ইসমাইল, নিজামউদ্দিন, মঈনউদ্দিন ও জামালের ইচ্ছে ছিল বিদেশ গিয়ে ভাগ্যের চাকা ফেরাবেন। খোরশেদ আলমের চাচা আব্দুর রহমান কাঞ্চনের মাধ্যমে সে সুযোগ পেয়েও যান তারা। মালয়েশিয়ায় চাকরির উদ্দেশ্যে ২০১৭ সালের জুন মাসে ওই ছয় যুবক আ. রহমান ও তাদের অভিবাবকের হাতে তুলে দেন ৩১ লাখ টাকা। কিন্তু ভাগ্য ফেরেনি, টাকা দিয়ে উল্টো বিপাকে পড়েছেন তারা। এখন টাকাগুলো ফিরে পেতে হতভাগ্য যুবকরা ঘুরছেন প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, ওই যুবকদের বিপাকে পড়ার কারণ রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত গোল্ড ক্রেস্ট ইন্টারন্যাশনাল নামে যে রিক্রুটিং এজেন্সিতে আব্দুর রহমান ৩১ লাখ টাকা দিয়েছিলেন সেই প্রতিষ্ঠান যথাসময়ে তাদের মালয়েশিয়ায় নিতে পারেনি। এ বিষয়ে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর রিক্রুটিং এজেন্সি গোল্ড ক্রেস্ট ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মো. আব্দুল বাতেন এবং ওই প্রতিষ্ঠানের স্টাফ মো. নাছিরউদ্দিনের বিরুদ্ধে রাজধানীর বনানী থানায় মানব পাচার আইনে মামলা দায়ের করেছেন আব্দুর রহমান। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

জানতে চাইলে মামলা দায়েরকারী আব্দুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, মামলাটি এখনো চলছে। ওই ছয় জন প্রতারণার শিকার হয়েছেন। আমিও সামাজিকভাবে হেয় হয়েছি। ভিসা হয়েছিল কি না, তা বলতে পারব না। তারা ওই ছয় জনকে নিয়ে বনানীতে রেখেছিল। এখন প্রশ্ন উঠেছে— আদৌ তারা লোক পাঠায় না মানবপাচার করে!

বিজ্ঞাপন

একই বিষয়ে পিবিআই’র পরিদর্শক মো. মোক্তারুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, মামলাটি তদান্তাধীন। এক নোটিশের মাধ্যমে ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের কয়েকজনকে ডাকা হয়েছিল। যাদের ডাকা হয়েছিল, তারা এসে তাদের বক্তব্য দিয়েছে। তবে এর বেশি কিছু মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

নথিপত্র বিশ্লেষণ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আব্দুর রহমান ওই ছয় জনের চাকরির জন্য রিক্রুটিং এজেন্সি গোল্ড ক্রেস্ট ইন্টারন্যাশনালে টাকাগুলো দিলেও তাদের বিদেশযাত্রায় বাধা হয়ে দাঁড়ান মেসার্স ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী রুহুল আমিন স্বপন। রিক্রুটিং এজেন্সি ক্রেস্ট ইন্টারন্যাশনালের মালিক আব্দুল বাতেন তাদের ভিসার জন্য প্রাপ্ত টাকা ও পাসপোর্ট তুলে দিয়েছিলেন ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের মালিক স্বপনের হাতে। শুধু এই ছয় যুবকই নয়, চাকরি করতে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছুক আরও একাধিক যুবকের ভিসার টাকা ও পাসপোর্টও তিনি তুলে দেন তার কাছে। স্বপন টাকাগুলো মেরে দেওয়ায় বিপাকে পড়েন বাতেন। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্বপন।

গেল ৯ নভেম্বর প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবের দফতরে ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের মালিক স্বপনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন আব্দুল বাতেন। তিনি অভিযোগ পাঠিয়েছেন বায়রা’র প্রেসিডেন্ট, পিবিআই প্রধান (ডিআইজি) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র পরিদর্শক এসআইএন্ডও (অর্গানাইজড ক্রাইম) মো. মোক্তারুজ্জামানের দফতরেও। অভিযোগটি তদন্ত করে সুবিবেচনার জন্য সুপারিশ করেছেন জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) সভাপতি বেনজীর আহমেদ।

বিজ্ঞাপন

বনানী থানায় দায়ের করা মানবপাচার মামলা তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সম্প্রতি ক্যাথারিক ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যানের দফতরে একটি নোটিশের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার মি. পল, অ্যাকাউন্ট্যান্ট সোহাগ মিয়া, ম্যানেজার জিয়াউর রহমান জিয়া, ভিসা অফিসার রেজাউল করিম রেজা ও এনামুল হককে ডেকেছিলেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। রোববার (৩ জানুয়ারি) শুনানির দিন নির্ধারণ ছিল।

নোটিশে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, আব্দুর রহমানের দায়ের করা মামলার ঘটনা সংক্রান্ত বিষয়ে ক্যাথারিক ইন্টারন্যাশনালের ওই পাঁচ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কাছে তথ্য রয়েছে বলে তিনি প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছেন। মামলা তদন্তের স্বার্থে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।

জানতে চাইলে রিক্রুটিং এজেন্সি ক্রেস্ট ইন্টারন্যাশনালের মালিক আব্দুল বাতেন সারাবাংলাকে বলেন, এটি একটি ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল। এটি শেষ হয়ে গেছে।

আর মেসার্স ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী রুহুল আমিন স্বপন সারাবাংলাকে বলেন, ওই রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতারণা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে বলে সরকারের বিভিন্ন তদন্তে উঠে এসেছে। বাতেন এর আগেও একবার গ্রেফতার হয়েছেন বলে শুনেছি। পরে জামিন পেয়েছেন। আমাদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। আমরা সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কর্মী পাঠিয়ে থাকি। তাদের যোগাযোগ করেও কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। যোগাযোগ করলে আমরাই পাঠিয়ে দিতাম।

বিজ্ঞাপন

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্য জানতে পিবিআইতে ডাকা হয়েছিল। আমাদের অবহেলাকে দায়ী করে বাতেন বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু আমরা যে নির্দোষ, তা জানিয়েছি। বাতেন কর্মীদেরও বলেছেন আমাদের অবহেলার কথা। কিন্তু কর্মীদের যখন আমাদের কাছে নিয়ে আসা হয়েছে, তখন তাদের ভিসার মেয়াদ ছিল না। আমরা আমাদের সব বক্তব্য জানিয়েছি।

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন