বিজ্ঞাপন

গ্রন্থাগার অধিদফতরের ভবন নির্মাণ প্রকল্পে বিদেশ সফর থাকছেই

January 5, 2021 | 8:29 am

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: অনেক সমালোচনা হলেও ‘গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের বহুতল ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বাদ দেওয়া যায়নি। শেষে কাটছাঁট করে তাদের সফরের খরচ দুই কোটি টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা কমিয়ে দেড় কোটি টাকা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে পরামর্শক খাতের ব্যয়। সব মিলিয়ে প্রকল্পটির মোট ব্যয়ও কমানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আজকের (মঙ্গলবার, ৫ জানুয়ারি) বৈঠকে উপস্থাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

এর আগে এই প্রকল্পে ৩০ জন কর্মকর্তার বিদেশ ভ্রমণের জন্য দুই কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপনের চূড়ান্ত প্রস্তুতিও নেওয়া হয়। সারাবাংলায় ‘বিল্ডিং নির্মাণ প্রকল্পে বিদেশ ভ্রমণে ৩০ জন কর্মকর্তা’ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পর সেটি একনেকে অনুবিভাগ থেকে প্রত্যাহার করা হয়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আর বিদেশ সফর অংশটি বাতিল করা যায়নি।

এ প্রসঙ্গে প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ সারাবাংলাকে বলেন, বিদেশ সফরের অংশটি একেবারে বাদ দেওয়া সম্ভব হয়নি। যেহেতু লাইব্রেরি তৈরি করা হবে, তাই বিদেশের লাইব্রেরিগুলো কেমন হয় বা কিভাবে সেগুলো পরিচালনা করা হয়, সেসব বিষয়ে অভিজ্ঞতার প্রয়োজন আছে। ফলে কাটছাঁট করে ব্যয় ১ কোট ৫০ লাখ টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, এর আগে গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপনের জন্য এনইসি/একনেক সমন্বয় অনুবিভাগে পাঠানো হয়েছিল। প্রকল্পে দুই কোটি টাকায় ৩০ কর্মকর্তার বিদেশ সফরের বিষয়টি নিয়ে সারাবাংলা খবর প্রকাশ করেছিল। এ নিয়ে সমালোচনা হলে প্রকল্পটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। সংবাদ প্রকাশের দুই দিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেওয়া হয় এনইসি/একনেক ও সমন্বয় অনুবিভাগে। আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সিনিয়র সহকারী প্রধান মিতু মরিয়মের সই করা ওই চিঠিতে বলা হয়েছিল— ‘একনেকে উপস্থাপনের জন্য গত (২০২০ সাল) ৭ সেপ্টেম্বর ‘গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের বহুতল ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটির অত্যাবশ্যক পুনর্গনের নিমিত্ত ফেরত প্রদানের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৩৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। কিন্তু প্রকল্পটি প্রত্যাহার করার পর বিভিন্ন খাতের ব্যয় পর্যালোচনা করে ৯ কোটি ২২ লাখ টাকা কমানো হয়েছে। ফলে এখন প্রকল্পটির মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৫২৪ কোটি ২৫ লাখ টাকায়। প্রকল্পের আওতায় বহুবিধ সুবিধা সম্বলিত আধুনিক বহুতল ভবন নির্মাণের মাধ্যমে অবকাঠামোগতভাবে গণগ্রস্থাগার অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা হবে।
এছাড়া অবকাঠামো এবং প্রযুক্তিগত সুবিধাদি বাড়ানোর মাধ্যমে পাঠক, গবেষক, তথ্য আহরণকারী ব্যক্তিরাসহ সাধারণের কাছে গণগ্রন্থাগারের ভূমিকাকে আরও আকর্ষণীয় ও কার্যোপযোগী করে তোলা হবে। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী জাতীয় গণগ্রন্থকেন্দ্রের সব জনবল ও কার্যক্রমকে এক ভবনে সংস্থাপনসহ দেশের সব সরকারি গণগ্রন্থাগারের যাবতীয় কর্মকাণ্ড কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয় করা হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

একনেকে অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা গণগ্রন্থাগার অধিদফতর ও গণপূর্ত অধিদফতরের।

বিজ্ঞাপন

 

বিল্ডিং দেখতে বিদেশ যাবেন ৩০ কর্মকর্তা, খরচ ২ কোটি টাকা!

সূত্র জানায়, ‘গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের বহুতল ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পটিতে পরামর্শক খাতে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল বড় অঙ্কের টাকা। এক্ষেত্রে ৯৭৩ জনের জন্য ২৮ কোটি ২২ লাখ ২৪ হাজার টাকা ধরা হয়েছিল। প্রকল্পটি মূল্যায়নে কোভিড-১৯-এর প্রভাব বিবেচিত হয়নি। কেননা ২০১৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ দেয় পরিকল্পনা কমিশন।

এ প্রসঙ্গে পিইসি সভায় পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল— পরামর্শক খাতে ব্যয় যৌক্তিকভাবে কমাতে হবে। একান্ত প্রয়োজনে প্রাথমিক পর্যায়ে বিদেশি পরামর্শক প্রয়োজন হলে সে হিসাবে বিদেশি পরামর্শকের জনমাস কমানোসহ ব্যয় কমাতে হবে।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছিল, পরামর্শক খাতে প্রাথমিকভাবে বিদেশি পরামর্শকের সম্মানী বাদ দিয়ে ব্যয় কমানো হয়েছে। তবে নির্মাণ কাজ যথাযথভাবে শেষ করার জন্য স্থাপত্য ডিজাইন ও স্ট্রাকচারাল ডিজাইন প্রণয়ন করতে হবে। এছাড়া নির্মাণ কাজ চলাকালে তা নিয়মিত পরিদর্শন, মেকানিক্যাল অ্যান্ড প্লাম্বিং ও ল্যান্ডস্কেপিং ডিজাইনসহ পরামর্শকের কাজের পরিধি এবং গুরুত্ব বেশি থাকবে। মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে পিইসি সভার সিদ্ধান্তের আলোকে এ খাতে ব্যয় যৌক্তিভাবে কমানো হয়েছে। অর্থাৎ ২৮ কোটি ২২ লাখ ২৪ হাজার টাকার জায়গায় ১৯ কোটি ৮২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সবশেষ এ খাতের ব্যয় কমিয়ে ধরা হয়েছে ৪৭১ জনমাস পরামর্শকের জন্য ১৪ কোটি ৪০ লাখ ৭১ হাজার টাকা।

প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রাজধানীতে ১০ তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া দু’টি বেজমেন্ট ও ৯ তলা অনাবাসিক ভবন নির্মাণ, দুটি জিপ, একটি ডাবল কেবিন পিকআপ এবং একটি মিনিবাস ক্রয় করা হবে। পরামর্শক, বই ও সাময়িকী কেনা, অফিস ভাড়া, কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ কেনা এবং অফিস সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হবে।

আরও পড়ুন: সারাবাংলায় সংবাদ: গণগ্রন্থাগারের ভবন নির্মাণ প্রকল্প প্রত্যাহার

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন