বিজ্ঞাপন

রক্তের গ্রুপ ও বিসিজি টিকার সঙ্গে করোনার সম্পর্ক নেই: গবেষণা

January 9, 2021 | 11:12 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমিত ব্যক্তিদের ওপর চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, নির্দিষ্ট রক্ত গ্রুপ এবং বিসিজি টিকার সঙ্গে উল্লেখযোগ্য কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাননি গবেষকরা। এছাড়াও কোভিড-১৯ সংক্রমণ মুক্ত হওয়ার পরে আক্রান্তদের একটা বড় অংশ স্মৃতি দুর্বলতা, শারীরিক দুর্বলতা এবং ঘুমে ব্যাঘাতসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। দেশে করোনার হটস্পট বলে পরিচিত ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত এক হাজার ২১ জন রোগীর ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরও অনেক বেশি রোগীর ওপর এই গবেষণা পরিচালনা করা প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন

৮ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থা এলসেভিয়ারের অন্তর্ভুক্ত এবং ফ্রান্স থেকে প্রকাশিত গবেষণা সাময়িকী ‘নিউ মাইক্রোবস অ্যান্ড নিউ ইনফেকশন’র সাম্প্রতিক প্রবন্ধে এই গবেষণা তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণাটি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালসহ সাতটি প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা। গবেষণার সামগ্রিক তত্ত্বাবধানে ছিল ডিজিজ বায়োলজি অ্যান্ড মলিকুলার অ্যাপিডেমিওলজি রিসার্চ গ্রুপ চট্টগ্রাম।

কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীরা সুস্থ হয়ে ওঠার চার সপ্তাহ পর এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়। এতে দেখা যায়, উপসর্গযুক্ত রোগীদের মধ্যে অর্ধেকেরই ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। আক্রান্তদের ৭৫ ভাগই পুরুষ এবং ৩০-৩৯ বছর বয়সের মানুষ সবচেয়ে বেশি (৩০ শতাংশ)। আক্রান্তদের মধ্যে ৩০ শতাংশের অধিক রোগীর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ডি ডাইমার এবং ফেরিটিন বেড়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

গবেষণা ফলাফলে জানানো হয়, দেশের কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৯০ ভাগেরই ইতোপূর্বে সকল টিকা নেওয়া আছে। আক্রান্তদের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় দেশে সবচাইতে বেশি ৩৬ শতাংশ ‘বি’ পজিটিভ রক্তের গ্রুপের মানুষের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া গেছে। ২৯ শতাংশ ‘ও’ পজিটিভ ব্লাড গ্রুপের মানুষের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া গেছে।

গবেষণায় আরও জানানো হয়, দেশে এপ্রিল থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত উপসর্গহীন রোগীর সংখ্যা প্রায় দেড় গুণ করে প্রতিমাসে বেড়েছে । সংক্রমিত হওয়ার পূর্বে যারা দীর্ঘমেয়াদী ওষুধ গ্রহণ করছিলেন তাদের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ পরবর্তী জটিলতা দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও যাদের দীর্ঘমেয়াদী রোগ আছে যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগ তাদের কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার হার এবং সংক্রমণ পরবর্তী সময়ে জটিলতার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেশি পাওয়া গেছে।

গবেষণায় আরও দেখা যায়, কোভিড থেকে সুস্থ হওয়ার চার সপ্তাহ পরেও আক্রান্তদের এক চতুর্থাংশের মধ্যে ব্যথা, শারীরিক দুর্বলতা, বিষণ্নতা ও নিরবচ্ছিন্ন ঘুম বাধাগ্রস্ত হয়। এছাড়াও ৭০ ভাগ রোগীর চিকিৎসাতেই অ্যাজিথ্রোমাইসিন বা জিমাক্স এবং ৪৫ ভাগের ক্ষেত্রে মোনাশ ব্যবহৃত হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় গবেষণায়।

বিজ্ঞাপন

গবেষণায় জানানো হয়, শ্বাসকষ্টের রোগীদের মধ্যে কোভিড থেকে সুস্থ হওয়ার পরেও উল্লেখযোগ্য হারে স্মরণশক্তি কমে যাওয়া, মনঃসংযোগ কমে যাওয়া, ঘুমের সমস্যা ও বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথা পরিলক্ষিত হয়েছে। রোগীদের অর্ধেকেরই পরিবারের বা বাইরের কোনো কোভিড আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে আক্রান্ত হওয়ার আগে এক সপ্তাহের মধ্যে দেখা হয়েছে। মাত্র পাঁচ ভাগের বিদেশ ফেরত কোনো ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে।

গবেষণার নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক ড. আদনান মান্নান, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক ড. মুশতাক ইবনে আয়ুব ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডা. ফারহানা আক্তার।

গবেষণার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের দায়িত্বে ছিলেন স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. নঈম উদ্দিন হাছান চৌধুরী। গবেষণা তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন- রোগতত্ত্ববিদ ডা. ওমর কাইয়ুম, ঢাকা মহানগর হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ডা. সানজিদা হোসেন, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ডা. প্রসূন বিশ্বাস এবং চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আবদুর রব মাসুম।

এ প্রসঙ্গে গবেষক দলের অন্যতম প্রধান ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী বলেন, ‘এই গবেষণায় কোভিড-পরবর্তী প্রতিক্রিয়াকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এবং দেখা গেছে দীর্ঘ মেয়াদী রোগে ভোগা মানুষজন বেশি ঝুঁকির মুখে থাকে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে আমাদের এই গবেষণা ফল সামঞ্জস্যপূর্ণ। এছাড়া গবেষণায় কোভিড-পরবর্তী জটিলতার যে চিত্র পাওয়া গেছে তা ভবিষ্যতে এ রোগ থেকে সেরে ওঠা মানুষজনের অন্যান্য রোগের ধরন অনুসরণে সহায়ক হবে।’

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আদনান মান্নান বলেন, ‘ইতোপূর্বে আমরা ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে করোনার প্রকোপ দেখতে পেয়েছিলাম আরেকটি গবেষণায়। এই গবেষণায় দেখা গেছে, অন্যান্য দেশে যেভাবে নির্দিষ্ট কিছু রক্ত গ্রুপের মানুষের কোভিড-১৯ হবে বা বেশি আক্রান্ত হবে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে, আমাদের দেশে তেমন কোনো সুনির্দিষ্ট সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মুশতাক ইবনে আয়ুব বলেন, ‘দেশে উপসর্গবিহীন রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। তাদের নমুনা বিশ্লেষণ করে দেখা উচিত কোনো নতুন প্রজাতির বা ভিন্ন ধারার জিনগত গঠনের করোনাভাইরাসের উপস্থিতি এর পেছনে দায়ী কিনা।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডা. ফারহানা আক্তার বলেন, ‘বিসিজি টিকা কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষা দিতে পারে এরকম কোনো শক্ত প্রমাণ আমরা দেখতে পাইনি। এছাড়াও ভবিষ্যতে সুস্থ রোগীদের অ্যান্টিবডির মাত্রা নিয়ে তথ্য প্রয়োজন। তবে আরও অনেক বেশি রোগী (অন্তত এক লাখ) এর উপর গবেষণা পরিচালিত হওয়া উচিত।

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন