বিজ্ঞাপন

শোষিত দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে মুক্তির মহানায়ক

January 12, 2021 | 12:22 pm

শাহীনূর সরকার

ঢাকা: নয়মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীন হয়েছে দেশ। তারপর পেরিয়েছে প্রায় দুই মাস। সদ্য স্বাধীন এই রাষ্ট্র কীভাবে পরিচালিত হবে, কারা পরিচালনা করবে সবকিছুই থেমে ছিলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য। পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি নেতার দেশে ফেরার অপেক্ষায় ছিল সমগ্র বাংলাদেশ। ইতিহাসের পাতা থেকে দেখা যায় বঙ্গবন্ধু ফিরে আসার পর থেকে দ্রুত পাল্টে যেতে থাকে স্বাধীন বাংলাদেশের দৃশ্যপট। তৃতীয় দিনেই নতুন দেশ পরিচালনার জন্য গঠিত হয় সরকার। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ যেমন একটি শোষিত দেশকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিল। তেমনি ১০ জানুয়ারি স্বাধীন দেশে শেখ মুজিবুর রহমানের পদার্পন পাল্টে দিয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের দৃশ্যপট। দেশে পা রেখেই ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দান থেকে সর্বস্তরের মানুষকে যার যার অবস্থান থেকে দেশ গড়ার কাজে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছিলেন। আর তারপরই বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে সুপ্রতিষ্ঠিত করে গড়ে তোলার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু।

পরদিন ১১ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের বাসায় রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বৈঠক হয়। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয় সংসদীয় ব্যবস্থা চালু করার। জারি করা হয় অস্থায়ী সাংবিধানিক আদেশ। সব মিলিয়ে বলা যায় সেইদিনই বাংলাদেশে একটি সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো।

এছাড়া, ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর এবং ১৯৭১ সালের জানুয়ারি ও মার্চে নির্বাচিত সব এমএনএ (জাতীয় পরিষদের সদস্য) ও এমপিএ’রা (প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য) যদি অযোগ্য বিবেচিত না হয়ে থাকে, তাহলে তারাই বাংলাদেশের প্রথম গণপরিষদ গঠন করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। এসব সদস্যরা দেশের সংবিধান প্রণয়ন করবে বলেও সেদিন ঠিক করা হয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

এর পরদিনই বাংলাদেশে রচিত হয় আরেক ইতিহাস। রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বাঙালি জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

সেদিন কোন সাধারণ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হয়নি। অনুষ্ঠানটি ছিল চিরাচরিত যেকোন সরকারপ্রধানের শপথ অনুষ্ঠানের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। বঙ্গভবনের সেই ঐতিহাসিক মুহুর্ত ছিল বিপুল করতালি, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ আর ‘বঙ্গবন্ধু জিন্দাবাদ’ ধ্বনিতে মুখর।

সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি, কালো মুজিব কোট আর সাদা চাদর গলায় জড়িয়ে দরবার হলে প্রবেশ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সঙ্গে ছিলেন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগের পর নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। তাজউদ্দীন আহমেদ ও তার মন্ত্রিসভা পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর নতুন রাষ্ট্রপতি, শপথ পাঠ করান  বঙ্গবন্ধু ও তার মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যদের।

বিজ্ঞাপন

এরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এসময় বঙ্গবন্ধুকে ‘জাতির জনক’ বলে উল্লেখ করেন প্রেসিডেন্ট আবু সাঈদ চৌধুরী। শপথের পরই রাষ্ট্রপতি, বঙ্গবন্ধুকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। আর বঙ্গবন্ধুকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে হলঘরে উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে। নতুন দায়িত্ব পেয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাংলাদেশের প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্যই তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধুর সেই মন্ত্রিসভায় ছিলেন, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মনসুর আলী, খন্দকার মোশতাক আহমদ, আবদুস সামাদ, এ এইচ এম কামরুজ্জামান, শেখ আবদুল আজিজ, অধ্যাপক মো. ইউসুফ আলী, আলহাজ জহুর আহমদ চৌধুরী, ফণীভূষণ মজুমদার ও ড. কামাল হোসেন।

স্বাধীন দেশের প্রথম এবং সদ্য গঠিত সরকার সেদিন রাতেই শহীদ মিনার, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান।

ঐতিহাসিক এ নেতার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাওয়ার কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। একদিকে চলে দেশকে পুনর্গঠনের কাজ, অন্যদিকে সচল হতে শুরু করে কূটনীতি। জাতীয় সংগীত, রণসংগীত নির্ধারণ, ছোট ছোট সশস্ত্র গোষ্ঠীর ওপর নিয়ন্ত্রণ, মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র জমা, ভারতীয় বাহিনীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এমন কাজগুলো খুব দ্রুত হয়েছিল। সেবছরই কার্যকর হয়েছিল বাংলাদেশের সংবিধান।

বিজ্ঞাপন

ক্ষণস্থায়ী জীবনে মাত্র সাড়ে তিন বছর দেশ পরিচালনার সুযোগ পেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। এরমধ্যেই বাংলাদেশকে একটি আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন তিনি। স্থাপন করেছিলেন উন্নয়নের শক্ত ভিত।

সরাবাংলা/এসএসএস

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন