বিজ্ঞাপন

জনকের রাষ্ট্রভার গ্রহণ; জনগণের অধিকার নিশ্চিত হয়েছিল যেদিন

January 12, 2021 | 1:41 pm

রা’আদ রহমান

১০ জানুয়ারি, ১৯৭২। জনক ফিরলেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদের অবিসংবাদিত নেতা, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফিরলেন তার স্বপ্নের স্বাধীন সার্বভৌম সোনার বাংলায়। ২৮১ দিনের দীর্ঘ মুক্তিযুদ্ধে তিনি ছিলেন সর্বাধিনায়ক, সুপ্রিম কমান্ডার। নিজের জনগণকে রক্ষা করতে পাকিস্তানিদের হাতে বন্দী হয়েছিলেন তিনি। এক মুহূর্তের জন্যও মৃত্যুভয় তাকে স্পর্শ করেনি। পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী ছিলেন যখন, তখন তার লাখো সন্তান লাখো মুক্তিযোদ্ধা হয়ে প্রচণ্ড বজ্র হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল শত্রুর উপর, অকাতরে ভীমগর্জনে তারা লড়েছে, জীবন দিয়েছে তার নামে, নেতার নামে, পিতার নামে।

বিজ্ঞাপন

তিনি হয়ে উঠেছিলেন লড়াকু বাঙালি জাতির প্রতিশব্দ, ফিজিক্যাল এমবডিমেন্ট অফ ইন্ডিপেন্ডেন্স। ‘জ্বলেপুড়ে মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়’—কবি সুকান্তের এই লাইনের সার্থক রূপায়ণ ঘটিয়েছিল বাঙালি জাতি মুজিবকে ধারণ করে। মুক্তিযুদ্ধের সেই সর্বাধিনায়ক, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু অবশেষে তার সন্তানসম জনগণের কাছে ফিরলেন। এতো ঝড়ঝাপটা আর দীর্ঘ অনিশ্চয়তার পথ পেরিয়ে স্বদেশের মাটিতে নিজের জনগণের কাছে ফেরার এই ঐতিহাসিক ঘটনার পরের দু’টো দিন ছিল আরও গুরুত্বপূর্ণ এবং ঘটনাবহুল।

বঙ্গবন্ধু স্বদেশে ফেরার ঠিক পরদিনই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাক্ষরিত ‘বাংলাদেশের অস্থায়ী সংবিধান আদেশ, ১৯৭২’ জারি করা হয়। তাতে বলা হয় ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর এবং ১৯৭১ সালের জানুয়ারি ও মার্চে নির্বাচিত ও অন্য কোনো কারণে অযোগ্য ঘোষিত নয় এরকম সব এমএনএ (মেম্বার অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি) ও এমপিদের সমন্বয়ে বাংলাদেশের প্রথম গণপরিষদ গঠিত হবে এবং প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের মনোনীত করবেন। এ আদেশ বাংলাদেশের সব অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য হবে। এই অস্থায়ী সংবিধান আদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালন ব্যবস্থা সংসদীয় গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যায়।

পরদিন ১২ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিচারপতি আবু সাদাত মো. সায়েমকে অস্থায়ী সংবিধান আদেশের ভিত্তিতে (Provisional Constitutional Order, 1972) প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ করেন। প্রধান বিচারপতি সায়েম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুকে শপথ বাক্য পাঠ করান এবং এর পরপরই বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতির পদ হতে পদত্যাগ করেন। এরপর প্রধান বিচারপতি সায়েম অস্থায়ী সংবিধান আদেশের ৮ নম্বর ধারা বলে মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্তক্রমে বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি পদে শপথবাক্য পাঠ করান। নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে আবু সাইদ চৌধুরী শপথ নেবার পরপরই মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা তাজউদ্দীন আহমেদ তার পদত্যাগপত্র জমা দেন।

বিজ্ঞাপন

এরপর একে একে পদত্যাগ করেন মন্ত্রিসভার সকল সদস্য। একাত্তরের নয় মাসব্যাপী মুক্তিসংগ্রাম চলাকালে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ যুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের নিরলস কর্মতৎপরতা ও সার্বিক ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি আবু সাইদ চৌধুরী মন্ত্রিসভার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন। তারপর তিনি বঙ্গবন্ধুকে প্রধানমন্ত্রী পদ গ্রহণের অনুরোধ জানান। বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনক উল্লেখ করে বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরী বলেন, “বঙ্গবন্ধু জাতির জনক ও অবিসংবাদিত নেতা, যার ওপর জনসাধারণের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। আমি আশা করি, আপনি রাষ্ট্রভার গ্রহণ করবেন।”

সচরাচর রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানগুলো গুরুগম্ভীর এবং গাম্ভীর্যপূর্ণ হয়। কিন্তু স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শপথগ্রহণের অনুষ্ঠান ছিল এক ব্যতিক্রমী ও বৈচিত্র্যপূর্ণ ঘটনা। পরদিনের পত্রিকাগুলোর খবরে ফলাও করা ছাপা হওয়া সংবাদ থেকে জানা যায়, বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির আহ্বানের পরেই উপস্থিত সবাই হর্ষধ্বনি দিতে থাকে। বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করার পর পুরো বঙ্গভবন জুড়ে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়। বিপুল করতালি, উল্লাস, হর্ষধ্বনি আর জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে উপস্থিত সকলের জাতির জনকের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বগ্রহণকে সাদরে অভ্যর্থনা জানান এবং সকলের উল্লাসের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি আবু সাইদ চৌধুরী সদ্য প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আলিঙ্গন করে অভিবাদন জানান। ব্যতিক্রমী এই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের পুরোটাই পরিচালিত হয় বাংলায়। দেশি-বিদেশি অসংখ্য মিডিয়ায় এই বৈচিত্র্যময় শপথের খবর গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের পর বঙ্গবন্ধু তার মন্ত্রিসভার ১১ সদস্যের নাম জমা দেন রাষ্ট্রপতির কাছে। রাষ্ট্রপতি মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষণা করার পর তারা একে একে শপথ নেন রাষ্ট্রপতির কাছে। মন্ত্রীরা ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মনসুর আলী, আবদুস সামাদ, এ এইচ এম কামরুজ্জামান, শেখ আবদুল আজিজ, অধ্যাপক মো. ইউসুফ আলী, খন্দকার মোশতাক আহমদ, আলহাজ্ব জহুর আহমদ চৌধুরী, ফণীভূষণ মজুমদার ও ড.কামাল হোসেন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা সেদিন রাতেই শহীদ মিনার ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং একে ফজলুল হকের মাজার জিয়ারত করেন।

বিজ্ঞাপন

বাসসের খবরে বলা হয়, শপথ অনুষ্ঠানের পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী অন্যদের সঙ্গে নিয়ে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে যান। সেখানে নবনিযুক্ত রাষ্ট্রপতি সাংবাদিকদের বলেন, শহীদদের স্মরণে তার হৃদয়-ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছে। যারা স্বাধীনতার জন্য জীবন দিলো তারা আমাদের এই মুক্তির দিনটি দেখতে পেলো না।পাকিস্তান পর্বের ২৪ বছরের দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের সময়ে যে শেখ মুজিব পাকিস্তানি সেনাশাসকদের চাপিয়ে দেওয়া মিলিটারি ডিক্টেটরশিপের থেকে বাংলার সাধারণ মানুষকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন এবং স্বাধিকার ও মুক্তির আন্দোলনে নিরলস সংগ্রাম করে গেছেন, জনগণের মৌলিক অধিকার এবং জনগণের অংশগ্রহণে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েমের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন, সেই শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু ও জাতির জনক হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হবার পর সবার প্রথমেই বাস্তবায়ন করলেন সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। একদিনও বিশ্রাম নেননি তিনি, দীর্ঘ নয় মাসের কারাবাস এবং ক্লান্তিকে তুচ্ছ করে স্বদেশে ফিরেই সবার প্রথমে বঙ্গবন্ধু নিশ্চিত করেন তার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার।

এতে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছিলেন বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। বঙ্গভবনে সাংবাদিকদের বলেন, “আজ আমি সবচেয়ে বেশি সুখী লোক। আমি পার্লামেন্টারি গণতন্ত্র চেয়েছিলাম, নেতা তা গ্রহণ করেছেন।” শাসনতন্ত্র উপদেষ্টা ড. কামাল হোসেনের বক্তব্য প্রকাশ করে দৈনিক বাংলা, যেখানে তিনি অস্থায়ী শাসনতন্ত্র আদেশ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, শাসনতন্ত্রী আদেশে পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রের ব্যবস্থা রয়েছে এবং অনুরূপ গণতন্ত্রে জনগণের প্রতিনিধিদের সংসদ ও সরকার গঠিত হয়। শাসনতন্ত্র উপদেষ্টা আরও বলেন যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রের প্রবক্তা এবং বাংলাদেশে পার্লামেন্টারি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করাই তার সরকারের ইচ্ছা।

বিজ্ঞাপন

১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে একদিনও বিশ্রাম নেননি বঙ্গবন্ধু। দেশ পরিচালনা ও পুনর্গঠনের নীতিনির্ধারণী বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে তার সহযোদ্ধা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করতে থাকেন তিনি। এরমাঝ চলতে থাকে সাধারণ জনগণের সাথে সাক্ষাতপর্ব। স্রোতের মতো অসংখ্য মানুষ ১৮ নম্বরের ভাড়া বাসায় বঙ্গবন্ধুকে এক নজর দেখতে আসেন, সাক্ষাৎ করতে আসেন। ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হলেও বঙ্গবন্ধু বেশ কয়েকবার বাসার সামনে জনগণের মাঝে নেমে আসেন এবং সাক্ষাৎ দেন। দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু এ সময়ে কোনো ধরনের প্রটোকল নেননি। বিনা প্রটোকলে জাতির জনক স্রেফ একজন সাধারণ মানুষ হয়ে মিশে গিয়েছিলেন তার জনগণের সাথে। ১২ জানুয়ারি দৈনিক সংবাদের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১১ জানুয়ারি সকাল ১১টায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগ দিয়ে বিকাল পৌনে ৩টায় শাহবাগে হোটেল কর্মচারীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বঙ্গবন্ধু। সাড়ে ৫টায় বেরিয়ে এলে তার চারপাশে অজস্র মানুষের ভিড় জমে যায়। আমাদের কাছে হয়তো মনে হতে পারে ব্যাপারটা রাষ্ট্রপতির বিনা প্রটোকলে জনগণের সাথে মেশার মতো অবিশ্বাস্য ঘটনা, কিন্তু আসলে তো বঙ্গবন্ধু পিতা হিসেবে তার সন্তানদের কাছে গিয়েছিলেন, ভালোবেসেছিলেন নিঃশর্তভাবে।

সে কারণেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে নতুন করে পুনর্গঠনের কাজে অবিশ্রান্তভাবে লেগেছিলেন দেশে ফেরার দিন থেকেই। প্রায় মাটির সাথে মিশে যাওয়া পুরো দেশের অবকাঠামো, লুট হয়ে যাওয়া প্রায় শূন্য খাদ্যভাণ্ডার ও কোষাগার, ভেঙে পড়া যোগাযোগব্যবস্থা এবং পঙ্গু হয়ে যাওয়া অর্থনৈতিক সকল কার্যক্রম নতুনভাবে পুনর্গঠন ও শুরুর জন্য ১১ তারিখ থেকেই আপ্রাণ প্রচেষ্টা শুরু করেন বঙ্গবন্ধু এবং তার সহযোদ্ধারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোষাগার লুট করে বাকি অর্থ ও সম্পদ পুড়িয়ে দিয়ে গেছে পাকিস্তানি দখলদারেরা। খাদ্য-গুদামগুলো হয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অথবা লুট করা হয়েছে, সুতরাং সবচেয়ে জরুরি ছিল কূটনৈতিক কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বিভিন্ন দেশের স্বীকৃতি আদায় ও তাদের সাথে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরু করা।

তারই আলোকে প্রথম এগিয়ে আসে ভারত। ইন্দিরা গান্ধীর সরকার বাংলাদেশকে জরুরিভিত্তিতে ২৫ কোটি টাকা মূল্যের কাঁচামাল, ইস্পাত, সার, পেট্রোলিয়াম ও অন্যান্য দ্রব্য দান হিসেবে সরবরাহ করতে সম্মত হয়েছে বলে জানানো হয়। এছাড়াও বাংলাদেশের অর্থনীতির শিল্প ও কৃষি খাতগুলোকে আবারও চালু করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে বৈদেশিক মুদ্রায় ৫০ লাখ পাউন্ড স্টার্লিং ঋণ দিতে সম্মত হয় ভারত সরকার। ১১ তারিখ বঙ্গবন্ধু নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের জানান, ইন্দিরা গান্ধী শীঘ্রই বাংলাদেশ সফরে আসবেন।

বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সাথে সাথে সবচেয়ে জটিল যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হন, সেগুলো হচ্ছে: উদ্বাস্তুদের ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসন এবং প্রথম ফসল ওঠার আগ পর্যন্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করা। দ্বিতীয়ত, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। তৃতীয়ত, বিধ্বস্ত যোগাযোগব্যবস্থার মধ্যেও খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা। চতুর্থত, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামো পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।

আজকে ২০২০ সালে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ আর অর্থনৈতিকভাবে ক্রমেই আরও শক্তিশালী দেশে পরিণত হওয়ার বাস্তবতায় আমরা হয়তো ধারণাও করতে পারবো না শূন্য কোষাগার আর মাটির সাথে মিশে যাওয়া ভেঙেচুরে পুড়ে ছাই হওয়া একটা বিধ্বস্ত দেশের প্রধানমন্ত্রীত্ব নেওয়ার চ্যালেঞ্জটা কী অকল্পনীয় কঠিন! বিশেষ করে আর সবকিছু বাদ দিলেও স্রেফ প্রথম ফসল ওঠার আগ পর্যন্ত তাৎক্ষণিকভাবে বহির্বিশ্ব থেকে সাহায্য বা ত্রাণের ব্যবস্থা করে সাধারণ জনগণকে খাবার যোগানোই ছিল ঠেলে পাহাড় সরানোর চেয়েও কঠিন। সেই কঠিন সময়ে নেতার দৃঢ়তায়, পিতার স্নেহে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দূরদর্শিতায় বঙ্গবন্ধু তার সহযোদ্ধাদের নিয়ে লড়েছেন এক অসম লড়াই। দেশকে নিজের পায়ে দাঁড় করাবার, জনগণকে অনুপ্রেরণা দিয়ে আত্মনির্ভরশীল ও স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলবার সেই লড়াই জন্মযুদ্ধের চেয়ে কোনো অংশেই কম ছিল না। আর এই কঠিন লক্ষ্যে মানুষটার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড় ঐশ্বর্য—তার সন্তানসম জনগণের ভালোবাসা। নেতা ও পিতার মিশেলে এমন রাষ্ট্রনায়ক খুব বেশি আসেনি আর।

সারাবাংলা/এসবিডিই/আইই

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন