বিজ্ঞাপন

হুট বলতেই সীতাকুণ্ড- পাহাড়ে সমুদ্রে একদিন (পর্ব-১)

March 18, 2018 | 2:48 pm

আব্দুল্লাহ আল মামুন এরিন ।।

বিজ্ঞাপন

কিছুদিন ধরে মনটা যেন কিছুতেই অফিসের ডেস্কে বসছে না। শরীরটা যদিও চেয়ারে বসে থাকে, মন উড়াল দেয় কখনও পাহাড়ের চূড়ায়, কখনও বা গিয়ে সাগর তীরে সন্ধ্যা নামায়। সারা সপ্তাহ যায় কর্মব্যস্ততায়। শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। তাই একদিন শুক্রবার দুপুরের দিকে হাতে থাকা অফিসের কাজটা শেষ করে ইউটিউবে একজন ট্রাভেলারের চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ভ্রমণের ভিডিও দেখছিলাম। তিনি কখনও পাহাড়ে চড়ছেন আবার কখনও সাগরে ঝাঁপ দিচ্ছেন। ভিডিওটা দেখতে দেখতে মনটা যেন আর কিছুতেই বাঁধ মানতে চাইলনা। সঙ্গে সঙ্গে সুমন ভাই (বন্ধুর মত সম্পর্কের বড় ভাই) কে ফোন দিয়ে জানতে চাইলাম সে শনিবার ফ্রি আছে কি না। সুমন ভাইর কাছ থেকে ইতিবাচক উত্তর পেলাম।

এদিকে ওয়ালেট বের করে দেখি মাত্র পাঁচশ টাকার একটা নোট। এত কম টাকা নিয়ে কীভাবে ঘুরে আসব চিন্তা করছিলাম। তবে বিভিন্ন ভ্রমণ বিষয়ক গ্রুপ গুলোতে অনেকসময়ই দেখি কম খরচে সুন্দর ভাবে ঘুরে আসার নানা কাহিনী। এদেরকে বলে বাজেট ট্রাভেলার। এসব দেখে সাহস করে চিন্তা করলাম এই পাঁচশ টাকা দিয়েই সীতাকুণ্ড থেকে ঘুরে আসব। তার মানে হাতে আছে এক দিন আর পাঁচশ টাকা। যাওয়া আসা থাকা খাওয়া সম্পর্কিত সব তথ্য ট্রাভেলারস গ্রুপের কয়েকটা পোষ্ট দেখে তথ্যগুলো মাথায় ঢুকিয়ে নিলাম।

বিজ্ঞাপন

রাত সাড়ে দশটায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে মেইল ট্রেন ছেড়ে যায়। আমি আর সুমন ভাই স্টেশনে পৌঁছলাম রাত ঠিক দশটায়। এরপর উনিশ নাম্বার কাউন্টার থেকে প্রতিটা একশ দশ টাকা করে দুইটা টিকিট নিলাম। লাল রঙের ছোট্ট দুইটা টিকিট হাতে নিয়ে মনে হল, অবশেষে যাচ্ছি স্বপ্নের ভ্রমণে।
টিকেট তো পেলাম, এবার ট্রেন আসার অপেক্ষায় বসে থাকা। একসময় অপেক্ষার পালা শেষ হলে ট্রেন এল। এটা যেহেতু মেইল ট্রেন তাই যে আগে উঠে সিট দখল করতে পারবে, সেই বসে যেতে পারবে। তাই ট্রেনে উঠেই দৌড় ঝাঁপ করে দুজন দুটো সিটে বসে পড়লাম। ট্রেন ছাড়লো দশটা চল্লিশ এ। ট্রেন চলতে শুরু করেল দুজনের কেউই ভ্রমনের উত্তেজনায় ঘুমাতে পারলাম না এক বিন্দুও। সারারাত নির্ঘুম থেকে জানালার পাশে বসে গল্প করে কাটিয়ে দিলাম।

এখানে একটু বলে নেই যে, ট্রেনের মধ্যে কিছু দালাল ধরণের লোক দেখবেন যারা এক সিটে বসে কয়েক টা সিট ধরে রাখে এবং যখন মানুষ সিটের জন্য হাহাকার করে তাদের কাছে প্রতি সিট পঞ্চাশ টাকা করে বিক্রি করতে চায়। এই ধরণের লোক দেখলে এড়িয়ে চলবেন। কারণ ট্রেন ছাড়লে এরা সাধারণত নেমে যায় আর তখন সিটগুলোও খালি হয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

সকাল সাতটায় ট্রেন সীতাকুণ্ড পৌঁছে গেল। আহ, সেদিনের সেই সকাল! মনে হচ্ছিল পাহাড়ের ফাঁকে আলো নিয়ে চুপ করে বসে থাকা সূর্যটা ধীরে ধীরে তার রশ্মি মেলে দিচ্ছে। আর সেই সোনালি রশ্মি এসে মুছে দিচ্ছে চারপাশের কুয়াশা। ট্রেন থেকে নেমে পাশের হোটেলে ঢুকে দুজন মিলে ডিম আর ডাল দিয়ে রুটি খেয়ে নিলাম। খাবারের বিল মাত্র পঞ্চান্ন টাকা!

সীতাকুণ্ড স্টেশন থেকেই পাহাড়চূড়ার চন্দ্রনাথ মন্দির দেখা যায়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমেই আমরা চন্দ্রনাথ মন্দিরে যাওয়ার কথা তারপর গুলিয়াখালী সী বীচ। সেই অনুযায়ী যাত্রা শুরু করলাম।

সীতাকুণ্ড স্টেশনের ঠিক বীপরিতে একটা আম গাছের নীচ দিয়ে ছোট্ট একটা পায়ে চলা রাস্তা চলে গেছে। সেই রাস্তা ধরে হাঁটা শুরু করলাম। পথে কয়েকজন কে জিজ্ঞাসা করলে ওরা রাস্তা দেখিয়ে দিল। বিভিন্ন ধরণের মন্দির ঘেরা রাস্তা ধরে বিশ থেকে পঁচিশ মিনিট হাঁটলেই চন্দ্রনাথ মন্দিরে ওঠার মুল ফটকে পৌঁছে গেলাম।
এখানে একটু বলে রাখি চন্দনাথ মন্দিরে ওঠার সময় পাহাড়ি রাস্তার মাঝে অনেক সময় ছিনতাইকারির কবলে পড়তে পারেন তাই সাথে খুব বেশি কিছু না নেওয়াই ভালো। এরকম ক্ষেত্রে মন্দিরের ভেতরে ব্যাগ বা গুরুত্বপূর্ণ সব কিছু রেখে যেতে পারেন। আমরা মন্দিরের ভেতরে ব্যাগ রেখে পাহাড়ে উঠেছিলাম।

বিজ্ঞাপন

সকাল আটটায় আমরা পাহাড়ের ওঠার মূল ফটকে পৌঁছে গেলাম। তারপর আস্তে আস্তে সিঁড়ি বেয়ে যত উপরে উঠি ততই যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। চারপাশে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল সবুজের সাগরে হারিয়ে যাচ্ছি আর সামনে বিশাল বিশাল পাহাড়। মনে হচ্ছিল পাহাড়গুলো যেন হাত বাড়ালেই ছুঁয়ে ফেলা যায়। কিন্ত ছোঁয়া যায় না খুব সহজে। সিঁড়ির পর সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে গলা শুকালেও পা কিন্তু থামতেই চাচ্ছেনা সামনে থাকা পাহাড়ের ঈশারায়। উপরে তাকালে পাহাড় চুড়ায় লাল রঙের চন্দ্রনাথের মন্দির আর নীচে তাকালে সবুজ পাহাড়ের ঢেউ। কিছুক্ষন পর পর থেমে থেমে বুক ভরে নিশ্বাস নিচ্ছি আর সেইসাথে গলাও ভিজিয়ে নিচ্ছি।

পাহাড়ের আঁকাবাঁকা সিঁড়িওয়ালা রাস্তা একটা সময় পৌঁছে দিল সেই কাঙ্খিত চন্দ্রনাথ মন্দিরে যেখানে নীল আকাশের সাথে পাহাড়চূড়ার দূরত্ব খুব কম। মজার ব্যাপার হল চন্দ্রনাথ মন্দির থেকে নীচে তাকালে অন্য একটা পাহাড়ের চুড়ায় একটা শিব মন্দির দেখা যায় যার নাম বিরুপাক্ষ মন্দির। পাহাড়ের গায়ে বয়ে যাওয়া আঁকাবাঁকা রাস্তা গিয়ে মিলেছে সেই মন্দিরে। কি যে অপার্থিব সেই সৌন্দর্য! ভাষায় প্রকাশ করতে পারবনা।
চন্দ্রনাথ মন্দিরে ওঠার সময় কয়েকটা গাছে অনেক ধরনের জিনিস বাঁধা আছে দেখলাম। এখানে যারা মানত করে করে তারা বেঁধে রেখে যায় হয়ত। আমাদের চন্দ্রনাথ মন্দিরে উঠতে সময় লেগেছিল প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো। আর ওঠার পরে অসাধারণ অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা আমাদের মনে আজীবনের জন্য সুন্দর স্মৃতি হয়ে জমা থাকবে।

পাহাড়ের পর একই দিনে কীভাবে সমুদ্র ভ্রমণের অভিজ্ঞতা হল তা জানতে চোখ রাখুন দ্বিতীয় পর্বে।

হুট বলতেই সীতাকুন্ড- পাহাড়ে সমুদ্রে একদিন (২য় পর্ব)

লেখক- সংবাদকর্মী, সারাবাংলা ডট নেট

ছবি- লেখক

সারাবাংলা/আরএফ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন