বিজ্ঞাপন

২০২১ একটি প্রত্যাশাময় বছর

January 15, 2021 | 4:05 pm

আজহার মাহমুদ

কালের পরিক্রমায় হারিয়ে গেল আরও একটি বছর। কী পেলাম আর কী পেলাম না সে হিসেব আর করতে চাই না। চাই না প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির হিসেব মিলাতে। এবার চাইবো নতুনের কেতন উড়াতে। নতুন বছর অর্থাৎ একুশ সালটা যেন একটি প্রত্যাশাপূর্ণ বছর হয় সেই স্বপ্ন বুনতে চায় পুরো বাঙালি জাতি। নতুন এই বছর নিয়ে স্বপ্ন দেখার কারণও আছে। এই সালটা আসলেই প্রাপ্তির সাল। হয়তো প্রাপ্তিতে প্রাপ্তিতে ভরে উঠবে ২০২১। মানুষের মন থেকে বিশের বিষ নামানোর জন্য এসব প্রাপ্তি আসলেই জরুরি।

বিজ্ঞাপন

করোনার ভ্যাকসিন
২০২১ সালের মধ্যে করোনার ভ্যাকসিন আসবে বলে বিশ্বের অনেক দেশ বলেছিল। তবে সেটা বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলা দিয়ে গেছে সকলের মনে। তবে সকল অনিশ্চয়তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঠিকই ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়েছে। যা ইতিমধ্যে মানব শরীরে প্রয়োগও করা হয়েছে সফলভাবে। আর এই ভ্যাকসিন ২০২১ সালের শুরুর দিকেই বাংলাদেশের মানুষ পাবে। এটা সত্যিই একটি বিরাট প্রাপ্তির খবর। এই প্রাপ্তি বড্ড প্রয়োজনীয় প্রাপ্তি। এই ভ্যাকসিন আবারও মানুষের চাপা কান্না বন্ধ করে মুখে হাসি ফুটাতে পারবে।

ভিশন-২১
ভিশন ২০২১-এর প্রধান লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো নির্ধারিত সময়ে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা, যেখানে চরম দারিদ্র্য সম্পূর্ণভাবে বিমোচিত হবে। সেজন্যে একগুচ্ছ সহায়ক কাজ নিশ্চিত করতে হবে। যেমন গণতন্ত্র ও কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠা করা, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং জনপ্রতিনিধিত্বমূলক রাজনৈতিক অবকাঠামো বিনির্মাণ করা, রাজনৈতিক পক্ষপাতবিবর্জিত আইনের শাসন নিশ্চায়ক সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা, রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন করা, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সমঅধিকার নিশ্চিত করা। এমনভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের রূপরেখা প্রণয়ন করা যাতে মৌলিক চাহিদাসমূহ পূরণের নিশ্চয়তা থাকে, জনগণ ও শ্রমশক্তির সুরক্ষার বন্দোবস্ত থাকে, দারিদ্র্য দূরীকরণের ব্যবস্থা থাকে, খাদ্য, পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ব্যবস্থা থাকে, জ্বালানি ও বিদ্যুতের নিশ্চয়তা থাকে, ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, আবাসন, পরিবেশ, পানিসম্পদের নিরাপত্তা থাকে, এবং সার্বিকভাবে জনজীবন ও সম্পদের সুরক্ষা থাকে, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করা। যাতে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত থাকে, জাতীয় সংস্কৃতি ও পররাষ্ট্র নীতি দৃঢ়তর হয়। ভিশন ২০২১ বাস্তবায়ন সম্ভব হলে সত্যিকার অর্থে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নে সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

স্বাধীনতার ৫০ বছর
২০২১ সালের সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। বাঙালি জাতির জন্য এর চেয়ে বড় আনন্দের দিবস কী হতে পারে! স্বাধীনতার ৫০তম বছরে এসে বাংলাদেশ একটি আধুনিক দেশের রূপ নিয়েছে এটাও অনেক বড় প্রাপ্তি এ জাতির জন্য। ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর একটি স্বাধীন মানচিত্র পেলেও এই দেশ ছিল একটি গরীব দেশ। একসময়ের তলাবিহীন ঝুড়ির মতো এই দেশ আজ কতটা সমৃদ্ধ তা নিজ চোখেই উপলব্ধি করতে পারবে যে কোনো নাগরিক। তাই নিঃসন্দেহে এটা ২১ সালের অন্যতম একটি প্রাপ্তি।

বিজ্ঞাপন

অবকাঠামোগত উন্নয়ন
স্বাধীনতার ৫০ বছরে এই বাংলাদেশে অনেক ইতিহাস তৈরি হয়েছে। তবে সেসব ইতিহাসের সঙ্গে এই দেশের চেহারাও পরিবর্তন হয়েছে। বিগত দশ বছর এদেশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছিল দৃশ্যমান। যার-মধ্যে পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মিরসরাই ইকোনোমিক জোন ছিল উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও আরও অনেক প্রকল্প বর্তমান সরকার হাতে নিয়েছে। পদ্মাসেতু গত বছরের শেষ দিকে দৃশ্যমান হলেও মূলত এবছরেই পদ্মাসেতুর সুফল পাবে মানুষ। তাই এটাও একুশ সালের একটি বড় প্রাপ্তি। সেই সাথে বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজও এই সালে সমাপ্ত হওয়ার স্বপ্ন দেখা যায়। সুতরাং বলা যায় অবকাঠামোগত অনেক অনেক উন্নয়নকাজ ২০২১ সালে সমাপ্ত এবং শুরু হবে।

বেকারত্ব
বাংলাদেশে বেকারত্ব বর্তমানে একটি জাতীয় সমস্যা। এই সমস্যা সমাধান অতীব জরুরি। নিকট অতীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেছেনে বেকারত্ব দূর করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এটা যদি বাস্তবায়ন হয় তবে এদেশের লাখ লাখ বেকার তরুণের ভাগ্য খুলবে। ফিরবে হাসির জোয়ার। স্বাধীনতার ৫০ বছরের এই সালটি যেন বেকারদের জন্য আশীর্বাদ হয় সেই কামনা করছি।

দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন
বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের দুর্নীতি ছিল দৃশ্যমান। এই দুর্নীতি ছিল ছোট থেকে বড় বড় সেক্টরেও। করোনার সময় মাস্ক, পিপিই নিয়ে ছিল দুর্নীতি, ছিল করোনার সার্টিফিকেট নিয়ে দুর্নীতি, ছিল পাপিয়া-সম্রাটদের দুর্নীতির গল্প। শুধু তাই নয়, বালিশ কাণ্ড, পর্দা কাণ্ডও এদেশের মানুষ ভুলতে পারেনি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই দুর্নীতির উৎসব থামবে কবে? নতুন বছর সরকার যেন এই বিষয়ে আরও নজর দেয় সেই প্রত্যাশা রইলো।

বিজ্ঞাপন

দরিদ্রতা
বাংলাদেশ আজ দরিদ্রতা থেকে মুক্তি পেয়েছে। এদেশে এখন না খেয়ে মানুষ মারা যায় না। যদিও দরিদ্র জনগোষ্ঠী এখনও এদেশে বিদ্যমান। কিন্তু দরিদ্রতা বিমোচনে শেখ হাসিনার সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা সত্যি প্রশংসনীয়। তবে সরকারের কাছে প্রত্যাশা—আমাদের দেশের খাবার বিক্রি করার ধরনে পরিবর্তন আনা হবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠী যেন সব খাবার তাদের সাধ্যের মধ্যে সংগ্রহ করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। খাদ্য মজুদ করা থেকে বিরত থাকতে হবে সকলকে।

শিক্ষা
পুরো বিশ্বের মতো বাংলাদেশও করোনার কঠিন সময় পার করেছে। করোনায় সবকিছু যেমন থমকে গেছে তেমনি থমকে গেছে শিক্ষাব্যবস্থা। তবে এবার সেখান থেকেই সবাই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। যদিও অথচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনও খোলার নাম নেই। তাই বলা যায়—২০২০ সাল শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অভিশপ্ত বছর। সেই অভিশাপ কাটিয়ে নতুন বছরে শিক্ষার আলো যেন শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে সেই প্রত্যাশা রাখা যায়।

সুশাসন প্রতিষ্ঠা
একটি রাষ্ট্র এগিয়ে যাওয়ার পেছনে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি প্রয়োজন সেটা হচ্ছে সুশাসন প্রতিষ্ঠা। আমি অকপটে বলতে পারি বাংলাদেশে সুশাসন এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাই সরকারের কাছে প্রথম এবং প্রধান দাবী হিসেবে এদেশের মানুষ প্রত্যাশা করে সুশাসন এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা। যদিও সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বেশ কিছু ন্যায় বিচারের নিদর্শন দেখিয়েছেন।

নারীর ক্ষমতায়ন ও সম অধিকার প্রতিষ্ঠা
বাঙালি জাতি নারীকে কী মনে করে সেটা আমার এখনও বোধগম্য নয়। কারণ এ জাতি নারীকে না পারে সম্মান দিতে, না পারে সমান অধিকার দিতে। যদিও নারী জাতিকে সমান অধিকার দেওয়ার আমরা কেউ নই। নারীর অধিকার নারীকেই আদায় করতে হবে। কিন্তু পেশী শক্তির কাছে নারী প্রতিদিন প্রতি রাত হেরে যাচ্ছে। নারী ধর্ষণ, নির্যাতন, হত্যা এসব রোজই চলছে। নারীকে এ জাতি ভোগ্যপণ্য করে তুলছে। বাস-টেম্পো কিংবা সিএনজি কোথাও নারী নিরাপদ নয়। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা সেখানও নারী আজ অনিরাপদ। এই ক্রান্তিকাল থেকে নারী জাতি মুক্তি কবে পাবে? সরকার নতুন আইন করেছে, নারীর প্রতি আরও সহনশীল এবং সহমর্মী হয়েছে। নারীবান্ধব এই সরকারের প্রধানও নারী। নারীদের জন্য এই সরকার সবসময় আন্তরিক। কিন্তু দিনশেষে নারীরা কি নিরাপদ? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাই না। আশা-রাখছি একুশ সালে নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্র কমবে। বলতে লজ্জা লাগছে, তবুও বলতে হয়—এদেশে নারীর মুক্তি মিলছে না। কেন বলছি সেটা প্রতিদিন পত্রিকা আর খবর দেখলেই বুঝবেন।

বিজ্ঞাপন

লেখক: শিক্ষার্থী, ওমরগনি এমইএস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চট্টগ্রাম

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই/আইই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন