বিজ্ঞাপন

ঢাকার পরিবহন প্ল্যান তৈরি, পরামর্শকের বেতনসীমা বেঁধে দিল পিইসি

January 17, 2021 | 10:05 am

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপনডেন্ট

ঢাকা: ঢাকা সিটিতে পরিবহন মাস্টার প্ল্যান তৈরির প্রস্তুতিতে অতিরিক্ত বরাদ্দ ধরায় এবার পরামর্শকের বেতনসীমা বেঁধে দিল প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি)। এক্ষেত্রে একজন টিম লিডারের  মাসিক বেতন ১৮ হাজার ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে) ১৫ লাখ ৩০ হাজার টাকার মধ্যেই রাখতে বলা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া জিআইএস স্পেশালিস্টের বেতন ৮ লাখ টাকা, ইনভায়রনমেন্ট স্পেশালিস্টের জন্য ৩ লাখ টাকা এবং স্পেশাল এক্সপার্টের বেতন ২ লাখ টাকার মধ্যেই বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
গত ৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এই সীমা নির্ধারণ করা হয়। সেই সঙ্গে সব ধরনের পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে বলা হয়েছে।

‘প্রিপারেশন অব কমপ্রিহেনসিভ ট্রান্সপোর্ট মাস্টার প্ল্যান ফর নারায়ণগঞ্জ অ্যান্ড গাজীপুর সিটি করপোরেশন’ প্রকল্পের ক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিইসি। পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন আল রশীদ এই সভায় সভাপতিত্ব করেন।

পরিকল্পনা কমিশন সংশিষ্টরা সারাবাংলাকে জানান, প্রকল্পটির  প্রস্তাবে ২৭২ জনমাস পরামর্শকের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৮ কোটি ৫৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে কোন পরামর্শকের জন্য কত বেতন সেটি আলাদা করে দেওয়া হয়নি। পিইসি সভায় পরামর্শক খাতে কিসের ভিত্তিতে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা পরিবহন সমম্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই সীমার মধ্যে ভালো পরামর্শক নেওয়ার চেষ্টা করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন চিন্তা-ভাবনা করেই হয়ত এটি করেছে। তবে সাধারণত একটু বেশি সিলিং রাখা হয়। পরবর্তীতে বাস্তবায়ন পর্যায়ে গিয়ে পিপিআর অনুসরণ করে পরামর্শক নিয়োগ করা হবে। ফলে বেশি অর্থ ব্যয় করার সুযোগ থাকবে না।’

গত ১০ জানুয়ারি ওই পিইসি সভার কার্যবিবরণী জারি করা হয়েছে। সেটি সারাবাংলার হাতে এসেছে।

কার্যবিবরীটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রকল্পের আওতায় বৈদেশক ও অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণের প্রস্তাব ছিল। এ বিষয়ে ভেটো দেয় পরিকল্পনা কমিশন। ফলে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে মাস্টার প্ল্যান তৈরিতে সমীক্ষা প্রকল্পে এত বড় ভলিয়মের জনবল কাঠামো রাখার যৌক্তিকতা বিষয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া জনবল কাঠামোতে অর্থ বিভাগের সুপারিশ আছে কিনা সেটিও জানতে চাওয়া হয়। এরপর জনবল কাঠামোর যৌক্তিকতা উপস্থাপনসহ অর্থ বিভাগের সুপারিশ নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পের আওতায় ৩টি মোটর ভেহিক্যাল কেনার জন্য ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং রাজস্ব খাতে একটি মাইক্রোবাস ভাড়ার জন্য ৩০ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ বিষয়ে পিইসি সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়। এক্ষেত্রে যানবাহন ক্রয় ও ভাড়ার বিষয়ে অর্থ বিভাগ থেকে জারি করা সর্বশেষ পরিপত্রের আলোকে পদ বা বেতন গ্রেডের প্রাপ্যতা অনুযায়ী প্রতিটি যানবাহনের যথাযথ স্পেসিফিকেশন উল্লেখ করে যানবাহনের সঠিক মূল্য ও ভাড়া নির্ধারণের বিষয়ে একমত পোষণ করা হয়।

এ ছাড়া পিইসি সভায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রতিনিধি জানান, এ প্রকল্পের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের মাধ্যমে ফান্ড চাওয়া হয়েছে কিনা? একই বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের উপপ্রধান বলেন, ‘সম্পুর্ণ সরকারি তহবিলের অর্থে প্রস্তাব করা এ প্রকল্পে দুটি সিটি করপোরেশনের মাস্টার প্ল্যান তৈরির জন্য সমীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। ফলে এ প্রকল্প প্রস্তাব কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের ফরম্যাটে না হয়ে সমীক্ষা প্রকল্পের ফরম্যাটে হওয়া যুক্তিযুক্ত। পরবর্তীতে যেহেতু প্রকল্পে বৈদেশিক সহায়তা নেই, সেহেতু এটি সমীক্ষা প্রকল্পের ফরম্যাটে প্রস্তাব পাঠানোর সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।’

সূত্র জানায়, ডিটিসিএ এর অধিভুক্ত নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ক্রমবর্ধমান নগরায়নের ফলে যানজট ও বায়ু দূষণ হচ্ছে। তাই মাস্টার প্ল্যানের নগর পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় গণ ট্রানজিট নেটওয়ার্কের প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মাস্টারপ্ল্যানে মাল্টিমোডাল হাবের ধারণামূলক নকশা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ ছাড়া গাজীপুর সিটি করপোরশনের মাস্টার প্ল্যানে ট্রাক টার্মিনালের প্রাক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং ধারণাগত নকশা তৈরির সংস্থার রাখা হয়েছে। ৪২ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয় ধরে পরিকল্পা কমিশনে প্রকল্পটির প্রস্তাব পাঠায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার ভবিষ্যৎ ট্রাফিক বৃদ্ধি বিবেচনায় যথাযথ, কার্যকর, দক্ষ ও নিরাপদ নগর পরিবহন উন্নয়নের জন্য এ প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে। এর আওতায় আগামী ২০ বছরের জন্য একটি ট্রান্সপোর্ট মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হবে। প্রক্রিয়াকরণ শেষে অনুমোদন পেলে চলতি মাস থেকে শুরু হয়েছে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো অর্ডিনেশন অথরিটি (ডিটিসিএ)।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেজে/একে

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন