বিজ্ঞাপন

চোখে তাদের স্বপ্নের ঝলক…

January 17, 2021 | 9:19 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

যখন বল হাতে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানকে ঘায়েল করার লক্ষ্যে ছুটবেন জার্সিতে লেখা থাকবে ‘বাংলাদেশ’!‍ আর লম্বা ছক্কা হাঁকিয়ে দর্শকদের উন্মাদ করে তোলার সময় জার্সিতে লেখা থাকবে ‘বাংলাদেশ’! ক্রিকেটার হতে চাওয়া সব তরুণের স্বপ্নই নিশ্চয় এমন থাকে। শেখ মেহেদি হাসান, হাসান মাহমুদ ও শরিফুল ইসলামের সেই স্বপ্ন অবশ্য আগেই পূরণ হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জাতীয় দলের হয়ে ইতোমধ্যেই তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলে ফেলেছে মেহেদি, মাহমুদ খেলেছেন একটি। শরিফুলের গায়ে এখনও জাতীয় দলের জার্সি উঠেনি। তবে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে বিশ্বকাপই জিতেছেন তরুণ পেসার। কাল তিন তরুণের স্বপ্নের পরিধিটা আরও বেড়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজকে সামনে রেখে প্রথমবারের মতো জাতীয় পর্যায়ে ওয়ানডে দলে ডাক পেয়েছেন তিনজন।

উপলক্ষ্যটাও কতোই না রঙিন। বাংলাদেশ ওয়ানডেটাই বেশি ভালো খেলে। সেই ওয়ানডে দলের বিশ্বকাপ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ডাক পেয়েছেন তিনজন। অর্থাৎ শুরুতে ব্যর্থ হলেও যে ছুড়ে ফেলা হবে না, শিখিয়ে তৈরি করার চেষ্টা করা হবে তা মোটামুটি নিশ্চিত। এমন সুযোগ ক’জন পান!

স্বাভাবিকভাবেই বড্ড খুশি তিন তরুণ। শরিফুল, মাহমুদরা তো ‘স্বপ্নপূরণ’ই বললেন এটাকে। ভিডিও বার্তায় নিজের প্রতিক্রিয়ায় হাসান মাহমুদ বলেছেন, ‘যেদিন থেকে খেলা শুরু করেছিলাম, সেদিন থেকেই জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন ছিল। এখন সুযোগ পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ। আমি সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করব।’

বিজ্ঞাপন

ওদিকে সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমের মতো তারকা ক্রিকেটারদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ার স্বপ্নে বিভোর তরুণ শরিফুল। বলছিলেন, ‘আলহামুদুল্লাহ জাতীয় দলের পরিবেশটা অনেক ভালো লাগছে। যখন অনুর্ধ্ব-১৯ দলে খেলতাম বা যখন ক্রিকেট খেলা শুরু করছি তখন থেকেই ভাবতাম যে সাকিব ভাই, মুশফিক ভাই, তামিম ভাই, মাহমুদউল্লাহ ভাই, মুস্তাফিজ ভাই ওনাদের সঙ্গে যদি থাকতে পারি খেলতে পারি…। এটাই স্বপ্ন ছিল, ইনশাআল্লাহ সেটা পূরণ হইছে। তো চেষ্টা করব যে পারফর্ম করে তাদের সঙ্গে থাকার জন্য।’

গতি আর আগ্রসনের কারণে শরিফুলের ওপর অনেক আগে থেকেই চোখ ছিল নির্বাচকদের। ১৯ বছর বয়সী আগে থেকেই ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটারের আশেপাশে গতিতে বোলিং করতেন। যুব বিশ্বকাপে গতির ঝড়ে প্রতিপক্ষদের কাঁপিয়েছেন। সেই ফর্মটা ধরে রেখেছিলেন সিনিয়রদের বিপক্ষে বিসিবি প্রেসিডেন্ট’স কাপ ও বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপেও। ওয়ানডে স্কোয়াডে তার নাম থাকাকে তাই ‘চমক’ বলা যাবে না। শরিফুল বলছিলেন, সুযোগ যখন একবার মিলেছে মাঠে নামতে পারলে পারফর্ম করে জায়গা পাকা করতে চান।

বিজ্ঞাপন

১৯ বছর বয়সী বলছিলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ অনেক খুশি লাগছিল যে আমি প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের স্কোয়াডে আছি। ইনশাআল্লাহ ভালো কিছু করার চেষ্টা করব। অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের পরে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্ট কাপ তারপরে প্রেসিডেন্টস কাপে আলহামদুলিল্লাহ মোটামুটি ভালো খেলেছি। আল্লাহর রহমতে যদি মূল দলের সেরা একাদশে জায়গা পাই সেরা পারফরম্যান্সটা দেয়ার চেষ্টা করব। ইনশাআল্লাহ জায়গাটা ধরে রাখার চেষ্টা করব।’

সেই চেষ্টা হাসান মাহমুদেরও থাকবে। হাসান নজড়ে এসেছিলেন ২০১৮ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেই। কিন্তু বিশ্বকাপ শেষ হতেই এমন চোটে পড়লেন তা থেকে সেড়ে উঠতে সময় লেগেছে প্রায় দেড় বছর। তবে সেড়ে উঠার পর আবারও আলোচনায় আসতে বেশি সময় নেননি। ইমার্জিং এশিয়া কাপ, এসএ গেমসে দারুণ পারফর্ম করা মাহমুদ নজর কাড়েন গত বিপিএলে। তার ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতির আশেপাশে টানা বোলিং করার সামর্থ আকৃষ্ট করেছে নির্বাচকদের। প্রথমে টি-টোয়েন্টি দলে ডাক পাওয়া মাহমুদ সেই ধারাবাহিকতাতেই সুযোগ পেয়েছেন ওয়ানডেতে।

লম্বা গড়নের এই পেসার বলছিলেন, ‘লক্ষ্য অবশ্যই ভালো করার। নিজের সেরাটা দেওয়ার। অবশ্যই ধারাবাহিকতা বজায় রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার যেই সুযোগটা আছে সেটা কাজে লাগানো খুবই দরকার। সেই জন্য সবার দোয়া চাই। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।’

বিজ্ঞাপন

মেহেদি হাসানের গল্পটা একটু ভিন্ন। অনূর্ধ্ব-১৯ বা তার নিচের কোন বয়সভিত্তিক দলের হয়ে নয়, মেহেদি উঠে এসেছেন বিপিএল থেকে। ২০১৮ বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে কয়েক ম্যাচ খেলা মেহেদিকে কে বা চিনত! স্পিনারদের বিপক্ষে টুকটাক হাঁকাতে পারলেও পেস বোলিংয়ের সামনে পা কাঁপাকাঁপি অবস্থা। স্পিনার হিসেবেও ছিলেন সাধারণ মানের। আর্ম বল করতে পারতেন এই যা। তাছাড়া উইকেট স্পিনবান্ধব হলে মেহেদি ভালো করতে পারতেন তা না হলে নয়। সেই ছেলেটিই দু’বছরে কী দুর্দান্ত ভাবেই না বদলে গেলেন।

মেহেদির হাতে এখন বেশ কয়েকটি ডেলিভারি। ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের হঠাৎ-ই বোকা বানাতে দেখা যায়। ব্যাটিংয়েও কী দারুণ উন্নতি। গত বিপিএলে ১৭টি ছক্কা মেরেছেন মেহেদি, বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। তিন ফিফটিতে আড়াইশর বেশি রান করা মেহেদির স্ট্রাইক রেট ছিল ১৩৬। কোনো কোনো ম্যাচে স্ট্রাইক রেট ১৫০ বেশি ছিল। শুধু স্পিন নয়, এখন পেস বোলারদেরও অনায়াসে গ্যালারিতে আছড়ে ফেলতে পারেন মেহেদি। স্পিন এবং শেষ দিকের কার্যকরি ব্যাটিংয়ের কারণেই দলে ডাকা হয়েছে তাকে।

ওয়ানডে স্কোয়াডে ডাক পেয়ে ২৬ বছর বয়সী তরুণ বলছিলেন, ‘অনেক পরিশ্রম করে আসছি বাংলাদেশ দলে খেলার জন্য। প্রথমে আমার টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয়েছে, এখন ওয়ানডেতে সুযোগ এসেছে। আলহামদুলিল্লাহ। যদি বেস্ট ইলেভেনে সুযোগ হয়, নিজের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা থাকবে। যেহেতু আমি বোলিং করতে পারি, ব্যাটিং করতে পারি, যে জায়গায় যেখানে সুযোগ আসে চেষ্টা করব কাজে লাগানোর।’

মেহেদি যোগ করেন, ‘অবশ্যই চেষ্টা থাকবে ভালো করার জন্য, বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা। আমার তরফ থেকে তো ১০০% চেষ্টাই থাকবে।’

বাংলাদেশি ক্রিকেট সমর্থকরাও নিশ্চয় চাইবেন মেহেদিদের নিয়ে নির্বাচকরা যে পরিকল্পনা করেছেন তা সফল হোক।

সারাবাংলা/এমআরএফ/এসএইচএস

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন