বিজ্ঞাপন

‘গৃহহীনকে গৃহ, ভূমিহীনকে ভূমি দেওয়ার ঘোষণা পৃথিবীতে বিরল’

January 21, 2021 | 10:14 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনকে গৃহ ও ভূমিহীনকে ভূমি দেওয়ার যে ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন তা পৃথিবীতে বিরল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেছেন, এটি মুজিববর্ষের একটি অসাধারণ ঘটনা। গুগল আপনাদের সবার পকেটেই আছে, দেখতে পারেন; পৃথিবীতে এই নজির নেই। সমস্ত পৃথিবীতে এ রকম ঘটনার নজির আছে কি না জানা নেই, একজন রাষ্ট্রনায়ক বলছেন, আমার দেশের গৃহহীন ও ভূমিহীন সব মানুষকে গৃহ ও ভূমি দেব।

বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এ সব কথা বলেন।

মুজিববর্ষে ‘বাংলাদেশের একজন মানুষ গৃহহীন থাকবে না’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদানের চলমান কার্যক্রম নিয়ে তিনি তথ্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৩ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী গণভবন ভিডিও কনফারেন্সিং’র মাধ্যমে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ১ম দফায় জমিসহ গৃহ প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মহাপরিচালক মাহবুর হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন, সহকারী প্রেস সচিব ইমরুল কায়েস রানাসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্য প্রথম পর্যায়ে ৬৬ হাজার ১৮৯টি পরিবারের জন্য একক গৃহ নির্মাণের অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। অধিকাংশ গৃহ নির্মাণের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই আরও ১ লাখ গৃহের বরাদ্দ দেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে পর্যায়ক্রমে দেশের সব ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের জন্য গৃহ প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের লক্ষ্যে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ উদ্যোগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণ করেছেন জাতির পিতা। সংগ্রাম করা শিখিয়েছেন জাতির পিতা। স্বাধীনতা এসেছে তার নেতৃত্বে। স্বাধীনতার পরপরই উনি কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের জন্য যারা ভূমিহীন-গৃহহীন আছে; তাদের আশ্রয় দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৬ সালে যখন দায়িত্ব নিয়েছিলেন তখন ১৯৯৭ সাল থেকে তিনি একটি প্রকল্প চালু করেছিলেন, যার নাম দিয়েছিলেন আশ্রয়ণ প্রকল্প। আশ্রয়ণের মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের গৃহহীন ভূমিহীন মানুষকে মাথায় ছাদ দেওয়া। এরইমধ্যে ১৯৯৭ থেকে ২০২০ পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার ৫৮টি ভূমিহীন গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত অর্থ বছরে কোভিড মহামারির মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী একটি নতুন ঘোষণা দিয়েছেন মুজিববর্ষে কোন মানুষ গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না। তার জন্য নতুনভাবে আলাদাভাবে একটি কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন এবং আগামী পরশুদিন দিন প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে গৃহ পাবেন ৬৬ হাজার ১৮৯ এবং এতে ব্যয় হচ্ছে ১১শ ৬৮ কোটি টাকা।’

প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত এই কর্মসূচির নতুন মাত্রা তুলে ধরে মুখ্য সচিব আরও বলেন, ‘এতে বেশ কিছু নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। মাত্র ছয় মাসের কম সময়ে এটি বাস্তবায়িত হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা সেই সব সাধারণ মানুষদের পুনর্বাসন করেছি যাদের মাথায় ছাদ ছিল না, যারা গৃহহীন এবং ভূমিহীন ছিল।’

বিজ্ঞাপন

মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘অব্যবহৃত ২ হাজার ৫৮ একর খাসজমি বিভিন্নভাবে জনকল্যাণে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে বেশ কিছু অবৈধ দখলদার ছিল তাদেরও উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখানে দুটো উপকার হয়েছে। দখলদার মুক্ত হয়েছে এবং জনকল্যাণে সরকারি ভূমি ব্যবহার হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আরেকটি নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে এভাবে। সমস্ত বাংলাদেশে যে বাড়িগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে, যে বাড়ির বরাদ্দগুলো আমরা উপজেলা পর্যায়ে দিয়েছি, উপজেলা পর্যায়ে একটি কমিটি আছে। সেই কমিটি সরাসরি নিজেরাই কেনাকাটা করে নির্মাণ করছে। আমরা সাধারণত ঠিকাদারি সংস্থাকে দেই বা টেন্ডার প্রক্রিয়ায় দিয়ে সামাজিক আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়েছে, প্রতিটি জেলা উপজেলায় আামদের জনপ্রতিনিধি সবাই এটাতে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে উৎসবমুখর করেছে এবং তার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিল আমাদের তরুণ কর্মকর্তারা।’

এরইমধ্যে আমরা প্রায় ৬ হাজার ৫৭০ আরও প্রতিশ্রুতি পেয়েছি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বলেও জানান তিনি।

ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য দেওয়া এ সব বাড়ি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার আওতায় থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সব বাসায় বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং আশপাশে তাদের কাজ করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। যারা থাকবেন তারা যেন নিজের আয় ‍উপার্জন করতে পারেন।’

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এটি মুজিববর্ষে একটি অসাধারণ ঘটনা। গুগল আপনাদের সবার পকেটেই আছে, দেখতে পাবেন পৃথিবীতে এই নজির নাই। সরকারি উদ্যোগে এইভাবে ছিন্নমূল মানুষকে পুনর্বাসন করা।’

মুখ্য সচিব বলেন, ‘সারাদেশে ভূমিহীন গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা হচ্ছে তিন লাখের কিছু কম এবং জমি আছে ঘর নেই এরকম আছে প্রায় ৬ লাখের কিছু কম। আমাদের প্রায় ৯ লাখের মতো এই রকম পরিবার আছে। আমরা আশা করছি, এই যে ৬৬ হাজার পরিবারকে দেওয়া শুরু হয়েছে এবং এই পরবর্তীতে রয়েছে প্রায় লক্ষাধিক পরিবার বরাদ্দ পাবে। আগামী এক মাসে দেওয়া হচ্ছে আরও এক লাখ ঘর। এটা যদি এভাবে সম্প্রসারিত হয় তাহলে আশা করছি, আগামী বছর দুযেকের ভিতরে এটি আমরা সম্পন্ন করতে পারব। এর সঙ্গে যদি স্থানীয় মানুষ যারা ধর্ণাঢ্য ব্যক্তি আছেন, তারা যদি এগিয়ে আসেন তাহলে কিন্তু আরও অল্প সময়ের ভেতরে করতে পারব। ১০ লাখ মানুষ যদি বাড়ি পায়শ, ছাদ পায়, সুপেয় পানি পায়, বিদ্যুৎ পায় তাহলে বাংলাদেশের দারিদ্র্যসীমার নিচে কত মানুষ চলে যাবে, এটি আপনাদের কল্পনারও বাইরে।’

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পথশিশুদের ঘরে ফেরানোর কর্মসূচিও চালু হয়েছে

মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘ঢাকা শহরে যদি কোনো কারণে এ রকম থাকে, সেটির জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আরেকটি কর্মসূচি নিয়েছেন, পথশিশুদের কীভাবে ঘরে ফেরানো যায়। সেই কর্মসূচিটাও চালু হয়েছে। আমাদের এখানে একটা জাতীয় কমিটিও করা হয়েছে। আমরা সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি কীভাবে এটি বাস্তবায়ন করা যায়।’

এ মুহূর্তে শহরের চাইতে গ্রামে যারা পিছিয়ে পড়া আছে তাদেরকেই এ কর্মসূচিতে বেসিক্যালি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মুখ্য সচিব বলেন, ‘সমতলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রয়েছে তাদের জন্য তিন হাজার ৫শ গৃহ বরাদ্দ হয়েছে এবং এর মধ্য ৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি তো চলমান প্রক্রিয়া। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যটা একযোগে দেশের যে উন্নয়ন তার ছোঁয়া যেন সমস্ত ছড়িয়ে পড়ে। আমরা যে বাংলাদেশ ১৩৪ ডলার মাথাপিছু আয় নিয়ে ১৯৭১ সালে শুরু হয়েছিল, সেই বাংলাদেশ আজকে পৃথিবীর বুকে দাঁড়িয়ে বলছে যে, আমি আমার দেশের কোন মানুষকে গৃহহীন-ভূমিহীন থাকতে দেব না। এটিই তো সব থেকে বড় পাওয়া। আর এটি হলো ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। সমস্ত পৃথিবীতে এরকম ঘটনার নজির আছে কি না আমার জানা নেই। একজন রাষ্ট্রনায়ক বলছেন যে, আমার দেশের সকল মানুষকে আমি গৃহ দেব।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অলরেডি করা হচ্ছে। সাভারে এরকম বেদে সম্প্রদায়ের জন্য করা হচ্ছে। যখনই যেটা করা হচ্ছে, সেটা অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। আমাদের ভাসমান যারা আছে বা এই যে ভাসমান বলতে গৃহহীন ভূমিহীন; এরা কিন্তু আমাদের তালিকাভুক্ত রয়েছে। বাজেটের কিছু ইস্যু আছে। এখন কোভিডকালীন… সে জন্য এটির ব্যাপ্তি বাড়ানো হচ্ছে না।’

মুখ্য সচিব বলেন, ‘আপনাদের আমরা প্রথমেই বলেছি, ১৯৯৭ সাল থেকে হিসেব করলে গড়ে করেছি ১৪ হাজার আর এই ছয় মাসের ভিতর আমরা করেছি প্রায় সবকিছু মিলিয়ে প্রায় ৭০ হাজার (ব্যারক-ট্যারাক সব মিলিয়ে)। তার মানে এটি কতগুণ বেড়েছে। এই যে ব্যাপ্তিটা বেড়েছে, এটি আমি মনে করি। এটি আমাদের একটা অহঙ্কারের জায়গা তৈরি হয়েছে। আমাদের ৫০ বছর পূর্তিতে আমাদের একটা নতুন অহঙ্কারের জায়গা তৈরি হয়েছে। সরকারের কর্মপরিধির ব্যপ্তি বেড়েছে এবং আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে। বাস্তবায়নের সক্ষমতাও বেড়েছে।’

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্বামী-স্ত্রী দুজনের নামে দলিল রেজিস্ট্রি

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, ‘ঘরের নকশা এবং ডিজাইন প্রধানমন্ত্রী নিজের চিন্তা থেকেই এই নকশা এবং ডিজাইনটাকে ওনি পরামর্শ দিয়েছেন, সেটা এটি করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রতিটি ঘরে দুটি শয়ন কক্ষ থাকবে, একটা টয়লেট থাকবে, একটা রান্নাঘর থাকবে এবং লম্বা বারান্দা থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই বাড়িগুলোতে আমরা বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থাটাও আমরা করছি। পৃথিবীর ইতিহাসে এই একটি ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে যে, একদিনে ৬৬১৮৯টি পরিবার ঘর পাচ্ছে এবং জমি পাচ্ছে।’

‘অবৈধ দখলে থাকা জমি, খাস জমি, এগুলো সব উদ্ধারকরে প্রতিটি পরিবারকে দুই শতক করে জমি দেওয়া হচ্ছে। শুধু ঘর বা জমিই দেওয়া হচ্ছে না, এর সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যেককে দলিল রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হচ্ছে। তাকে একটটা খতিয়ানের কপি দেওয়া হচ্ছে, তাকে মিউটেশন করে দেওয়া হচ্ছে এবং একইসঙ্গে একটা সনদ দেওয়া হচ্ছে।’

মুখ্যসচিব আরও বলেন, ‘এটি শুধু ঘরেই না, এটির সঙ্গে আমাদের যে সাসটেইনবেল ডেভলপমেন্ট গোলসের অনেকগুলো লক্ষ্য কিন্তু এই ঘরের মাধ্যমে অর্জন করতে পারব। যদিও ঘরের দাম ১লাখ ৭১ হাজার কিন্তু জমি ঘর এগুলোর মূল্য ধরা হয়। তাহলে দেখা যাবে হয়ত এক একটা ঘর হয়ত ১০ লাখ টাকা বেশি সম্পদ ওখানে আছে এবং প্রত্যেকটা ঘর কিন্তু স্বামী এবং স্ত্রী দুজনের নামে রেজিস্ট্রি হচ্ছে, একক না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাদের নির্দেশ দিয়েছেন স্বামী স্ত্রী’র নামে রেজিস্ট্রি হচ্ছে এবং দলিলে দুজনের নাম এবং ছবি থাকছে।’

সারাবাংলা/এনআর/একে

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন