বিজ্ঞাপন

‘অনেক প্রলোভন দেখানো হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদায় রেখে দেবে’

January 22, 2021 | 1:59 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সেনা সমর্থিত ১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমাকে অনেক প্রলোভন দেখানো হয়েছিল। তারা বলেছিল আমাকে প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদায় রাখবে। আমি বলেছিলাম প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা মানে কী? এয়ারকন্ডিশন বাড়িতে থাকা আর একটু গাড়িতে চড়া, ওটা আমার চাই না। আমি দেশের জন্য কাজ করতে চাই, নির্বাচন চাই। নির্বাচনে যদি জনগণ ভোট দেয়, আমি ক্ষমতায় যেতে চাই।’

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে রিফ্লেকশন ফর্ম অ্যালামনাই ন্যাশনাল এবং ইন্টারন্যাশনাল শীর্ষক ই-সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই বাংলাদেশে আজকে আমরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি, সেই এগিয়ে যাওয়ার পথে করোনাভাইরাস বাধা দিয়েছে এটা ঠিক। কিন্তু এ বাধা অতিক্রম করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন আমাদের গবেষণা করা।’

গবেষণার বিষয়ে সবসময় গুরুত্ব দেওয়ার অনুরোধ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘গবেষণা ছাড়া কিন্তু কোনো অর্জন সম্ভব না। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে দেখেছিলাম সরকারের পক্ষ থেকে গবেষণায় কোনো অর্থ বরাদ্দ ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজেদের মতো করে যতটুকু আর্থিক সহযোগিতা পেত তা দিয়েই কাজ চলত। গবেষণার জন্য যে আলাদাভাবে একটা সুযোগ সৃষ্টি করা সেটা কিন্তু করা হতো না। আমি প্রথম আলাদাভাবে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে গবেষণার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে শুরু করলাম। যার ফসল আজকে বাংলাদেশ পাচ্ছে। আজকে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করছে। বাংলাদেশ আজ প্রতিটি ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। এই সবকিছু কিন্তু গবেষণার ফসল। কাজেই আপনারা গবেষণাকে গুরুত্ব দিবেন। আমরা সেটাই চাই।’

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন ঘাতকের বুলেটের আঘাত তাকে আমাদের মাঝ থেকে কেড়ে নিয়ে গেল। তিনি আর আসতে পারেননি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেছে। এ জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার একটাই আকাঙ্ক্ষা, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার যে মানবসম্পদ গড়ে তোলার প্রক্রিয়া চলছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই সেটি শুরু হবে। সেইসঙ্গে সারাদেশে আমরা যত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করছি তারাও সেটা অনুসরণ করবে। এভাবেই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘মানুষ চিরদিন বেঁচে থাকে না, আমিও থাকব না। কিন্তু বাংলাদেশটা ভবিষ্যতে কীভাবে চলবে সেটা নিয়ে পরিকল্পনার বিষয়ে অন্তত একটা কাঠামো দিয়ে যাচ্ছি। কারণ আমি কখনো এডহক বেসিসে কাজ করি না। এই দেশটা আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। এদেশের মানুষকে তিনি সবচেয়ে বেশি ভালবেসেছেন। কাজেই সেই মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন করাটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।’

‘সেই কারণেই পিতা-মাতা, ভাই সব হারিয়ে সেই শোক বুকে নিয়েও আমার একটাই শক্তি, এই দেশটাকে জাতির পিতা যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে স্বাধীন করে গিয়েছিলেন, তার সেই অসমাপ্ত কাজটা সমাপ্ত করা, তার সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা। এজন্য যত বাধা, যত কষ্ট আসুক না কেন সেগুলি আমি সবসময় অতিক্রম করতে সচেষ্ট। আমার বিশ্বাস এদেশের মানুষও সেটা উপলব্ধি করতে পারে’— বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ একটা দীর্ঘসময় ধরে ক্ষমতায় আছে বলেই আমরা অন্তত এইটুকু বলতে পারি, বাজেটের ৯৮ ভাগই আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে প্রণয়নের সক্ষমতা অর্জন করেছি। আমরা করতে পারি, সেটা আমরা দেখিয়েছি।’

শিক্ষকসহ গবেষকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ কীভাবে এগিয়ে যাবে তার ওপর গবেষণা করুন। ইতোমধ্যে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা আমরা করেছি। এরপর নবম দশম হতেই থাকবে। পাশাপাশি শত বছরের একটা পরিকল্পনা নিয়েছি।’

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ব-দ্বীপ অঞ্চল। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে চলতে হবে আমাদের। সেই দুর্যোগ মোকাবিলা করেই আমরা এগিয়ে যাব। সে জন্য ২১০০ সাল পর্যন্ত ডেলটা প্ল্যান করে দিয়ে গেলাম। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যারা আসবে, অন্তত এই কাঠামো থেকে পরিকল্পনা করতে পারবে। তবে সময়ের প্রয়োজনে এগুলোতে পরিবর্তন আনতে হবে। কিন্তু এই কাঠামো ধরেই যদি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে এগিয়ে যাওয়া যায়, তাহলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবেই, কেউ রুখতে পারবে না। আজকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদার স্বীকৃতি পেয়েছি। সেটাও আমাদের ধরে রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে, কিন্তু সেটা আমাদের অতিক্রম করতে হবে এবং ইনশাল্লাহ আমরা তা করবো। পাশাপাশি ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত বাংলাদেশে উন্নীত হব। ২০৭১ সালে স্বাধীনতার শতবর্ষ। সেই সময় হয়ত বেঁচে থাকব না, কিন্তু যারা থাকবে তারা যেন মাথা উঁচু করেই উন্নত বাংলাদেশে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার শতবর্ষ’ উদযাপন করতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে এটাই আমার আকাঙ্ক্ষা।’

শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্ম যারা আসবেন, আগামী প্রজন্মের শিক্ষায় শিক্ষিত হবেন, তারা আধুনিক শিক্ষা-দীক্ষায় শিক্ষিত হবে। তারা  ২০৪১’র সৈনিক হবে এবং তার পরবর্তীতে যারা আসবে তারা ২০৭১’র সৈনিক হবে। তখন তারা শতবর্ষে বিজয়ের বেশে মাথা উঁচু করে চলবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেকটা মানুষের জন্য বা একটা জাতির জন্য একটা দিকনির্দেশনা থাকা দরকার, দিকদর্শন থাকা দরকার। তাহলেই এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। আমরা সাধারণত একটা উপমা দেই, দিকহারা নাবিক পথ হারায়, দিক যদি ঠিক থাকে, নিজের চিন্তাভাবনা দর্শন যদি ঠিক থাকে, অবশ্যই লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়। সেটা আমরা অন্তত প্রমাণ করেছি। বাংলাদেশ শত বাধা অতিক্রম করেও একটা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। সেই মর্যাদাটাকে ধরে রাখতে হবে আগামীতে যারা আসবে তাদের সকলের। তাদেরকে সবসময় আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে।’

জাতি গঠনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি আন্দোলন করতে গিয়ে কত রক্ত ঝরেছে, কত মানুষ মারা গেছে, কত ছাত্র মারা গেছে, শিক্ষকরা রক্ত দিয়েছে। সেই রক্তের অক্ষরেই আমাদের সকল অর্জন। কাজেই এই অর্জনের কখনো অমর্যাদা হতে পারে না। আমরা বিজয়ী হয়েছি, আমার বিজয়ীর বেশেই মাথা উঁচু করে পথ চলবো। এটাই হচ্ছে আমার আকাঙ্ক্ষা।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি যেভাবে আমরা প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে বিজয় অর্জন করেছি সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান অনেক। এমনকি ২০০৭ সালে আমি বন্দি হওয়ার পর এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র-শিক্ষকরাই প্রথম আন্দোলন করেছিলেন। যার ফলে আমরা ২০০৮ সালের নির্বাচনটা ফিরে পেয়েছিলাম।’

‘আমাকে সেনা সমর্থিত ১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অনেক প্রলোভন দেখানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদায় রেখে দেবে। আমি বলেছিলাম প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা মানে কী? এয়ারকন্ডিশন বাড়িতে থাকা আর একটু গাড়িতে চড়া, ওটা আমার চাই না। আমার প্রয়োজন নাই। দেশের জন্য কাজ করতে চাই, আমি নির্বাচন চাই। নির্বাচনে যদি জনগণ ভোট দেয়, আমি ক্ষমতায় যেতে চাই। দেশের উন্নয়ন করবার জন্য। আমার বাবার আদর্শ বাস্তবায়ন করবার জন্য। দেশেকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘জেলখানায় থেকেই আমি আমার রূপকল্পের মূলকথাগুলো নোটে লিখে রেখেছিলাম। পরে নির্বাচনের ইশতেহারে আমি সেগুলো যুক্ত করি। কাজেই সেখানেও বন্দি হয়ে আমি ভীত ছিলাম না। তখনও আমার আত্মবিশ্বাস ছিল। আর সেই আত্মবিশ্বাস পেয়েছিলাম যেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের ছাত্র-শিক্ষকরা প্রতিবাদ করেছিলেন। আমি সেজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে সবসময় কৃতজ্ঞ এবং সবাইকে আমার ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

বাঙালির প্রতিটি ইতিহাসের সঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি জড়িত রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এরপর প্রধানমন্ত্রী ঢাবির শতর্বষ উদযাপন উপলক্ষে যত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে তার সফলতা কামনা করেন এবং সেমিনারের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

সারাবাংলা/এনআর/এসএসএ/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন