বিজ্ঞাপন

মুজিববর্ষে ঘর উপহার: আনন্দ ও কৃতজ্ঞতায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ

January 23, 2021 | 10:56 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মুজিববর্ষে উপকারভোগী ভূমিহীন-গৃহহীন প্রান্তিক মানুষরা আজন্মলালিত স্বপ্ন নীড়ের মালিকানা উপহার পেয়ে নিখাদ তিলোত্তমা হাসি আর আনন্দাশ্রুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন। উপহার প্রাপ্তির কৃতজ্ঞতা বদন্যতায় তারা দীর্ঘায়ু কামনা করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার। প্রধানমন্ত্রী জানান, অসহায় মানুষের এমন অনিঃশেষ আনন্দ প্রাপ্তি পূরণই ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন। আর তিনি এটাকে তার কর্তব্য বলে জানান। তাই আঞ্চলিক গানের কথা সুরে উপকারভোগীরা প্রধানমন্ত্রীকে গরীব দুঃখী মানুষের ‘মা জননী’ হিসাবেও আখ্যায়িত করেন।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপকারভোগী ও প্রধানমন্ত্রী এমন অভিমত ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন।

একসঙ্গে সর্বমোট ৬৯ হাজার ৯০৪ জন ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদানের ঘটনা বিশ্বে এটিই প্রথম। এদিন জমিসহ একক ঘর প্রদান করা ৬৬ হাজার ১৮৯টি পরিবারকে। আর ব্যারাক হাউজে তিন হাজার ৭১৫টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়। মুজিববর্ষে পিতার স্বপ্ন পূরণের সারথি হিসেবে আরেকটি মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। উদ্বোধন ঘোষণা শেষে প্রধানমন্ত্রী গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে চার জেলার উপজেলা প্রান্তে মতবিনিময় করেন।

প্রধানমন্ত্রী খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার কাঁঠালতলা গ্রাম, নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুর গ্রাম, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিভিন্ন উপজেলার মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ স্থানীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা উপকারভোগীদের হাতে বাড়ির চাবি, দলিল ও সনদ হস্তান্তর করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তার সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানটি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার করা হয় এবং ৪৯২টি উপজেলা প্রান্ত ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে মুজিববর্ষে দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পাশাপাশি মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

প্রধানমন্ত্রী কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা শেষে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশ নেন। উপকারভোগীরা মুজিববর্ষে দুই শতক জমিসহ ঘর উপহার পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তারা প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা করেন। একইসঙ্গে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণে প্রধানমন্ত্রীর যেকোনো স্বপ্নযাত্রার সারথি হওয়ার দৃঢ়তা প্রকাশ করেন এবং বর্তমানের ন্যায় ভবিষ্যতে যেকোনো কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

এজন্য প্রধানমন্ত্রীও মুজিববর্ষে গৃহহীন-ভূমিহীনদের জমিসহ ঘর উপহার দেওয়ার কর্মসূচি বাস্তবায়নে সম্পৃক্ত সরকারের সকল স্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ঘরগুলো তৈরির কাজে জড়িতদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। সরকার মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের জন্য ১ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই বাড়িগুলো নির্মাণ করেছে। একইসঙ্গে ৩ হাজার ৭১৫টি পরিবারকে ব্যারাকে পুনর্বাসন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন আশ্রয়ণ প্রকল্প মুজিববর্ষ উদযাপনকালে ২১টি জেলার ৩৬টি উপজেলায় ৪৪টি প্রকল্পের অধীনে ৭৪৩টি ব্যারাক নির্মাণ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহহীন-ভূমিহীনদের এই উপহার দিতে আপনি যে স্বপ্নযাত্রা শুরু করেছেন, এটিতে অংশগ্রহণ করে নবীন কর্মকর্তা হিসেবে আমাদের কাছে পাথেয় হয়ে থাকবে।’

স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ সারাবিশ্বকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে উল্লেখ করে বলেন, ‘আপনি যে অবদান জনগণের জন্য রাখছেন আমরা পরম করুণাময়ের কাছে আপনার দীর্ঘায়ু কামনা করি এবং আপনি দীর্ঘদিন নেতৃত্ব দিয়ে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করুন।’

উপকারভোগী রিনা পারভীন নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি অশ্রুঝরা আবেগে বলেন, ‘আমি একজন হতদরিদ্র মানুষ। আমি জীর্ণশীর্ণ একটি ঘরে থাকি। আমার স্বামীর একজন দিনমজুর। নিয়মিত কাজ হয় না। অনেক সময় না খেয়ে থাকতে হয় পরিবারের। এই মুজিববর্ষে আমি আপনার কাছ থেকে একটি ঘর উপহার পেয়েছি। এই ঘর পেয়ে আমি অত্যন্ত খুশি। কারণ এরকম ঘর আমি কোনোদিন তৈরিও করতে পারতাম না। কারণ আল্লাহ সেই সহায় সম্বল আমাকে দেয়নি। আপনি আমাদের জীবনে আল্লাহর অশেষ রহমত। আপনি আমাদের মাঝে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকুন, সবাইকে সাহায্য সহযোগিতা করুন ‘

এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি কাঁদবেন না। আমি মনে করি, এটা আমার কর্তব্য। আজকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা হিসেবে আমি এটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, তার স্বপ্নটা পূরণ করতে হবে। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে। আর সেজন্য আমি আমার নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘আর বাংলাদেশে যাতে একটি মানুষও গৃহহারা, ভূমিহীন না থাকে; আমরা সেই ব্যবস্থা করব। শুধু ঘর করে দেওয়া নয়, সেইসঙ্গে জীবন জীবিকার পথও যেন খুঁজে পান সেটারও ব্যবস্থা করা হবে। আমি অনুরোধ করব, যারা ঘর পেয়েছেন, প্রত্যেকে অন্তত ঘরের সামনে একটা করে গাছ লাগান। যাতে ফলটল হয়। সবাই খেতে পারে।’

নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুর গ্রামে মতবিনিময়ের সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি আপনারা একটা মহৎ কাজ করেছেন। যারা এই প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, এই যে অসাধ্য সাধন করেছেন, এটা শুধু আপনাদের চাকরি জীবনেই নয়, আগামী প্রজন্মের জন্যও একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আপনারা যে মহৎ কাজ করেছেন, সেটা নিশ্চয়ই উপলব্ধি করতে পারেন।’

পরে উপকারভোগী আফরিনার অনুভূতি শোনেন প্রধানমন্ত্রী। উপকারভোগী আফরিনা শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীকে সম্বোধন করে বলেন, ‘আপনি কি ভালো আছেন?’ তার জবাবে প্রধানমন্ত্রীও বলেন, ‘জি, ভালো আছি।’

এরপর আফরিনা আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ‘মোর নাম আফরিনা। মোর আগে কিছুই আছিল না। স্বামী সন্তান নিয়া মাইনষের জমিত খুব কষ্টে আছিনু। এখন মোক শেখের বেটি শেখ হাসিনা জায়গা-জমি-ঘর-বাড়ি-কল-পায়খানা সবকিছুই উপহার দিছেন। স্বামী সন্তান নিয়া সুখে থাকিম। এখন মুই খুব খুশি। তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তোমরা আরও দীর্ঘজীবী হন। আর এই দেশের উন্নতি করেন, সুস্থ থাকো, ভাল থাকো।’

তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাগফেরাত কামনা করে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হামরা তোমার জন্য একটা ভাওয়াইয়া গান বানাইছি। তোমরা যদি একটু শোনেন হামরা খুব খুশি হইমো।’

এরপর তারা ওঠেন, ‘বঙ্গবন্ধুর যোগ্য কন্যা হামার শেখ হাসিনা…. আর দুঃখী মাইনষের দেশ হামারে সোনারও ঠিকানা। দেশ-বিদেশে নাইরে তুলনা…‘গরীবেরও মা জননী হামার প্রধানমন্ত্রী, জমি দেন ঘর দেন হামরা হইলো খুশী…… ‘মা জননী হামার প্রধানমন্ত্রী’ ওরে দেশরত্ম হামার প্রধানমন্ত্রী’ মা জননী হামার প্রধানমন্ত্রী, ওরে দেশরত্ম হামার প্রধানমন্ত্রী।’

প্রধানমন্ত্রী উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক ভাওয়াইয়া গান শুনে হাততালি দিয়ে অভিবাদন জানিয়ে হাস্যমুখে বলেন, ‘খুব ভাল লাগছে। একটা উৎসবমুখর পরিবেশ। মেলা বসে গেছে নিশ্চয়ই শীতের পিঠা খাওয়া হচ্ছে। আপনারা সবাই ভালো থাকেন।’

হবিগঞ্জ চুনারুঘাট উপজেলার ইকরতলী গ্রামের উপকারভোগী নুরুল হুদা মতবিনিময় করেন। তিনি পেশায় সিএনজি চালক। তিনি বলেন, ‘আপনি মুজিব শতবর্ষে আমারে দুই শতক জায়গাসহ খুবই সুন্দর একটি ঘর উপহার দিছেন। তাতে আমি খুব খুশি। আমি এখন বউ-বাচ্চা নিয়া খুবই শান্তিতে থাকতে পারমু। আর আপনার জন্য দোয়া করমু। আল্লায় যেন আপনার হায়াত বাড়ায় দেয়। আমার মতো আরও গরীব-দুঃখীকে যেন সাহায্য করতে পারেন।’

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি খুব খুশি হলাম। আপনার এটা পেয়েছেন। ভালোভাবে থাকেন। সেটাই চাই।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ বালিয়াডাঙ্গীতে গৃহহীন ভূমিহীনদের আনন্দের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে গম্ভীরা গান পরিবেশন করা হয়। গম্ভীরা শুনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথম গম্ভীরা শুনেছিলাম ১৯৭৪ সালে নাটোরে (উত্তরা গণভবন) আব্বা নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই সময় নানা-নাতি প্রথম এসে গম্ভীরা শোনায়। তাই এখন শুনবো অবশ্যই। খুব ভালো।’ পরে তিনি গম্ভীরা শোনেন।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন