বিজ্ঞাপন

কবিতা কৃষ্ণমুর্তি; সংগীতে নিবেদিত এক প্রাণ

January 25, 2021 | 6:07 pm

এন্টারটেইনমেন্ট ডেস্ক

বলিউডের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে যে শিল্পী সর্বজন শ্রদ্ধেয় হিসেবে সবার মনে জায়গা করে নিয়েছেন- তিনি কবিতা কৃষ্ণমুর্তি। বিভিন্ন চলচ্চিত্রে গান করা এই শিল্পী অসামান্য অবদান রেখেছেন শাস্ত্রীয় সংগীতেও। গান করেছেন ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন ভাষায়। আজ এই শিল্পীর জন্মদিন। ৬৩ বছর পুর্ণ করলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

১৯৫৮ সালের ২৫ জানুয়ারি তারিখে নয়াদিল্লির তামিল আইয়ার পরিবারে কবিতার জন্ম। জন্মের সময় নাম ছিলো সারদা কৃষ্ণমূর্তি। বাবা টি এস কৃষ্ণমূর্তি ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মী। মিসেস ভট্টাচার্য নামে তার এক আত্মীয়ের কাছে প্রথম গান শিখতে শুরু করেন। প্রথম দিকে তিনি রবীন্দ্রসংগীত শিখতেন। এরপর বলরাম পুরী’র কাছে শাস্ত্রীয় সংগীত শিখেন। মাত্র আট বছর বয়সে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন সঙ্গীত প্রতিযোগিতায়।

মাত্র নয় বছর বয়সেই জনপ্রিয় এবং কিংবদন্তি শিল্পী লতা মঙ্গেশকর এর সাথে গান করার সুযোগ পান। ১৪ বছর বয়সে তিনি মুম্বই এ আসেন। মু্ম্বাইয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন কবিতা। কলেজ ফেস্টে আলাপ রাণু মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। গান শুনে মুগ্ধ রাণু কবিতাকে নিয়ে গিয়ে গিয়েছিলেন তার বাবা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কাছে। তিনি কবিতাকে নিজের অনুষ্ঠানে গাইবার সুযোগ করে দেন।

বিজ্ঞাপন

এরপর মান্না দে-এর সান্নিধ্যে আসেন কবিতা। তিনিও বেশ কিছু জায়গায় কবিতাকে গানের সুযোগ করে দেন। সেই আত্মীয় যার কাছে তিনি প্রথম গান শিখেছিলেন কবিতা, তার মাধ্যমে বিখ্যাত সংগীত পরিচালক লক্ষীকান্ত’র সাথে পরিচিত হন কবিতা। লক্ষীকান্ত তাকে বলিউডের অনেক ছবিতে গান করার সুযোগ দেন।

প্রথম প্লে ব্যাক-এর সুযোগ পান ১৯৭৮ সালে মুক্তি পাওয়া কন্নড় ছবি ‘ওন্দানন্দু কালাদাল্লি’-তে। গিরিশ কারনাডের পরিচালনায় এই ছবিতে একটিমাত্র গান-ই ছিল। লোকসঙ্গীতের আঙ্গিকে কবিতার গলায় সেই গান খুবই জনপ্রিয় হয়।

বিজ্ঞাপন

১৯৮০ সালে তিনি প্রথম গান করেন মাং ভারো সাজনা ছবিতে। কিন্তু, দূর্ভাগ্যবশত গান টি শেষ পর্যন্ত বাদ যায়। হিন্দি ছবিতে তার প্রথম বড় ব্রেক ১৯৮৫ সালে, ‘প্যায়ার ঝুকতা নহি’ ছবিতে। এরপর ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’, ‘১৯৪২: আ লভ স্টোরি’, ‘ইয়ারানা’, ‘অগ্নিসাক্ষী’, ‘খামোশি’-র মতো ছবিতে তার গান ইন্ডাস্ট্রিতে পায়ের তলায় জমি শক্ত করে। এসময়টা ছিলো তার জন্য খুব সৌভাগ্যের, কিছুদিন পরেই তিনি জনপ্রিয় কিংবদন্তি শিল্পী কিশোর কুমার এর সাথে কাজ করার সুযোগ পান। কিশোর-রফি থেকে শুরু করে সোনু নিগম-শান। কয়েক দশক ধরে সেরা গায়কদের সঙ্গে পারফর্ম করেছেন কবিতা।

লতা মঙ্গেশকর ও আশা ভোঁসলের সঙ্গেও গান গেয়েছেন কবিতা। হিন্দির পাশাপাশি তেলুগু, মরাঠি, উর্দু, তামিল, মালয়ালম, কন্নড়, গুজরাতি এবং বাংলা গানের দুনিয়া দাপটের সঙ্গে শাসন করেছেন কবিতা। গান গেয়েছেন ইংরেজি ও উর্দুতেও। ধ্রুপদী সঙ্গীত, প্লেব্যাক-এর সঙ্গে তাঁর সাবলীল বিচরণ রবীন্দ্রসঙ্গীতেও। গান করেছেন ‘রামায়ণ’, মহাভারত’, ‘আলিফ লায়লা’-র মতো দূরদর্শনের জনপ্রিয় সিরিয়ালেও।

‘ডোলা রে ডোলা’, ‘আজ ম্যায়ঁ উপর’, ‘মেরা পিয়া ঘর আয়া’, ‘প্যায়ার হুয়া ছুপকে সে’, ‘হাম দিল দে চুকে সনম’, ‘নিম্বুরা’-র মতো গান তাঁকে অজস্র পুরস্কার এনে দিয়েছে। ২০০৫ সালে ভূষিত হন ‘পদ্মশ্রী’-তে।

বিজ্ঞাপন

বলিউডি গানের দুনিয়ায় তিনি তখন খ্যাতির শীর্ষে। ঠিকই করে নিয়েছিলেন, বাকি জীবনটা কাটাবেন সঙ্গীতসাধনাতেই। কিন্তু চল্লিশে পৌঁছে আচমকাই অন্য খাতে বইতে শুরু করল জীবন। মনের মানুষকে বিয়ে করে রাতারাতি চার সন্তানের মা হয়ে গেলেন কবিতা কৃষ্ণমূর্তি। ১৯৯৯ সালে গাঁটছড়া বাঁধলেন যশস্বী বেহালাবাদক ডি এল সুব্রহ্মণ্যমের সঙ্গে। দু’জনের বয়সের ব্যবধান ১১ বছর। সুব্রহ্মণ্যম-এর প্রথম স্ত্রী ভিজি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন ১৯৯৫ সালে। তার চার বছর পরে নিতান্ত সাদামাটা অনুষ্ঠানে তিনি বিয়ে করেন কবিতাকে। স্বামীর আগের পক্ষের চার সন্তানকে পরম যত্নে আপন করে নিয়েছেন কবিতা।

এখন কবিতা একজন দায়িত্বশীল স্ত্রী, স্নেহময়ী মা এবং দিদিমা। বিয়ের পরে কবিতার জীবন আমূল বদলে যায়। বিয়ের পর মুম্বাইয়ের পাট তুলে তিনি স্থায়ী ভাবে বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা। ২০০৭ সালে কবিতা এবং তার স্বামী একত্রে ব্যাঙ্গালুরুতে একটি মিউজিক ইন্সটিটিউট তৈরি করেছেন। যার নাম সুব্রামানিয়াম একাডেমি।

নিজের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কবিতা জানিয়েছেন, বিয়ের আগে তার পায়ের কাছে জুতো এগিয়ে দেওয়ার জন্যেও একজন থাকত। সেখান থেকে বিয়ের পরেই গুরু দায়িত্ব এসে পড়ে কাঁধে। কিন্তু প্রতিটা মুহূর্ত এবং ভূমিকা ভরপুর উপভোগ করছেন তিনি। জীবনের চলার পথকে নিজের ছন্দেই সুরেলা করে নিতে ভালবাসেন তিনি।

কবিতা কৃষ্ণমুর্তির গাওয়া পুরষ্কার প্রাপ্ত কয়েকটি গান—

১. ‘পেয়ার হুয়া চুপকে সে’– ‘১৯৪২: এ লাভ স্টোরি’ ছবিতে এই গানটি গেয়ে ১৯৯৫ সালে ‘বেস্ট ফিমেল প্লে-ব্যাক শিল্পী’র পুরস্কার লাভ করেন কবিতা।

২. ‘মেরা পিয়া ঘর আয়া’– ছবির নাম ‘ইয়ারানা’। এই গানটিও ১৯৯৬ সালে ‘বেস্ট ফিমেল প্লে-ব্যাক শিল্পী’র পুরষ্কার লাভ করে।

৩. ‘আজ মে উপর’– ‘খামোশি’ ছবির এই গানটির জন্য ১৯৯৭ সালে ‘বেস্ট ফিমেল প্লে-ব্যাক শিল্পী’ হিসেবে ফিল্মফেয়ার ও স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড পুরষ্কার লাভ করেন কবিতা।

৪. ‘হাম দিল দে চুকে সানাম’– ‘হাম দিল দে চুকে সানাম’ ছবির এই গানটিও ২০০০ সালে ‘বেস্ট ফিমেল প্লে-ব্যাক শিল্পী’র পুরষ্কার লাভ করে।

৫. ‘নিমুড়া নিমুড়া নিমুড়া– ‘হাম দিল দে চুকে সানাম’ ছবির এই গানটিও ২০০০ সালে একাধিক পুরষ্কার লাভ করে

৬. ‘ডোলা রে ডোলা’- ‘দেবদাস’ চলচ্চিত্রের এই গানটির জন্য ২০০৩ সালে ‘বেস্ট ফিমেল প্লে-ব্যাক শিল্পী’ হিসেবে একাধিক পুরস্কার লাভ করেন কবিতা।

ছবি ও তথ্য: অন্তর্জাল থেকে

সারাবাংলা/এএসজি

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন