বিজ্ঞাপন

১২ কোটি টাকার ইজারায় ১২ বছরের ব্যর্থতার অবসান!

January 27, 2021 | 9:19 am

সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ১২ বছরের বেশি সময় ধরে রাজধানী ঢাকার গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব পাচ্ছিল না ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। যার কারণে নানা অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলার ভেতর দিয়ে চলেছে টার্মিনাল দুটি। ফলে এক পর্যায়ে যাত্রী দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে। এমনকি যাত্রী দুর্ভোগ কমাতে ও শৃঙ্খলা ফেরাতে একাধিকবার চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয় ডিএনসিসি। আর এই ব্যর্থতার জন্য রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের বাধাকে দায়ী মনে করে করপোরেশন।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু সম্প্রতি ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলামের সাহসিক উদ্যোগে এক যুগের ব্যর্থতার অবসান ঘটেছে। মহাখালী এবং গাবতলী বাস টার্মিনালের শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং যাত্রী দুর্ভোগ লাঘবে খোলা দরপত্রের মাধ্যমে এক বছরের জন্য টার্মিনাল দুটির ইজারার উদ্যোগ নেন আতিকুল ইসলাম। তার এ উদ্যোগে সর্বোচ্চ দরপত্রের সাড়াও মিলেছে। এমনকি ১২ কোটি ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় টার্মিনাল দুটির ইজারার অর্থও পেয়ে গেছে ডিএনসিসি। যা এ যাবৎকালে টার্মিনাল দুটি থেকে পাওয়া সর্বোচ্চ ইজারা।

ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের আমলে নামমাত্র মূল্যে টার্মিনাল দুটি থেকে রাজস্ব আদায়ের জন্য সহযোগিতাকারী হিসেবে দুজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এমনকি দীর্ঘ এক যুগেও নির্ধারিত রাজস্বের পরিমাণ বাড়ানো হয়নি। এছাড়া আদায় সহযোগিতাকারীরা নানা অজুহাত দেখিয়ে ১১ বছরে প্রায় ৪ কোটি টাকা বকেয়া দেখিয়েছে ডিএনসিসিকে। বারবার সময় বাড়িয়েও সেই টাকা পরিশোধ করতে পারেনি তারা।

জানা যায়, ২০০৯ সালের ৪ মে গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের রাজস্ব আদায় সহযোগিতাকারী হিসেবে অবিভক্ত সিটি করপোরেশন আমলে মো. জসিম উদ্দিনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সে সময় ভ্যাট, আয়কর, বিদ্যুৎ ও পানির বিল সিটি করপোরেশন থেকে পরিশোধ করা হতো। তবুও ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তার কাছে ডিএনসিসির বকেয়া পাওনা ছিল ২ কোটি ৭৭ লাখ ৯৭ হাজার ৮৭৩ টাকা। অর্থাৎ ওই সময় কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় হয়নি।

বিজ্ঞাপন

একইভাবে ২০০৯ সালের ১০ মে মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের রাজস্ব আদায় সহযোগিতাকারী হিসেবে অবিভক্ত সিটি করপোরেশন আমলে মেসার্স সহিদুল্লাহ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ টার্মিনালেও ভ্যাট, আয়কর, বিদ্যুৎ ও পানির বিল সিটি করপোরেশন থেকে পরিশোধ করা হতো। তবুও ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির কাছে ডিএনসিসির বকেয়া পাওনা ছিল ১ কোটি ২০ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ এই টার্মিনাল থেকেও কাঙ্ক্ষিত রাজস্বের সাড়া মেলেনি।

শেষ পর্যন্ত টার্মিনাল দুটি ইজারা দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। সেই ধারাবাহিকতায় খোলা দরপত্রের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দর পেয়ে দুটি প্রতিষ্ঠানকে আগামী এক বছরের জন্য রাজস্ব আদায়ের জন্য মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনাল ইজারা দেওয়ার কাজ সম্পন্ন করেছে ডিএনসিসি। ইজারার এই প্রক্রিয়ায় নানা দিক থেকে বিভিন্ন ভয়-ভীতি এমনকি হুমকিও এসেছিল বলে জানান মেয়র আতিকুল। তবুও তিনি সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন বলে জানা গেছে।

এরই ধারাবাহিকতায় গাবতলী বাস টার্মিনালটি ২০২১ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত এক বছরের জন্য লালমাটিয়ার রাফি ট্রেডার্স লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান ৭ কোটি ৩৯ লাখ ২০ হাজার টাকায় ইজারা পেয়েছে। আর মহাখালী বাস টার্মিনালটি চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি থেকে আগামী বছরের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ইব্রাহিমপুরের গাজী রাইয়ান এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান এক বছরের জন্য ৪ কোটি ৬২ লাখ টাকায় ইজারা পেয়েছে। শুধু তাই নয়, ইজারাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান দুটি টার্মিনালের বিদ্যুৎ এবং পানির বিল পরিশোধেও রাজি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘অতীতে মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনাল দুটি থেকে প্রত্যাশিত কোনো রাজস্ব আদায় করা যায়নি। আমি এসে দেখেছি এখানে অনেক আগে থেকেই গলদ ছিল। দুজনকে আদায়কারী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেখানে একটা ক্লজ ছিল- হরতাল বা বিভিন্ন কারণে যখন পরিবহন বন্ধ থাকবে, তখন ডিএনসিসিকে কোনো টাকা দিতে হবে না। এই সিদ্ধান্তগুলো ভুল ছিল। তারা তাদের পাওনা অর্থ তো দেয়ই-নি, বরং সিটি করপোরেশনের কাছে উল্টো টাকা দাবি করেছে।’

একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার জন্য এই ধরনের অসম চুক্তি করা হয়েছিল জানিয়ে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘আমি বলেছি এ ধরনের অসম চুক্তি আমরা মেনে নিতে পারি না। এতে সিটি করপোরেশন রাজস্ব হারাচ্ছে। তাই আমরা উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ইজারা দিয়েছি। আমরা যখন ইজারা দিতে গেলাম, আমাদের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমি বলেছি, কারও কথা শোনার দরকার নেই। নিয়ম অনুযায়ী দরপত্রের মাধ্যমে ইজারা দেওয়া হবে।’

মেয়র আতিক বলেন, ‘গত ১২ বছরে কমপক্ষে ১৫০ কোটি টাকা আদায় করা যেত। এখন ইজারাদারদের বাস টার্মিনালগুলোতে সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখার জন্য শর্ত দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় ইজারা বাতিল হবে। আগের বিশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখা যাবে না। এখন নতুন সিস্টেম প্রচলন হতে যাচ্ছে। এভাবে আস্তে আস্তে রাজধানীতে পরিবর্তন আসবে।’

অতীতে যারা অনিয়ম করেছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা?- এ বিষয়ে মেয়র আতিক বলেন, ‘অবশ্যই। তদন্ত করে অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনিয়মকারী যেই হোক কোনো ছাড় পাবে না।’

বিজ্ঞাপন

গাবতলী বাস টার্মিনালে রাজস্ব আদায়ের উল্লেখযোগ্য খাত (নতুন করে নির্ধারিত)

বাস ও মিনিবাস ৫০ টাকা; সিএনজি (ট্যাক্সি) ১০ টাকা; ঠ্যালাগাড়ি ও ভ্যান ১০ টাকা; বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত পিকআপ ৩০ টাকা। মূল ভবনের স্থায়ী দোকান প্রতি বর্গফুট প্রতি মাসে ৫ টাকা; অস্থায়ী দোকান প্রতি বর্গফুট প্রতি মাসে ২৫ টাকা হারে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিল ১৫ টাকা ৩৬ পয়সা। ১৫ ও ৩৬ বর্গফুটের অস্থায়ী টোকেনের দোকান মাসিক যথাক্রমে ২২৫ ও ৩৬০ টাকা। মূল ভবনের বাইরে স্থায়ী চা ও ফলের স্টল মাসিক ৭৫০ টাকা; পানের স্টল মাসিক ৫০০টাকা; খাবারের স্টল মাসিক ১০০০ টাকা। গাড়ি ধোয়ার র্যাম্প মাসিক ৬ হাজার টাকা।

মহাখালী বাস টার্মিনালে রাজস্ব আদায়ের উল্লেখযোগ্য খাত (নতুন করে নির্ধারিত)

বাস ও মিনিবাস ৫০ টাকা; সিএনজি (ট্যাক্সি) ১০ টাকা; ঠ্যালাগাড়ি ও ভ্যান ১০ টাকা; বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত পিকআপ ৩০ টাকা। টার্মিনাল ভবনের ভিতরে ১০৪ বর্গফুট থেকে ৮৭৫ বর্গফুটের ৬টি দোকান ও ক্যান্টিন প্রতি বর্গফুট মাসিক ২১ টাকা থেকে ৩৩ টাকা। অস্থায়ী টোকেনের দোকান প্রতি বর্গফুট প্রতি মাসে ১৬ টাকা। ১টি বড় টিকিট কাউন্টার মাসিক ৬ হাজার ৬৭৫ টাকা। ৩৯টি ছোট টিকিট কাউন্টারের প্রতিটি মাসিক ৭৩৫ টাকা। প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিল ১৫ টাকা ৩৬ পয়সা।

সারাবাংলা/এসএইচ/পিটিএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন