বিজ্ঞাপন

জোছনা নামল লালদিঘীর জলে

January 30, 2021 | 11:38 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: পাহাড়, নদী, সাগরের মিলনক্ষেত্র অপূর্ব নৈসর্গিক লীলাভূমি চট্টগ্রাম। সময়ের পরিক্রমায় ইট-পাথরের শহরে পরিণত হচ্ছে বন্দরনগরী। বহুতল ভবনের ছাদ ঢেকে দিচ্ছে সুবিশাল আকাশ। তবুও এই শহরেই পূর্ণিমার রাতে কর্ণফুলীর জলে নামে জোসনার আলোকধারা। মায়াবি জোছনা খেলা করে লালদিঘীর জলে। এই শহরে সারি সারি ভবনের ফাঁক গলে এখনও উঁকি দেয় চাঁদ।

বিজ্ঞাপন

যে শহরের পরিচিতি শুধু অর্থনীতি আর বাণিজ্যের জটিল হিসাবে সীমাবদ্ধ, সেই শহরের মানুষ কি তবে পূর্ণ চাঁদের ভরা জোছনায় অবগাহন ভুলে যাবে? প্রায় ভুলতে যাওয়া শহরবাসীকে চাঁদের বাঁধ ভাঙা হাসি দেখানোর জন্য লালদিঘীর পাড়ে সমবেত করেছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।

গগনে চাঁদ, সেই চাঁদের জোছনায় ভরা আকাশ আর আকাশ থেকে জোছনা এসে পড়েছিল লালদিঘীতে। আলোর প্রতীক হিসেবে ওড়ানো হয় ফানুসও। সুজনের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ বিমোহিত করেছে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৩০ জানুয়ারি) রাত ৮টায় ‘জ্যোৎস্না উৎসব’ শুরুর আগেই লালদিঘীর পাড়ের অনুষ্ঠানস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। আবৃত্তিশিল্পী কঙ্কন দাশের উপস্থাপনায় কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্রীদের পরিবেশনায় ‘তুমি নির্মল করো মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’ গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসব। ‘চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে উছলে পড়ে আলো, ও রজনীগন্ধা তোমার গন্ধসুধা ঢালো’ এবং ‘কর্ণফুলীর সাম্পান মাঝি আমার মন’- গান দুটিও পরিবেশন করেন ছাত্রীরা।

এরপরেই উৎসবের প্রধান অতিথি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে নিয়ে মঞ্চে হাজির হন প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।

বক্তব্যে ‍উপমন্ত্রী নওফেল সুজনের বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘আমাদের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন যথার্থই বলেছেন, চট্টগ্রাম শহরকে বলা হয় বিত্তের শহর, অর্থনীতির শহর। বিত্তের শহরকে চিত্তের শহরে পরিণত করার একটি প্রয়াস আসলেই আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রশাসক মহোদয়ের এই জ্যোৎস্না উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে। নাগরিক সেবা নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর অনেক মানুষের মনে যখন অমাবশ্যা দেখা দিয়েছিল, তখন তিনি পূর্ণিমার চাঁদ হয়ে এই শহরে এসেছিলেন মানুষের কাছে।’

বিজ্ঞাপন

সুজনের ভূয়সী প্রশংসা করে নওফেল বলেন, ‘আজ বলতে পারি, তিনি দলমত নির্বিশেষে সবার মনে স্থান করে নিয়েছেন। তিনি রাজনীতি দিয়ে গণমানুষের মনে স্থান করে নিয়েছেন। কঠিন সময়ে তিনি আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন নিষ্ঠা, একাগ্রতা আর মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মাধ্যমে যে রাজনীতি করাতে চান, সেটি করা অসম্ভব কিছু নয়। রাজনীতিতে বিত্তের প্রয়োজন হয় না, চিত্তের প্রয়োজন হয়, সেটি আমাদের প্রশাসক মহোদয় দেখিয়ে দিয়েছেন।’

চট্টগ্রাম নগরীর নবনির্বাচিত মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীকে প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনকে অনুসরণের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করতে চাই, প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন এই শহরে যে বিপ্লবের সূচনা করেছেন, সেই বিপ্লবের ধারাবাহিকতা নবনির্বাচিত মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীও বজায় রাখবেন। মত-দ্বিমত যাই থাক মানুষের সেবার চেয়ে বড় কোনো রাজনীতি নেই। এই জ্যোৎস্না উৎসবের ধারাবাহিকতা আমরা দেখতে চাই। মাত্র ছয় মাসে তিনি অনেক সৃষ্টিশীল কাজ আমাদের ‍উপহার দিয়েছেন। ছয় মাসে ছয় বছরের চেয়ে বেশি কাজ করে উনি মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন। আমরা উনাকে আরও ভিন্নভাবে, আরও উচ্চভাবে দেখতে চাই।’

বিজ্ঞাপন

‘চট্টগ্রামের মানুষ উনাকে ভালোবেসেছেন। উনি যখন করোনায় আক্রান্ত হলেন তখন দেখেছি, এই শহরের সর্বস্তরের মানুষ উনার সুস্থতার জন্য দোয়া করেছেন। একজন রাজনীতিবিদের জন্য মানুষের ভালোবাসার চেয়ে বড় কোনো পাওয়া নেই ‘— বলেন নওফেল।

খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘সুপ্রাচীনকাল থেকে চট্টগ্রামকে বিশ্ব চেনে। ইবনে বতুতা থেকে সকলে এদেশে এসেছে এই শহর হয়ে। এ শহরের ঋদ্ধ ঐতিহ্য আছে। চিত্তের নয় বিত্তের শহর হোক এ চট্টগ্রাম। রায় বাহাদুর রাজ কুমার ঘোষ এ জমিটি দিয়েছিলেন পার্ক করার জন্য। মেয়র থাকাকালে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এ পার্ক করেছিলেন। কিন্তু মহিউদ্দিন চৌধুরী চলে যাবার পর অনাদরে-অবহেলায় এই লালদিঘী মুখ থুবড়ে পড়ে। আমি ছয় মাসের জন্য কেন এসেছিলাম জানি না। প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব দিলেন। লালদীঘিকে পুনরুদ্ধার করে সংস্কার করেছি। পাশে আছে লালদীঘি মাঠ, ছয় দফা উত্থাপন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। উপমন্ত্রী নওফেল সেটাকে সুন্দর করে সাজিয়েছেন। শহীদ মিনার, মুসলিম হল, লাইব্রেরি, মাঠ, পার্ক হয়ে লালদীঘি হবে আমাদের সংস্কৃতির কেন্দ্রভূমি।‘

‘আমরা জ্যোৎস্না উৎসবের আয়োজন করেছি। লালদিঘীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আমরা এ শহরের মানুষেরা দেখব অনিন্দ্য জোছনা। আমরা চাই এ জোছনা সবার অন্তরে গন্ধসুধা ঢালুক। সোমবার এখানে কবিতা উৎসব ও পিঠা উৎসব হবে। আরেকটা উৎসব ছিল, করতে পারলাম না। ঘুড়ির মেলা। যিনি মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন উনাকে প্রাণঢালা অভিনন্দন। আমি মনে করি চট্টগ্রামের মানুষের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তিনি এগিয়ে নিয়ে যাবেন’— বলেন সুজন।

এ সময় মঞ্চে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম, কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এম মোহিত উল আলম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আক্তারও ছিলেন।

এরপর জ্যোৎস্না নিয়ে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিব ছড়াকার আলেক্স আলীম, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বিদ্যুৎ বড়ুয়া, নাট্যজন সাইফুল আলম বাবু, আবৃত্তিশিল্পী মিলি চৌধুরী। নৃত্যশিল্পী অনন্য বড়ুয়ার নির্দেশনায় প্রাপন একাডেমির শিল্পীরা নাচ পরিবেশন করেন। এরপর সমবেতরা সবাই জড়ো হন লালদিঘীর পাড়ে। নিভিয়ে দেওয়া হয় আলো। আলোর প্রতীক হিসেবে ওড়ানো হয় ফানুস। মঞ্চে বাজছিল চাটগাঁইয়া গান।

ছবি: শ্যামল নন্দী

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন