বিজ্ঞাপন

সঞ্চয়পত্র: ৬ মাসে লক্ষ্যমাত্রার বেশি ঋণ নিয়েছে সরকার

February 3, 2021 | 2:25 pm

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার ৪৮৭ কোটি ১২ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। যা পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৪৮৭ কোটি টাকা বেশি।

বিজ্ঞাপন

২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার ২০ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু অর্থবছরের মাত্র ছয় মাসেই সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ ছিল মাত্র ৫ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সারাবাংলাকে বলেন, বর্তমানে আমানত সুদের হারসহ অন্য সবক্ষেত্রে সুদের হার কমে গেছে। এজন্য নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে সাধারণ মানুষ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছে।

তিনি বলেন, ব্যাংকে আমানত রাখলে ৮ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ পাওয়া যেত। বর্তমানে তা কমে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। সঞ্চয়পত্রে এখনো ১০ থেকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ পাওয়া যায়। সঞ্চয়পত্র বিক্রির সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া না হলে প্রতি মাসেই ২০ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হতো।

বিজ্ঞাপন

আহসান এইচ মুনসুর তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বাড়ার প্রধান কারণ প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স। গত কয়েক মাসে প্রবাসীদের রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত অর্থ নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে তারা সঞ্চয়পত্রকে বেছে নিয়েছেন। বলা যায়, রেমিটেন্সের টাকা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ হচ্ছে।

সঞ্চয় অধিদফতরের সর্বশেষ প্রতিবেদনে অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১০ হাজার ৪৫৫ কোটি ৩০ লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৫০৮ কোটি ২২ লাখ টাকার। পাঁচ বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৯৩২ কোটি ২০ লাখ টাকার। এছাড়া পেনশনার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৮১৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

সূত্র জানায়, প্রথম ছয় মাসে মোট জমা হয়েছে ৫৪ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। এর মধ্যে মূল ঋণ পরিশোধ হয়েছে ৩৪ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা, মুনাফা পরিশোধ হয় ১৬ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা। সঞ্চয় ব্যুরো ও ডাকঘরে যে পরিমাণ জমা হয়েছে, তা থেকে মূল পরিশোধ হয়েছে বেশি। এ দুই জায়গা থেকে নিট বিক্রি নেতিবাচক হয়েছে। তবে নিট বিক্রির পুরোটাই হয়েছে ব্যাংকের মাধ্যমে।

বিজ্ঞাপন

সর্বশেষ চার অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি

গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ২৭ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হলেও ৩০ জুন শেষ হওয়া অর্থবছরে মোট ৬৭ হাজার ১২৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এরমধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ ৫২ হাজার ৬৯৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা শোধ করা হয়েছে। এ হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে যে পরিমাণ অর্থ নেওয়ার লক্ষ্য ধরেছিল, তার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ঋণ নেওয়া হয়। ঋণ দাঁড়ায় ৪৯ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৪ হাজার কোটি টাকা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিক্রি হয় ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার পেয়েছিল ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা।

সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমাতে সরকারের যত উদ্যোগ

সঞ্চয়পত্র বিক্রির চাপ কমাতে গত বছরের ১ জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্রে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। একইসঙ্গে ১ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হয়। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি না করার শর্ত আরোপসহ আরও কিছু কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এসব কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কিছুটা কমতে শুরু করলেও বর্তমানে আবার সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়তে শুরু করেছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জিএস/এএম/এমআই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন