বিজ্ঞাপন

কেন্দ্র থেকেই পূরণ হচ্ছে সভাপতিমণ্ডলীর শূন্যপদ

February 3, 2021 | 10:44 pm

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: করোনার সময়ে মারা যাওয়া আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর দুই প্রবীণ সদস্য মোহাম্মদ নাসিম ও সাহারা খাতুনের শূন্যপদ পূরণ করতে যাচ্ছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। আর এতে কেন্দ্রীয় নেতারাই আসছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমনকি ফেব্রুয়ারিতেই এই দুটি পদ পূরণ হতে পারে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা পদোন্নতিপ্রাপ্ত নেতাদের শূন্যপদ পূরণেও সিদ্ধান্ত দিতে পারেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী নেতারা।

বিজ্ঞাপন

কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতা জানান, ফেব্রুয়ারির মাঝিমাঝি সীমিত পরিসরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি নির্ধারণসহ সাংগঠনিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা হবে ওই বৈঠকে। পাশাপাশি সেখান থেকে সভাপতিমণ্ডলীর শূন্যপদ দুটি পূরণ করা হবে।

সভাপতিমণ্ডলীর শূন্য দুই পদে পদোন্নতি পেতে আগ্রহী কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের কয়েকজন নেতা। ইতোমধ্যে তারা বিভিন্নভাবে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণের পাশাপাশি নানা চেষ্টা-তদবির করছেন। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি সিনিয়র দুই নেতাকে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য করার ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন বলেও নিশ্চিত করেছেন দলের নির্ভরযোগ্য এক সূত্র।

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ২৪(২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাতীয় কাউন্সিল, জাতীয় কমিটি, কার্যনির্বাহী সংসদ বা অন্য কোনো কমিটি বা সংসদীয় বোর্ডের সদস্য পদ বা আওয়ামী লীগের কোনো কর্মকর্তার পদ শূন্য হইলে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ উক্ত পদ শূন্য হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে কো-অপশন বা মনোনয়ন দ্বারা অবশ্যই পূরণ করিবে।’

বিজ্ঞাপন

গত বছরের ৩ অক্টোবর করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি চলাকালীন গণভবনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। তার আগে ওই ১৬ সেপ্টেম্বর গণভবনে সীমিত পরিসরে সভাপতিমণ্ডলীর সভা হয়। সর্বশেষ গত বছরের ৭ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের দুই সদস্য মনোনীত করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এতে সদস্য মনোনীত হন বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদের ছেলে আজিজুস সামাদ আজাদ ডন এবং ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম। ২১তম জাতীয় কাউন্সিলে দেওয়া ক্ষমতাবলে এই দুজনকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।

২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম কাউন্সিল অধিবেশনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। তাতে নবমবারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুনর্নিবাচিত হন ওবায়দুল কাদের। এর কয়েকদিন পর ২৬ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। তখন ধর্ম এবং শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক পদ ফাঁকা রাখা হয়েছিল। এরপর গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর সেই ফাঁকা পদে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমই’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানকে দলের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক এবং ২৫ নভেম্বর সিরাজুল মোস্তফাকে ধর্মবিষয়ক সম্পাদক করা হয়। তখনও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের দুটি সদস্য পদ খালি ছিল।

এরপর গত বছর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান মোহাম্মদ নাসিম ও সাহারা খাতুন। এতে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর দুটি পদ শূন্য হয়। এছাড়া করোনাভাইরাস সংক্রমণে দলের কেন্দ্রীয় সদস্য সিলেটের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান মারা যান। ফলে আওয়ামী লীগের দুই সভাপতিমণ্ডলী ও তিন কার্যনির্বাহী সদস্য মিলিয়ে পাঁচটি পদ শূন্য ছিল। এর মধ্যে কার্যনির্বাহী কমিটির দুটি পদ পূরণ করা হয়েছে। তবে গতবছরের ২৫ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের আরেক সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সব মিলেয়ে এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সংসদের চারটি পদ শূন্য রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য বলেন, সভাপতিমণ্ডলীর শূন্যপদ পূরণের এখতিয়ার সম্পূর্ণ দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার। তিনি যখন প্রয়োজন মনে করবেন তখনই কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতিমণ্ডলীর শূন্যপদে নিয়োগ দিতে পারবেন। চলতি মাসে মাঝামাঝি সময়ের গণভবনে সীমিত পরিসরে আমাদের দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে পদগুলো পূরণে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

এদিকে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সভাপতিমণ্ডলীর দুই শূন্য পদে রাজশাহী বিভাগের যেকোনো এক নেতার আসার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর পর দলের সভাপতিণ্ডলীতে বর্তমানে রাজশাহী বিভাগের কোনো প্রতিনিধি নেই। রাজশাহীর মতো অবস্থা বরিশালেরও। তাই আরেকটিতে বরিশাল বিভাগের কোনো এক নেতা আসতে পারেন। অন্যদিকে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেকমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রমও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে মনোনীত হতে পারেন বলেও আলোচনা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পদাধিকারবলে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। তাদের নিয়ে মোট ১৯ সদস্যের সভাপতিমণ্ডলীতে বর্তমানে রয়েছেন ১৭ জন। সভাপতিমণ্ডলীর অন্য সদস্যরা হলেন- সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্যাহ, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য, নুরুল ইসলাম নাহিদ, আব্দুর রাজ্জাক, কর্নেল (অব.) ফারুক খান, রমেশ চন্দ্র সেন, আব্দুল মান্নান খান, আবদুল মতিন খসরু, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

Tags: , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন