বিজ্ঞাপন

‘ঘরডার ভিত্রে আইয়া দেহুইন, সব ফাইট্টা গেছে’

February 10, 2021 | 6:39 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

নেত্রকোনা: ‘আমরার নামে দেওয়া এই ঘরডার একটু ভিত্রে আইয়া দেহুইন, সব ফাইট্টা গেছে। অহনও ঘরে ফাড় হই নাই; ভয় করতাছে যদি ভাইঙ্গা মাথার উপ্রে ফড়ে।’– কথাগুলো বলছিলেন নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার ধলা গ্রামের রবিকুল ইসলামের স্ত্রী বিউটি আক্তার।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারাদেশে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারদের দেওয়া ঘরের মধ্যে ধলা গ্রামে তৈরি করা হয় ১২টি ঘর । রবিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী বিউটি আক্তারের নামে বরাদ্দ হয় ৭ নম্বর ঘর, যেখানে ফাটল দেখা দিয়েছে ঘরের দেয়াল ও মেঝেতে । এরকম আরও ৮টি ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে । এ ঘটনায় মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।

গত ২৩ জানুয়ারি সকালে মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারাদেশে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধন করার পর একযোগে নেত্রকোনা জেলার ১০ উপজেলা পরিষদের হলরুমে পরিবারগুলোর হাতে ঘরের দলিল তুলে দেওয়া হয়। উদ্বোধনের ১১ দিনের মাথায় গত ২ ফেব্রুয়ারি পূর্বধলা উপজেলার ধলা গ্রামের আটটি ঘরের দেয়াল ও মেঝেতে ফাটল দেখা দেয়।

উপজেলায় ৫৩টি ঘর নির্মাণে প্রতিটি ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা করে মোট ৯০ লাখ ৬৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে বিশকাকুনি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ধলা গ্রামে ১২টি ঘরের মধ্যে ৮টি ঘরে ফাটল দেখা দেয়। ওই প্রকল্পের গৃহনির্মাণ বাস্তবায়নে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে কুলসুম এবং কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়রা জানান, উদ্বোধনের পর আটটি ঘরের মেঝে ও দেয়ালসহ বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেওয়ার বিষয়টি এলাকায় আলোচনায় উঠে আসে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকেও সমালোচনা শুরু হয়। এ অবস্থায় ঘরের তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রশাসনের লোকজন রাজমিস্ত্রির মাধ্যমে ফাটল স্থানে বালু ও সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা চালান।

জামাল মিয়া নামে একজন রাজমিস্ত্রি এখানের ঘর নির্মাণে কাজ করেছেন। এখন সেখানে তিনি ফাটলের স্থানে মেরামতের কাজ করছেন। তিনি জানান, প্রায় ২০ জনের মতো শ্রমিক মিলে গত দেড় মাসে ঘরগুলো নির্মাণ করেছেন। সময় কম পাওয়ায় দ্রুত কাজ করতে হয়েছে। ভিটের মাটি নরম থাকায় ঘরগুলোতে ফাটল ও মেঝে দেবে গেছে।

১১ নম্বর ঘরের বরাদ্দপ্রাপ্ত দুদু মিয়া, ৯ নম্বর ঘরের মরিয়ম আক্তার, ১ নম্বর ঘরের সুমন মিয়ার বাবা আলা উদ্দন, ৮ নম্বর ঘরের সাবজান বেগম জানান, তারা এখনো ঘরে বসবাস শুরু করেননি। সব ঘরের বিভিন্নস্থানে ফেটে গেছে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় বাসিন্দা আবু বক্কর, ওয়ালী উল্লাহসহ বেশ কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, গৃহনির্মাণে নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহার করে ও সিমেন্ট কম দিয়ে মিস্ত্রিরা কোনোরকমে ঘর তৈরি করে দিচ্ছেন। এ জন্যই দেয়াল ও মেঝতে ফাটল দেখা দিয়েছে। বর্ষা শুরু হলে বেশির ভাগ ঘরই টিকবে না।

বিধবা সাবজান বেগম (৮০) বলেন, ‘এই কুলে আমার দুই ছেরার মধ্যে একজন প্রতিবন্ধী, আরেকজন মাইনসের বাড়িত কাম করে। আমি ভিক্ষা কইরা চলি। প্রধানমন্ত্রী আমারে একটা ঘর উপহার দিছেন। এই ঘরের ওয়ালডা ফাইট্টা গেছে। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) তো ঠিকই দিছেন, মেস্তরিরা কাম বালা করছে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে কুলসুম মুঠোফোনে সারাবাংলাকে বলেন, ১২টি ঘরের মধ্যে বেশির ভাগ ঘরের দেয়াল ফেটে যাওয়ার সংবাদ পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পিআইওকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজমিস্ত্রি দিয়ে টেকসইভাবে রিপিয়েরিং করে দেওয়ার জন্য।

জেলা প্রশাসক কাজি মো. আব্দুর রহমান বলেন, গতকাল ধলা গ্রামের ঘরগুলো পরিদর্শন করেছি। ঘরগুলো প্রয়োজনীয় মেরামতের মাধ্যমে ব্যবহার উপযোগী করতে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি। সঠিকভাবে সব কাজ শেষ হওয়ার পর সুবিধাভোগীদের মধ্যে ঘরগুলো হস্তান্তর করা হবে। আমি সর্বোচ্চভাবে নজরে রাখছি।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসএসএ

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন