বিজ্ঞাপন

সহজে মিটছে না গণফোরামের কোন্দল

February 10, 2021 | 9:55 pm

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: গণফোরামের নেতৃত্ব এবং কর্তৃত্বের কোন্দল সহজে মিটছে না। দলটির  মধ্যে সৃষ্ট দুই গ্রুপের নেতারাই তাদের নিজ নিজ অবস্থানে অনড় রয়েছেন। দুই গ্রুপই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ করে যাচ্ছেন। এই অভিযোগ থেকে  ড. কামাল হোসেনও বাদ পড়েননি। দেশি-বিদেশি অপশক্তি নাকি ড. কামাল হোসেনকে ঘিরে ফেলেছেন। ফলে ওই গণ্ডি থকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই বলে অভিযোগ উঠেছে দলটির মধ্যে।

বিজ্ঞাপন

ড. কামাল হোসেন আগের মতো শক্ত অবস্থান থেকে সঠিক কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না। দুই গ্রুপের নেতা-কর্মীদের মতে  গত নির্বাচন থেকে গণফোরামের রাজনীতির চাকা অন্যের হাতে চলে গেছে। এ সব বিষয় নিয়ে দলটির  উভয় গ্রুপের কেউ সরাসরি মুখ খুলতে চাইছেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক নেতা এ সর্ম্পকে বলেছেন, ‘গত নির্বাচনের আগেই ড. কামাল হোসেন জামাত-বিএনপি ঘেঁষা হয়ে গেছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলে অনেক সিদ্ধান্ত নিতেন তিনি। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আদালতের শরণাপন্ন হতে চেয়েছেন।’

এদিকে গণফোরামের বর্তমান পরিস্থি সর্ম্পকে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, দলটির সাধারণ সম্পাদক ড. রোজা কিবরিয়া গণফোরাম থেকে পদত্যাগ করার পর বিরাজমান পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করে।

বিজ্ঞাপন

দলটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেনের খুবই বিশস্ত ছিলেন ড. রেজা কিবরিয়া। জাতিসংঘের একটি প্রকল্পের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পদ থেকে ড. রেজা কিবরিয়াকে দেশে ফিরিয়ে এনে গণফেরামের সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনীত করেন ড. কামাল হোসেন। তার পদত্যাগের কারণে ড. কামাল হোসেন অনেকটা ভেঙে পড়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন দলের অনেকেই। কারণ বিদেশি শক্তির লবিংয়ে ড. রেজা কিবরিয়া ড. কামাল হোসেনকে অনেকটা সহায়তা করতেন।

রেজা কিবরিয়ার পদত্যাগের পর দুই গ্রুপের  মধ্যে সৃষ্ট বিভেদ মীমাংসার জন্য তেমন তৎপর হচ্ছেন না ড. কামাল হোসেন। তিনি বর্তমানে চুপচাপ রয়েছেন। আর  দুই গ্রুপের নেতারা তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সাংগঠনিক ও জাতীয় কর্মসুচি পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দুই গ্রুপই পৃথকভাবে জাতীয় সম্মেলন করে কমিটি গঠন করবে। তবে কবে নাগাদ সম্মেলন করবে সে ব্যাপারে উভয় গ্রুপের কেউ এখনও সিন্ধান্ত  নিতে পারেননি।

এ সব বিষয়ে দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহাসিন মন্টু সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা অপেক্ষায় আছি স্যার কী সিদ্ধান্ত দেন তা জানার জন্য। স্যারের সিদ্ধান্তের পর আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে আমরা ড. কামাল হোসেন স্যারের বিবৃতি এবং সংবাদ সম্মেলনে যে বক্তব্য দিয়েছেন গণফোরামের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। তিনি বিবৃতি দিয়ে বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহর করেছেন। তার বক্তব্য এবং বিবৃতির প্রতি সম্মান রেখে দলয় কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছি। দলীয় কর্মসূচিসহ জাতীয় ইস্যুতে গণফোরাম মাঠে থাকবে।’

বিজ্ঞাপন

আ হ ম শফিউল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘গণফোরামের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া বিভেদ আর  মীমাংসা হচ্ছে না বলে আমার মনে হচ্ছে। তবে ড. কামাল হোসেন স্যারকে সামনে রেখে আমরা আমাদের ব্যানারে দলীয় এবং জাতীয় কর্মসূচিগুলো পালন করব।’

দলটির অপর এক নেতা বলেন, ‘ড. কামাল হোসেন স্যার দুই গ্রুপের নেতাদের ডেকে পাঠালে ড. রেজা কিবরিয়ার গ্রুপ উপস্থিত হলে মন্টু গ্রুপের নেতারা সেখানে যাচ্ছেন না। আবার মন্টু গ্রুপের নেতারা উপস্থিত হলে সেখানে ড. রেজা কিবরিয়ার গ্রুপ অংশগ্রহণ করেন না। ফলে দলটির অভ্যন্তরীণ নেতৃত্বের কোন্দল থেকেই যাচ্ছে। মীমাংসার কোনো  লক্ষণ দেখছি না।’

অন্যদিকে তিনি বয়সের কারণে স্মৃতিশক্তি এবং মনোবল অনেকটা হারিয়ে ফেলেছেন। যে কারণে শক্তভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।

উল্লেখ্য, গত বছরের মে মাসে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলের পর থেকেই মূলত গণফোরামের অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখা দিতে থাকে। গত ২ মার্চ দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশতাক আহমেদের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে দুই সাংগঠনিক সম্পাদকসহ চার কেন্দ্রীয় নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। এই চার নেতা হলেন সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন ও লতিফুল বারী হামিম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক খান সিদ্দিকুর রহমান এবং প্রবাসীকল্যাণ সম্পাদক আব্দুল হাছিব চৌধুরী। পরদিন ৩ মার্চ ওই বহিষ্কৃত চার নেতা বহিষ্কার করেন দলের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া, সহ-সভাপতি মহসীন রশীদ ও সহ-সভাপতি শফিকউল্লাহ এবং যুগ্ম সাধারণ মোস্তাককে।

বিজ্ঞাপন

পাল্টাপাল্টি এই বহিষ্কারের পর ৪ মার্চ এক বিজ্ঞপ্তিতে গণফোরামের চেয়ারম্যান ড. কামাল হোসেন কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। নিজেকে আহ্বায়ক ও আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়াকে সম্পাদক রেখে ওই বিজ্ঞপ্তিতে দুই সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন তিনি। পরে ১২ মার্চ পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটিও ঘোষণা করেন তিনি।

বিরাজমান এই বিরোধ মীমাংসার জন্য ড. কামাল হোসেন নিজে একাধিকবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। পরবর্তী সময়ে ড. কামালসহ বিবদমান দুই অংশের পাঁচজন করে মোট ১১ জন নেতার সমন্বয়ে দলের একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হলে কমিটির  তালিকায় আগে পরে নাম নিয়ে এবং নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের বিষয় নিয়ে নতুন করে আবার বিরোধ দেখা দেয়। ফলে দুই অংশের বিরোধ মীমাংসার ঘোষণা আটকে আছে।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন