বিজ্ঞাপন

ঢাকা-সিলেট ৪ লেন সড়ক: পরামর্শকেই যাচ্ছে ৩৫৪ কোটি টাকা

February 15, 2021 | 8:16 pm

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণে চার লেন হচ্ছে ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক। এটি বাস্তবায়নে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শকের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে ৭ ধরণের পরামর্শক সেবা গ্রহণ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১৬ হাজার ৯১৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে তিন হাজার ৬৭৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা এবং এডিবির ঋণ থেকে ১৩ হাজার ২৪৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা কমিশন থেকে জানানো হয়েছে, ‘সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন’ শীর্ষক এ প্রকল্পটি মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হচ্ছে। এতে গণভবন থেকে ভাচুর্য়াল পদ্ধতিতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। মূল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে শুরু হয়েছে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে- মাটির কাজ, ফ্রেক্সিবল পেভমেন্ট নির্মাণ, সার্ভিস লেনে কংক্রিট পেভমেন্ট, ৩০৫টি কালভার্ট নির্মাণ, ৬৬টি সেতু তৈরি, সাতটি ফ্লাইওভার, ছয়টি ওভারব্রিজ ও ২৬টি ফুটওভার ব্রিজসহ অন্যান্য কার্যক্রম বাস্তবায়ন।

একনেকের জন্য তৈরি প্রকল্প সার সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে, সাত ধরনের পরামর্শকের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে নির্মাণ তদারকির জন্য পরামর্শক খাতে ২৭১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। পুর্নবাসন কাজে নিয়োজিত পরামর্শক সেবায় (আইএনজিও) ৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা। আয় ও জীবিকার জন্য পরামর্শ সেবায় (এনজিও) দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য পুনরুদ্ধার প্রোগ্রাম ১ কোটি ৯৮ লাখ ৬৯ হজার টাকা। অভ্যন্তরীণ নিরিক্ষা কার্যক্রমের জন্য সিএ ফার্ম ৮০ লাখ টাকা। রাস্তা সুরক্ষার জন্য মূল্য সংযোজন পরামর্শক সেবায় ১২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা এবং সেফগার্ড অ্যাকটিভিটিসের জন্য পরামর্শক সেবায় ব্যয় ধরা ৩৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

বিজ্ঞাপন

পরামর্শক সেবা খাতে ব্যয়ের ক্ষেত্রে এর আগে অনুষ্ঠিত পিইসি সভার সুপারিশের ব্যবস্থা নেওয়া প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, প্রকল্পের নির্মাণ তদারকির জন্য মূল পরামর্শক সেবার ব্যয় ২৭৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ২৭১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা করা হয়েছে। তবে এডিবির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে আরও দুটি পরামর্শক সেবা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি নিয়ে গত ২৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। পিইসি সভার কার্যপত্রে বলা হয়েছিল, প্রকল্পের আওতায় নির্মাণকাজ তদারকির জন্য ৩ হাজার ৮৪২ জনমাস পরামর্শক সেবা ক্রয় খাতে ২৭৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন ইউনিটের জন্য নিরাপত্তা ও অন্যান্য কাজের জন্য ৫১৭ জনমাস পরামর্শক সেবার জন্য ৩৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। আইএনজিও সেবা ক্রয়ে ১ হাজার ৯২ জনমাস পরামর্শকের জন্য ৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা এবং এনজিও সেবা ক্রয়ের জন্য ১ কোটি ৯৮ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়। এর আগে পরিকল্পনা কমিশন বলেছিল, পরামর্শক সেবা ব্যয় বেশি দেখানো হয়েছে। এই ধরনের পরামর্শক ব্যয়ের প্রয়োজনীয়তা, ব্যয় প্রাক্কলন ও কার্যপরিধির বিষয়ে পিইসি সভায় জানতে চাওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন আল রশিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘অনেক যাচাই-বাছাই করেই পরামর্শক খাতের ব্যয় ধরা হয়েছে। কেননা কম টাকা রাখলে মানসম্মত পরামর্শক পাওয়া যাবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবে সার্বিকভাবে পরামর্শক ব্যয় বেশি মনে হলেও মূল পরামর্শক ব্যয় কমানো হয়েছে। কিন্তু এডিবির ঋণ নিতে গেলে আয় ও জীবিকার জন্য কিছু পরামর্শক সেবা নিতেই হবে। পরামর্শক বিষয়ে এক ধরনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই এই খাতের ব্যয় নিয়ে বেশি চাপ দেওয়া হয়নি।’

বিজ্ঞাপন

একনেকের জন্য তৈরি প্রকল্প সার-সংক্ষেপে বলা হয়েছে, টেকসই সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্য সরকার দেশব্যাপী জাতীয় মহাসড়কের উভয় পার্শ্বে পৃথক সার্ভিস লেনসহ বিদ্যমান সড়কগুলোকে ৪ লেনে উন্নীত করার মহাপরিকল্পনা নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে এডিবির আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় দেশব্যাপী এক হাজার ৭৫২ কিলোমিটার মহাসড়কের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। এর আওতায় ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়কটিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়া ঢাকা (কাঁচপুর)-সিলেট মহাসড়কটি এশিয়ান হাইওয়ে, বিমসটেক করিডোর এবং সার্ক হাইওয়ে করিডোরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ বিশেষ করে ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান ও চীনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশ কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।

সার সংক্ষেপে আরও বলা হয়, সড়কটি উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীসহ অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগের প্রধান করিডোর। তাই এটিকে ৪ লেনে উন্নীত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রকল্পের আওতায় ২০৯ কিলোমিটার ৪ লেনে উন্নীত করা হবে। এছাড়া মূল সড়কের উভয় পার্শ্বে ধীর গতির যান চলাচলের জন্য পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণ করা হবে। ফলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বাঁক সরলীকরণসহ অধিকমাত্রায় ট্রাফিক বিবেচনায় ৮০ কিলোমিটার গতিবেগে যান চলাচল নিশ্চিত করা হবে।

ছবি: প্রতীকী

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন