বিজ্ঞাপন

‘খেলা হবে’ — নারায়ণগঞ্জ থেকে পশ্চিমবঙ্গে

February 21, 2021 | 9:52 am

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের একটি রাজনৈতিক সংলাপ পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনি ক্যাম্পেইনে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ‘খেলা হবে’ এই শব্দবন্ধটি পশ্চিমবঙ্গে সব দলই ব্যবহার করছে। খবর ডয়চে ভেলে।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবারই পশ্চিমবঙ্গে ভোটের মৌসুমে নিত্যনতুন রাজনৈতিক স্লোগানের আমদানি হয়। ‘হয় এবার নয় নেভার’ বা ‘এই তৃণমূল আর না’-র মতো স্লোগান মানুষের মুখে মুখে ঘুরেছে। তারও আগে ‘দিল্লি থেকে এলো গাই, সঙ্গে বাছুর সিপিআই’ বা সাম্প্রতিক কালের ‘চুপচাপ ফুলে ছাপ’ কিংবদন্তী হয়ে আছে। কিন্তু ২০২১ সালের নির্বাচনের আগে যে নতুন স্লোগান মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে সেটি একেবারেই আলাদা।

আট বছর আগে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমান এক রাজনৈতিক সভায় বলেছিলেন, ‘কারে খেলা শেখান? আমরা তো ছোটবেলার খেলোয়াড়। খেলা হবে!’ শেষের এই শব্দ দুটি স্লোগান হিসেবে এখন পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল ও বিজেপি তো বটেই, বামদলগুলোর মুখেও শোনা যাচ্ছে।

এ নিয়ে গণমাধ্যমে শামীম ওসমান নিজেও সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপে তিনি তার সেই বক্তৃতার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, তখন ২০১৩-১৪ সাল, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এবং বিএনপি’র নেতৃত্বে ব্যাপক জ্বালাও পোড়াও চলছিল। ওই স্লোগান ছিল তাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম হিসেবে, শান্তির পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে ও সকল প্রকার সাম্প্রদায়িকতার বিপক্ষে।

বিজ্ঞাপন

তবে, পশ্চিমবঙ্গে এই স্লোগান প্রথম কে দিয়েছেন, তা নিয়ে অবশ্য বিতর্ক আছে। তবে যার উদ্যোগে এই স্লোগান জনপ্রিয়তা পেয়েছে, তিনি তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। তিনি শামীম ওসমানের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, গোটা পশ্চিমবঙ্গে খেলা হবে। ভয়ঙ্কর খেলা হবে।

বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী থেকে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, তৃণমূল মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য থেকে শাসক দলের বিধায়ক ধীমান রায়দেরও এই স্লোগানে মেতে উঠতে দেখা গেছে।

১১ ফেব্রুয়ারি বামপন্থিদের নবান্ন অভিযানের সময়ও এই স্লোগান শোনা গেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ঘুরিয়ে বলেছেন, হোক না একটা খেলা। আর এখন পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের মুখে মুখেও শোনা যাচ্ছে শামীম ওসমানের স্লোগান — খেলা হবে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, বাংলাদেশের স্লোগান ভারতে আসার মধ্যে কোনো অসুবিধা দেখছেন না ভাষাবিদ পবিত্র সরকার। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, দুই বাংলার ভাষা যখন একই এবং বিষয়টা যখন রাজনীতি তখন স্লোগান ধার নেওয়ায় কোনো সমস্যা নেই।

‘খেলা হবে’ স্লোগান ব্যবহার করে তৃণমূল কংগ্রেস গান বেঁধে ফেলেছে। তাতে মমতা ব্যানার্জি এবং রাজ্য সরকারের গুণগান। ডিজে’র সঙ্গে সেই গান বাজছে নির্বাচনি প্রচারণায়। গান থেকে স্লোগান হয়, কিন্তু এক্ষেত্রে স্লোগান থেকে গান বানিয়ে নতুন নজির হাজির করা হলো।

এ ব্যাপারে গীতিকার-সুরকার পল্লব কীর্তনিয়া বলেন, আদর্শহীনতায় ভুগছে সমাজ। রাজনীতি কি এতটা খেলো ব্যাপার যে ‘খেলা হবে’ স্লোগান দিতে হবে? জনতার দাবি নিয়ে আন্দোলন নেই, তাই এ ধরনের কথাবার্তা উঠে আসছে। সমাজের ছবি যেখানে এমন করুণ, সেখানে গান বা স্লোগান কোথা থেকে উঠে আসবে? প্রশ্ন রেখেছেন তিনি।

শুধু কি রাজনৈতিক মিছিল বা স্লোগান, সরস্বতী পুজোর মণ্ডপ থেকে বিয়েবাড়ি কিংবা খেলার আসরে ব্যবহৃত হচ্ছে ‘খেলা হবে’। এ ধরনের স্লোগান জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে সামাজিক তাৎপর্য দেখছেন নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মনন কুমার মণ্ডল। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, শহর থেকে স্লোগান উঠবে আর গ্রাম তার প্রতিধ্বনি করবে, সেই সময় চলে গেছে। এখন জেলার নেতা অনুব্রত মণ্ডল যা বলছেন, তা নিয়ে শহরে বসে আমাদের আলোচনা করতে হচ্ছে। এখানে রুচি-সংস্কৃতির থেকে বড় কথা, নিম্নবিত্ত মানুষের কাছে কোন স্লোগান আবেদন রাখছে। রাজনৈতিক দলগুলো সেই দিকে ঝুঁকছে।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপার অবশ্য ভিন্নমত পবিত্র সরকারের। তার মতে, আগে সোজাসাপটা স্লোগান দেওয়া হত। এখন ব্যঞ্জনাধর্মী। চড়ামচড়াম ঢাক বাজা, গুড়বাতাসার মধ্যে হিংসা প্রচ্ছন্ন আছে। খেলা হবে সে রকমই। আক্ষরিক অর্থ ধরলে হবে না। খেলা হবে’র অর্থ, এমন কৌশল করা হবে যে নির্বাচনে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দেওয়া যায়। এটা গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ নয়।

তবে নির্বাচনের মাঠে প্রতিপক্ষকে হুমকি বা যুদ্ধের আভাস হিসেবে এই স্লোগানের যে অর্থ দাঁড়াচ্ছে সে বিষয়ে ভিন্নমত শামীম ওসমানের। তার মতে, দুই বাংলার শব্দের ব্যবহারে কিছু পার্থক্যের কারণেই এমনটা মনে হচ্ছে। তিনি চান যেনো সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ও শান্তির পক্ষেই এই স্লোগান দেওয়া হয়। তিনি পশ্চিমবঙ্গের গণমাধ্যমকে বলেছেন, তারা যদি এই জায়গাটায় ঠিক থাকেন তাহলেই স্লোগানটা সার্থকতা পাবে — বলেন শামীম ওসমান।

প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগেই প্রচারের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। একাধিক রাজনৈতিক কর্মী খুন হয়েছেন। খোদ মন্ত্রী জাকির হোসেন বোমায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সারাবাংলা/একেএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন