বিজ্ঞাপন

‘যত্রতত্র ময়লা ফেললে হাজার কোটি টাকা খরচ করেও সুফল আসবে না’

February 25, 2021 | 9:04 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: খাল-নালায় ময়লা-আবর্জনা ফেলা অব্যাহত রাখলে জলাবদ্ধতা নিরসনে নেওয়া মহাপ্রকল্পের কাজে কোনো সুফল আসবে না বলে মনে করছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। খাল-নালায় ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরজুড়ে চট্টগ্রাম নগরীতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন উপমন্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন’ প্রকল্পের আওতায় নগরীর প্রবর্তক মোড়ে নির্মিত ব্রিজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপমন্ত্রী নওফেল এসব কথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে নওফেল বলেন, ‘চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিয়ে সমস্যা-জনদুর্ভোগ আছে। এটা থেকে পরিত্রাণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর খুব সুন্দরভাবে কাজ করছে। আশা করছি, এবারের বর্ষা মৌসুমে আগে যেভাবে পানি জমে থাকত, তার চেয়ে কিছুটা পরিত্রাণ আমরা পাব। আর এবারই আমরা দেখলাম জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামের সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে চমৎকার একটা সমন্বয় তৈরি হয়েছে। সিটি করপোরেশন, ওয়াসাসহ সকল সংস্থা তাদের কাজে সহযোগিতা দিচ্ছে।’

‘আমরা যার চট্টগ্রামের মানুষ, আমরা যদি একটু ধৈর্য্যের পরিচয় দিই, একটু সহ্যক্ষমতা আমরা দেখাতে পারি এবং তাদের যদি সুন্দরভাবে সহযোগিতা করতে পারি, তাহলে এই প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শুধু শেষ হবে না, আগেও শেষ হতে পারে।’

বিজ্ঞাপন

তবে টেকসই সমাধান নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী খুব সুন্দরভাবে কাজটি করছে। সিডিএ এই কাজে হাজার, হাজার কোটি টাকা খরচ করছে। সেনাবাহিনী-সিডিএ আজ কাজ করছে, কাল কিন্তু তারা থাকবে না। আমরা যারা এই শহরের মানুষ, আমরা যদি অভ্যাস না পাল্টাই, আমরা যদি এরপরও ময়লা-আবর্জনা খাল-নালায় যেখানে-সেখানে ফেলি, জানালা দিয়ে গৃহস্থালি বর্জ্য নালায় ফেলি, তাহলে এই হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ টেকসই হবে না, সমস্যার সমাধানও হবে না। যত হাজার কোটি টাকাই খরচ করা হোক, বর্জ্য আবার গিয়ে পড়বে কর্ণফুলীতে এবং নদী ভরাট হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে।’

সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, ‘মানুষের মধ্যে একটা চেতনা যদি আমরা তৈরি করতে পারি বা নিজেও যদি এই অনুশীলন করতে পারি যে, আমি রাস্তাঘাটে-নালানর্দমায়, খালে ময়লা-আবর্জনা ফেলব না, তাহলে একটা সুফল আসতে পারে। একটা সামাজিক আন্দোলন আমাদের গড়ে তুলতেই হবে।’

আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে নওফেল বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতাকর্মীর দায়িত্ব অনেক বেশি। কারণ আপনারা মানুষেকে প্রভাবিত করতে পারেন। এই মুজিববর্ষে, স্বাধীনতার সুবণজয়ন্তীতে যদি আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গীর হয় যে, আমি নিজেও ময়লা-আবর্জনা রাস্তাঘাটে-নালানর্দমায় ফেলব না, অন্যদেরও ফেলতে নিরুৎসাহিত করব, আচার-আচরণে যদি পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে পারি- তাহলে আগামী ৫০ বছর পর গিয়ে ময়লা-আবর্জনার ব্যবস্থাপনা নিয়ে বাংলাদেশকে আর চিন্তা করতে হবে না। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে কাজ করার কিন্তু এটাও একটা সুযোগ। প্রত্যেক ওয়ার্ডের নেতৃবৃন্দ যদি স্বেচ্ছাসেবীর ভূমিকা নিয়ে একটা অনুশীলন তৈরি করতে পারেন, তাহলে জননেত্রী শেখ হাসিনার কর্মী হিসেবে আপনারাই মানুষের কাছে আস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়াবেন। আসুন, আমরা সৃষ্টিশীল কিছু করি। সবাই যেন যার যার জায়গা থেকে দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করি।’

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সেনাবাহিনী নিযুক্ত প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী বলেন, ‘প্রকল্পের অংশ হিসেবে জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য প্রয়োজনীয় ড্রেন নির্মাণ এবং সংস্কার কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের ‍গুরুত্বপূর্ণ অংশে রেগুলেটর নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের পথে। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই রেগুলেটর নির্মাণের কাজ শেষ করার দিকে আমরা এগোচ্ছি। প্রকল্পের অধীনে থাকা ৫৪টি ব্রিজ-কালভার্টের কাজ প্রায় শেষপর্যায়ে।’

প্রবর্তক মোড়ের ব্রিজের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রবর্তক মোড় পারিপার্শ্বিক স্থান থেকে অনেক নিচু, যেখানে সামান্য বৃষ্টিপাতেই পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় এবং জনগণকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বর্তমান ব্রিজটি আগের ব্রিজের চেয়ে সোয়া ৮ ফুট উঁচু করা হয়েছে। এখানে পানিপ্রবাহের জন্য ব্রিজের নিজের প্রশস্ততা ৪ মিটার থেকে বৃদ্ধি করে ৮ মিটার করা হয়েছে। ব্রিজের উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে পারিপার্শ্বিক স্থানসহ সংযোগ সড়ক প্রয়োজনের অনুপাতে উঁচু করা হয়েছে। এছাড়া চারপাশের এলাকা থেকে পানি যাতে খালে নির্বিঘ্নে আসতে পারে, সেজন্য ব্রিজের চারপাশে আরসিসি স্ল্যাব নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, প্রবর্তক মোড় জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হবে।’

অনুষ্ঠানে সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, বোর্ড সদস্য কে বি এম শাহজাহান ও এম আর আজিমসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। মাঠপর্যায়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ২০২০ সালের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও পরে আরও দু’বছর বাড়ানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/একেএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন