বিজ্ঞাপন

বাংলা ভাষা হয়ে পড়েছে আধমরা

February 26, 2021 | 3:31 pm

আজাহার ইসলাম

‘মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা! তোমার কোলে, তোমার বোলে, কতই শান্তি ভালোবাসা!’

বিজ্ঞাপন

অতুল প্রসাদ সেনের কবিতার এই চরণটি যেন হৃদয় ছুঁয়ে যায়। বাঙালি হিসেবে গর্বে বুক ভরে উঠে। সালাম, রফিক, বরকত, শফিউরসহ নাম জানা-অজানা অনেক শহিদের তাজা রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি মায়ের মুখের বুলি। বাংলা ভাষার ইতিহাস বই পড়ে জেনেছি অনেক দেরিতে। তবে জন্মের পর থেকেই এ ভাষার প্রতি জন্মেছে অদৃশ্য এক টান, অকৃত্রিম এক ভালোবাসা।

ভাষা একটি জাতির কেবল পরিচয় নয়, অস্তিত্বও বহন করে। তেমনি বাংলা ভাষাও বাঙালি জাতির পরিচয় ও অস্তিত্ব বহন করে চলছে। মায়ের ভাষায় কথা বলে তৃপ্তি পাওয়া যায়, মন খুলে ভাব প্রকাশ করা যায়। অন্য ভাষায় কথা বলতে গেলে সেই স্বাদ পানসে লাগে। তবে আমাদের ভাষার অপব্যবহারের ফলে মাতৃভাষা আজ দূষিত ও কলুষিত হয়ে পড়েছে। ভাষা ক্রমশ স্বকীয়তা হারাচ্ছে।

ভাষা দূষিত হওয়ার প্রধান কারণ বিদেশি ভাষার প্রতি ঝোঁক। এই টান একদিনে তৈরি হয়নি। ধীরে ধীরে বাংলা ভাষায় বিভিন্ন ভাষা বিশেষ করে ইংরেজির সংমিশ্রণে আমাদের মাতৃভাষা আহত। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগেই চাকরির প্রতি অদৃশ্য এক ঝোঁক তৈরি হয়। চাকরির পরীক্ষা দিতে গিয়েও ইংরেজি জানা আবশ্যক। ইংরেজি ভাষায় পারদর্শিতা না থাকলে অনেক চাকরির পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পর্যন্ত থাকে না। ফলে অভিভাবকরাও ছেলে-মেয়েদের ছোটবেলা থেকেই বাংলার চেয়ে ইংরেজি শিক্ষার প্রতি বেশি ঝুঁকিয়ে দিচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

শুধু তাই নয়। আমাদের শিক্ষিত সমাজ, গুণীজন, অফিস-আদালত, বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও বাংলা ব্যবহারে গুরুচণ্ডালী দোষে দোষী। বাংলার সঙ্গে ইংরেজি, হিন্দিসহ নানান ভাষা মেশানো তাদের কাছে যেন আধুনিকতার বহিঃপ্রকাশ। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তথাকথিত ‘আধুনিক’ হওয়ার চেষ্টা। ফলে তাদের কাছে সাবলীলভাবে বাংলা বলা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। আধো আধো বাংলা ব্যবহার করে ভাষার ‘ঘণ্টা’ বাজিয়ে ছাড়ছে। যা ভাষার ব্যবহারে মহামারি রূপ ধারণ করেছে। ভাষা হয়ে পড়েছে আধমরা।

বিভিন্ন বিদেশি ভাষা আমাদের মাঝে এতটাই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছে যে, সেসব শব্দের বাংলা অর্থ পর্যন্ত আমরা জানি না। বাংলা লিখতে গেলেও ইংরেজি রূপ লেখা ছাড়া উপায় নেই। আর বাংলা ভাষার লেখ্য রূপ ব্যবহারও নানা ভুলে জর্জরিত। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড, পোস্টার, দোকান-পাটের নাম এমনকি সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিসেও অনাকাঙ্ক্ষিত বানান ভুল চোখে পড়ে।

তথাকথিত আধুনিকতার প্রতি আসক্ত না হয়ে মাতৃভাষা রক্ষায় সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের সময় এখনই। বাংলার সঙ্গে বিদেশি ভাষার সংমিশ্রণ নির্মূল সম্ভব নয়। তবে চাইলেই ভাষার যথার্থ মর্যাদা রক্ষা করা সম্ভব। বীরেরা নিজের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিয়ে আমাদের উপহার দিয়েছে ‘বাংলা ভাষা’। তাদের মতো রক্ত দিয়ে না পারলেও সচেতনতার মাধ্যমে আমরা ভাষার মান রক্ষা করতে পারি। মাতৃভাষা প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ থাকলেও ভাষা রক্ষার দায়িত্ব আমাদেরই। ছোট ছেলে-মেয়েদের ইংরেজির প্রতি তীব্র ঝোঁক কমিয়ে বাংলা ভাষা শেখার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এজন্য অভিভাবকদের আগে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। এছাড়া ভাষার অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করাও অত্যাবশ্যক। এক্ষেত্রে বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহারে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রয়োগ জরুরি। তবেই বাংলা ভাষার স্বকীয়তা রক্ষা পাবে, নচেৎ মাতৃভাষার প্রকৃত রস বিলীন হয়ে যাবে।

বিজ্ঞাপন

লেখক: শিক্ষার্থী, ল’ এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই/আইই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন